v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-09-07 15:52:55    
ইউননান প্রদেশে একটি হুই জাতির গ্রাম

cri
  

  দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের থুং হাই জেলার না কুও থানায় নাচিয়াইং নামে একটি হুই জাতির গ্রাম আছে । নাচিয়াইং গ্রামের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। এখানে ৪ শোরও বেশি ইমামসহ বহু সুধী ব্যক্তির উদ্ভব হয়েছেন । এদের মধ্যে আছেন চীনের বিখ্যাত আরব ইতিহাস বিষয়ক পন্ডিত, ইউনেস্কোর আরব সংস্কৃতি বিষয়ক শারজাহ্ পুরস্কার জয়ী পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নাচুং এবং নামকরা অনুবাদক নাস্যুন প্রমুখ । এই গ্রাম এখনও ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্যে ভরপুর ।

    প্রতি দিন এই গ্রামের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ার জন্য আজান প্রচার করা হয় । নাচিয়াইং গ্রামে মোট ৭ শোরও বেশি হুই জাতির পরিবারের সদস্যরা বসবাস করেন । নাচিয়ারেই নামে একজন বৃদ্ধের বয়স ৭০ বছরেরও বেশি । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , এই গ্রামে বসবাসকারীরা সুখী জীবন কাটাচ্ছেন এবং গৌরব বোধ করেন । কারণ ,যারা এই গ্রামে থাকেন , তারা সবাই ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদের বংশধর ।

    ১২৯০ সালে নাকুও থানা প্রতিষ্ঠিত হয় । তার বয়স ৭ শো বছরেরও বেশি । শাসন করার জন্য নাসুরু নামে একজন কর্মকর্তাকে এই থানায় পাঠানো হয় ।

    বৃদ্ধ নাচারেই বলেন , নাসুরু নামে এই কর্মকর্তা ছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মোহাম্মদের অনুসারী । তার ৪টি ছেলে ছিল । তিন ছেলে তার সঙ্গে ইউননানের পাহাড়ী অঞ্চলের একটি স্থানে বসবাস করতে স্থানান্তরিত হয়েছে । ফলে এই জায়গা ধীরে ধীরে একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে গ্রামটিকে নাচিয়াইং গ্রাম বলা হয় । এই গ্রামের মুসলমানদের মধ্যে খাওয়া দাওয়া , বিয়ে ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এখনও স্বকীয় রীতি-নীতি ও বৈশিষ্ট্য বজায় রয়েছে । এ প্রসঙ্গে নাচিয়াইং গামের মসজিদের ইসলাম ইনস্টিটিউটের প্রধান মা চিয়ান খাং বলেন ,

    নাচিয়াইং গ্রামে অতিথিদের দাওয়াত করার ব্যাপারে সাদাসিধা আয়োজন করা হয় । কোন অপচয় করা হয় না । সাধারণতঃ ৮ ধরনের ব্যঞ্জন বন্দোবস্ত করা হয়।  

    নাচিয়াইং গ্রামে গ্রামবাসীদের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে মুসলমানদের প্রগাঢ় ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এই গ্রামে তরুণ-তরুণীদের বিয়ের আগে বাগদান অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রয়োজন । নইলে তাদের প্রেমকে অন্যায় বলে মনে করা হয় । বাগদান ঐতিহ্যবাহী আচার ব্যবহার অনুযায়ী আয়োজন করা হয় । তার পর তরুণ-তরুণীরা নিশ্চিন্তভাবে প্রেম করতে সক্ষম হবে । বিয়ের জন্য বাগদানের বেশি সময় লাগবে । সাধারণতঃ দু' থেকে ৫ বছর , এমন কি ৮ বছর পর্যন্ত লাগবে ।

    বিয়ের অনুষ্ঠানকে আনন্দ ও অন্তরঙ্গ পরিবেশ আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্য অতিথিরা বরবধূর ওপর মিষ্টি আলো , ডিম ও সয়াবীনের মন্ডা নিক্ষেপ করেন । এতে ভবিষ্যতে বরবধূর সুখী দাম্পত্য জীবন নিশ্চিত হয় । বিয়ের অনুষ্ঠানে বরবধূর ব্যবহার্য পোষাক প্রসঙ্গে নাচিয়াইং মসজিদের ইসলাম ইনস্টিটিউটের প্রধান মাপ চিয়ান খাং বলেন ,

    বিয়ের অনুষ্ঠানে বধূর অধিক ফ্যাশনের পোষাক পরা উচিত নয় । ঐতিহ্যবাহী ও ভদ্রতাপূর্ণ পোষাক পরতে হয় । যদি বধূ পাগড়ী না পরে , তাহলে মসজিদের ইমাম বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হবেন না ।

    সংবাদদাতারা নাচিয়াইং গ্রামের মুসলমানদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে যাতে আরো বেশি জানতে পারেন , সেজন্য মা চিয়ান খাং সংবাদদাতাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য বধূদের পরা পোষাকের ভাড়া দোকানে নিয়ে যান । এই দোকানে নানা রকম বৈচিত্র্যময় ও রঙবেরঙের বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য বধূদের পোষাক দেখা যায়। এতে পরিপূর্ণভাবে সংখ্যালঘু জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে ।

    এই দোকানে পাগড়ীসহ মালয়েশিয়া , সিংগাপুর ও সৌদি আরব থেকে আমদানীকৃত নানা রকম পোষাক পাওয়া যায় । এই দোকান মুসলিম সংস্কৃতির রূপ লাভ করেছে । এটা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম বিশ্বাসের চাহিদার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ।

    নাচিয়াইং গ্রামে দু'টি মসজিদ আছে । নাচিয়াইং মসজিদ পুরুষদের এবং নারী মসজিদ নারীদের নামাজ পড়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয় । নামাজ পড়ার জন্য গ্রামের বয়স্ক , শিশু ও অল্পবয়সীরা মুসলমানদের লম্বা পোষাক ও টুপি পরে কিঠ সময় মসজিদে যান ।

    নাচিয়াইং মসজিদ তৈরী হয় ২০০৪ সালের ২রা অক্টোবর । তার মেঝের আয়তন ১০ হাজার বর্গ মিটার । মসজিদে ৭২ মিটার দীর্ঘ চারটি মিনার আছে । উপাসনার বড় ভবনে ৩ হাজার নামাজী নামাজ পড়া যায় । এটাও ইউন নান প্রদেশের বৃহত্তম মসজিদ । নাচিয়াইং মসজিদের ইসলাম ইনস্টিটিউটের প্রধান মা চিয়ান খাং বলেন , এই মসজিদ এই গ্রামের গ্রামবাসীদের সাহায্যের অর্থ ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে । মসজিদ নির্মাণ খাতে ২ কোটি ইউয়ানেরও বেশি খরচ করা হয়েছে ।

    প্রথমে এই মসজিদ নির্মাণের জন্য রক্ষণশীল পদ্ধতিতে ডিজাইন করা হয়েছিল । পরে মালয়েশিয়ার ডিজাইন অনুসারে পুরানো ডিজাইনের সংস্কার করা হয়েছে । নতুন ডিজাইন অনুযায়ী মসজিদ সমৃদ্ধ আরব বৈশিষ্ট্যে ভরপুর হয়ে উঠেছে ।

    নারী মসজিদ নাচিয়াইং গ্রামের পুরানো মসজিদ ছিল । নতুন মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজনে পুরানো মসজিদকে আড়াই শো মিটার পূর্বে সরিয়ে নেয়া হয়েছে । তা নারীদের নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে । এখন গ্রামের দুটো মসজিদে যার যার সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য দেখা দিচ্ছে ।

    সংবাদদাতারা নারী মসজিদের প্রাচীন ও ভদ্রতাপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের জন্য খুব মুগ্ধ হলেন । সিনচিয়াং থেকে আগত একজন উইগুর নারী মুসলমান মা স্যু ইউন সংবাদদাতাদের বলেন , তিনি ইউন নানের মসজিদ পরিদর্শনের জন্য এই গ্রামে এসেছেন । সিনচিয়াংয়ে মসজিদ উইগুর জাতির স্থাপত্যশৈলীতে তৈরী । হুই জাতির রীতি-নীতি পাওয়া যায় না । তিনি গ্রামের নারী মসজিদে আরবী ভাষা ও ধর্ম বিষয়ক কোর্স পড়াচ্ছেন ।

    নাচিয়াইং গ্রামের মুসলমানরা ইসলাম ধর্মের নিয়ম-বিধি , আচার ব্যবহার ও চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রভাবে সুষম ও সুখী জীবন কাটাচ্ছেন । তারা আরো সুন্দর জন্মভূমি গড়ে তোলার জন্য পরিশ্রমীভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন । (লিলি)