ই জাতির ফ্যাশন উত্সবের জন্ম একটি সুন্দর রূপ কথা থেকে । জানা গেছে , ১ হাজার ৩ শো বছর আগে চাওলিরো ও চাওলারো নামে ই জাতির দুই ভাই শিকার করার জন্য বাইরে যান । তারা পানি ও গাছপালায় সমৃদ্ধ জি চুই নামে একটি স্থানে এলেন । যখন তারা পানি পান করতে চাইলেন , তখন তাদের শরীর থেকে তিন ধানের বীজ মাটিতে পড়লো । এক বছর হয়ে গেল । যখন দুই ভাই আবার এই স্থানে প্রত্যাবর্তন করলেন , তখন প্রাচুর্যময় ফসল পাওয়া যাচ্ছিল । পরে দুই ভাই ও অন্যান্য গ্রামবাসীরা এই জায়গায় বসবাস করতে শুরু করলেন । তারা স্বচ্ছল জীবনযাপন করলেন ।
গ্রামের প্রবীণরা আশা করেন , এ দুই ভাই সুখী জীবন কাটাবেন । প্রবীণরা দুই ভাইয়ের জন্য যোগ্য ও পরিশ্রমী মেয়েদের বাছাই করলেন । ফলে সারা গ্রামের মেয়েরা কাজে ব্যস্ত হলেন । তারা বস্ত্র বোনা , পোষাক সেলাই ও সূচীকর্মসহ বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করলেন । পরের বছরের চন্দ্রবর্ষের প্রথম মাসের ১৫ তারিখ গ্রামবাসীরা বড় গাছের তলদেশে মিলিত হন । মেয়েরা সূচীকর্মে তৈরী কাপড় পরেন । তারা মুর্গীর মাথাওয়ালা টুপি পরেন এবং নাচ গান পরিবেশন করেন । চাওলিরো গ্রামের সবচেয়ে পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান মেয়ে এবং চাওলারো সবচেয়ে দয়ালু ও সুন্দর মেয়েকে পছন্দ করেছেন । সহস্রাধিক বছর চলে গেছে । প্রতি বছরের জাতীয় ফ্যাশন উত্সব ই জাতির সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ উত্সবে পরিণত হয়েছে । এই উত্সবে তরুণ-তরুণীদের প্রেম করার একটি সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ এনে দিয়েছে । তারা প্রতিযোগিতায় ব্যবহার্য ফ্যাশন্যবল কাপড় , নৃত্যনাট্য পরিবেশন ও বিবিধ কলাকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেদের প্রিয় মানুষকে বাছাই করে নিন । ফলে তরুণ-তরুণীদের প্রেম শুরু হয় ।
ফ্যাশন উত্সব থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং তা চিরকাল সংরক্ষণ করার জন্য সিছুয়ান প্রদেশের একটি পর্যটন বিদ্যালয়ের শিক্ষক থান সিং ফেই ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলেছেন । তিনি বলেন , ই জাতির ফ্যাশন উত্সব সম্পর্কে বেশি জানার কৌতূহল মেটানোর জন্য তিনি এই অঞ্চলে এসছিলেন ।
তিনি একটি পর্যটন বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক । ই জাতির ফ্যাশন উত্সব বিষয়ক বেশি তথ্য ও আলোকচিত্রসংগ্রহের জন্য তিনি কয়েকজন সহকর্মীকে এই অঞ্চলে নিয়ে যান । এতে তারা সবাই ই জাতির ফ্যাশন উত্সবের পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুভব করেছেন । এই ধরনের আদিম ও রসপূর্ণ পরিবেশ দুর্লভ ।
প্রাচীনকালে ছু স্যুন অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল । বর্তমানে ই জাতির ফ্যাশন্যবল পোষাক উত্সবের পরিচিতি ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ই জাতির আচার ব্যবহার ও পোষাক তৈরীর কলাকোশল নিয়ে অধ্যয়ন এবং সূচীকর্মসহ নানা রকম হস্তশিল্প দ্রব্য কেনার জন্য অধিক থেকে অধিকতর পর্যটকরা এই অঞ্চলে আসেন । চি চু ই জাতির ফ্যাশন্যবল কাপড় খচিত ই জাতির সূচীকর্ম দ্রব্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সূচীকর্ম প্রদর্শনীতে পুরস্কার পেয়েছে । ছু স্যুন শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ইয়াং ফু ওয়ান বলেছেন ,
আধুনিক সংস্কৃতির আঘাতে ই জাতির ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প দ্রব্য তৈরীর কলাকৌশল ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে । চি চু ই জাতির ফ্যাশন কাপড় উত্সব আয়োজনের মাধ্যমে ই জাতির ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প দ্রব্য তৈরীর কলাকৌশল সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষিত হয়েছে । জাতীয় ফ্যাশন ই জাতির শিল্পকলা বিষয়ক ধারণা , হস্তশিল্প দ্রব্য তৈরী বিষয়ক কৃতীত্ব ফুটে উঠেছে । এতে ই জাতির ফ্যাশন্যবল পোষাকের উদ্ভব , উন্নয়ন এবং ই জাতির সংস্কৃতির প্রগাঢ় তাত্পর্য তুলে ধরা হয়েছে ।
চি চু ই জাতির ফ্যাশন উত্সবকে মানবজাতির সবচেয়ে আগের ফ্যাশন কাপড় শো বলে আখ্যায়িত করা হয় । তাতে ছু স্যুন ই জাতির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক ধরনের অসাধারণ আকর্ষণ শক্তি প্রকাশ পেয়েছে । বর্তমানে চি চু ই জাতির ফ্যাশন উত্সব ছু স্যুন অঞ্চলের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক একটি ট্রেড মার্কে পরিণত হয়েছে । ইয়ুন রেন জেলার উপ-প্রধান ইয়্যু চিয়াং উ বলেন ,
ই জাতির ফ্যাশন উত্সবকে চীনের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অবস্তুগত উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে । এই উত্সবের মাধ্যমে এই অঞ্চলের সূচীকর্মসহ হস্তশিল্প দ্রব্য তৈরীর কাজ ও কলাকৌশল আরো বেশি বিকাশ লাভ করবে ।
ই জাতির ফ্যাশন উত্সব পালনের পাশাপাশি ই জাতির অধিবাসীরা যেমন হাজার বছরের আচার ব্যবহার সংরক্ষণ করেছেন , তেমনি তারা নতুন সূখী জীবনযাপন করছেন । 1 2
|