প্রঃ আপনি আসলে কবে থেকে পর্যটন শুরু করেন?
উঃ আমি ১৯৯০ সাল থেকে ঘোরাঘুরি শুরু করি। প্রথমত বাংলাদেশের বিভিন্ন যায়গায় ঘুরি। তখন আমাদের একটি সংগঠন ছিল বাংলাদেশ যুব পর্যটক ক্লাব। সেই সংগঠনের মাধ্যমে সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশে যাই। তারপর থেকেই ভ্রমণ শুরু করি বিভিন্ন দেশে।
প্রঃ আপনি কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন এই ভ্রমণে?
উঃ বই পড়া আমার নেশা ছিল। আমি পৃথিবীর বিখ্যাত ট্রাভেল রাইটারদের লেখা পড়ে উদ্ধুদ্ধ হই। ১৯৯৭ সালে সাইকেলে ১০ মাসে বিশ্বের ১৯টি দেশ ভ্রমণ করি। আর এ পর্যন্ত ছয়টি মহাদেশের ৫৪টি দেশ ভ্রমণ করেছি।
প্রঃ সাইকেলে আপনি কোন দেশ থেকে ভ্রমণ শুরু করেছিলেন?
উঃ আমি ১৯৯৭ সালের জানুয়ারী মাসে ইরান থেকে শুরু করেছিলাম। তারপর কুয়েত, তুরস্ক, পুরো ইউরোপ, কানাডা দিয়ে ঢাকায় ফিরি।
প্রঃ এই সাইকেল ভ্রমণে আপনার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমাদের শ্রোতাদের জন্য কী একটু বলবেন?
উঃ ভাল খারাপ দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে। ২০ দিন ইরানে ছিলাম। ইরানীদের কাছ থেকে চমত্কার আতিথেয়তা পেয়েছি। ইতিহাস বলে, যে দেশের সভ্যতা যতো পুরনো, সে দেশের মানুষের আচরণে তার ছাপ পড়ে। আসলেই পুরোপুরি সত্য।
প্রঃ আপনি ভ্রমণ যখন শুরু করেন তখন কাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন? না নিজের উদ্যোগেই শুরু করেছিলেন?
উঃ আমি যখন শুরু করি, তখন মাত্র ৯৫০ ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করি। কিন্তু যাওয়ার আগেই কিছু প্রতিষ্ঠান নৈতিক সাপোর্ট দিয়েছিল। যেমন আঁলিয়াস ফ্রসেস, জার্মান কালচারাল সেন্টার, ইরান কালচারাল সেন্টার। তারা চিঠি দিয়েছিল যে, আমি যেসব দেশে যাব, সেসব দেশে যেন আমাকে নৈতিক সাপোর্ট দেয়া হয়। প্রয়োজনে আর্থিক সাপোর্ট দেয়ার কথাও বলা হয়েছিল।
আমি বেশির ভাগ দেশেই এসব সহযোগিতা পেয়েছি। তার চেয়েও বেশি সাপোর্ট পেয়েছি প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইবোনদের কাছ থেকে। তারা আমার দুঃসাধ্য কাজ দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। সেটা যে আর্থিক সাহায্য তাই নয়, মানসিক সাহায্যও করেছেন। ভ্রমণের জন্য এই সাহায্য খুব জরুরী।
প্রঃ মানুষের জ্ঞানার্জনের পথ দুটি। একটি পড়াশোনা করে। অন্যটি ভ্রমণের মাধ্যমে। আপনি এই ভ্রমণের মাধ্যমে কি ধরনের জ্ঞান অর্জন করেছেন যা আপনার বাস্তব জীবনে কাজে লেগেছে বা লাগতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উঃ আসলে ভ্রমণ করলেই আপনার জ্ঞান চলে আসবে বিষয়টি সেরকম নয়। ভ্রমণের সময় আপনার চোখ কান খোলা রাখতে হবে। ইচ্ছাটা থাকতে হবে। পৃথিবী একটা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে আপনার জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
আমি যখন কানাডায় যাই, তখন একটি ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীতে যাই। সেখানে একজন শিল্পী পৃথিবীতে কত রং আছে , তার ছবি তুলেছেন। তিনি আসলে দেখাতে চেয়েছেন সবকিছুই আসলে প্রকৃতি থেকে। আমাদের তা আহরণ করতে হয়।
প্রঃ এবার চীন প্রসঙ্গে। চীনে আপনি এ পর্যন্ত ক'বার সফর করেছেন?
উঃ তিনবার আসা হল। পেইচিংয়ে দু'বার। এবার আসার কারণ হল, আমার একটি ট্যুর অপারেটর কোম্পানী রয়েছে। চায়নায় ট্যুর নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমি এসেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ট্যুর অপারেটর কোম্পানী এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। আশা করি, আগামী দিনগুলোতে চায়না ও বাংলাদেশের মধ্যে পর্যটন বিষয়ক যোগাযোগ আরও বাড়বে।
প্রঃ আপনি এ পর্যন্ত তিনবার চীন সফর করেছেন। আপনি জানেন নিশ্চয়ই চায়না একটি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সভ্যতার দেশ। চায়না এসে আপনার কেমন লেগেছে?
উঃ চায়না আসলে একটি বিশাল দেশ। সেই অর্থে কম সময় এসে চায়না দেখা বা চায়না সম্পর্কে বোঝা সম্ভব নয়। এজন্য প্রচুর ঘুরতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে। স্বল্প সময়ে আমার মনে হয়েছে, যেমন আমি ২০০৫ সালে শেষে আসি। এবার আসলাম ২০০৭-এ। এই স্বল্প সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছে। আমি এবার কুনমিং থেকে ভিয়েত্নাম হয়ে পেইচিং এসেছি। কুনমিং খুব সুন্দর যায়গা।
চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স সরাসরি ফ্লাইট চালু করায় প্রচুর বাংলাদেশী কুনমিংয়ে আসছেন। একই সঙ্গে প্রচুর চীনাও বাংলাদেশে যাচ্ছেন।
প্রঃ আপনি জানেন নিশ্চয়ই, কুনমিং ও চট্টগ্রাম হচ্ছে মৈত্রী শহর। মৈত্রী শহরের এই ধারণা ব্যবসা বাণিজ্য পর্যটন বাড়ানোর জন্য। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
উঃ পর্যটন হচ্ছে আসলে গেটওয়ে। আপনি একটি যায়গায় বারবার আসলে নানা কিছু জানতে পারবেন। পর্যটন থেকে শুধু দেখাই নয়, শেখারও অনেক কিছু আছে। যত বেশি দু'দেশের মধ্যে যাতায়াত থাকবে , ততবেশি পরস্পরকে জানা যাবে। এটা ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্যই ভাল।
প্রঃ দু'দেশের পর্যটন উন্নয়নে কি করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
উঃ পর্যটন উন্নয়নের জন্য প্রথমত দু'দেশের ভিসার ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। দু'দেশের পর্যটন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে মানুষকে জানাতে হবে কেন তারা পর্যটনে যাবেন। যেমন, চায়না একটি বিশাল দেশ। এ দেশের লোক কেন বাংলাদেশের মতো ছোট দেশে যাবেন। আবার বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের লোকেরা কেন চায়নায় আসবেন, এ বিষয় জানাতে হবে।
প্রঃ পেইচিং কেমন দেখলেন?
উঃ পেইচিং ব্যস্ততম শহর। প্রচুর লোকসংখ্যা। কিন্তু সবকিছুতে নিয়ম-শৃঙ্খলা রয়েছে। এটা খুব ভাল লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। একটা দেশকে চেনার উপায় হচ্ছে সে দেশের রাস্তা দিয়ে। অর্থাত্ যে দেশের রাস্তা চলাচলের জন্য ভাল সে দেশের উন্নয়ন দ্রুত হবেই। বোঝা যায়, সরকার জনগণের প্রতি দৃষ্টি রাখছে।
প্রঃ চীনে আতিথেয়তা কেমন লেগেছে?
উঃ আমি একটি ঘটনা বলি, ভিয়েতনাম থেকে পেইচিংয়ে আসার পথে একজন ছাত্রের সঙ্গে ট্রেনে পরিচয় হয়। সে তখন নিজ থেকেই আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসল। খাবার দিল। তার নিজ শহরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো। বিষয়টি আমার চমত্কার লেগেছে।
|