বাংলাদেশের কুমিলা জেলার শ্রোতা এমদাদুল হাক হাসান তার চিঠিতে ছিন শিহুয়াং সমাধিস্থল আর সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তির যাদুঘর সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এখন এ সম্পর্কে কিছু বণর্না করবো।
চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সিআন শহরে অবস্থিত ছিন শিহুয়াং সমাধিস্থান হল পৃথিবীর সম্রাটদেরএমন একটি সমাধিস্থল যার আকার সবচেয়ে বড়, কাঠামো সবচেয়ে অদ্ভূত এবং সারমর্ম সবচেয়ে সমৃদ্ধ। ছিন শিহুয়াংএর সঙ্গে কবর-দেওয়া সৈনিক ও ঘোড়ার মুক্তিরগর্তগুলোমিসরের পিরামিডের মতো সুনাম আছে। একে বিশ্বের অষ্টম বিস্ময় বলে গণ্য করা হয়। দেশ ঐক্যসাধনের অল্প সময পর তিনি তাঁর সমাধিস্থল নিমার্ন শুরু করেন।৭ লক্ষ লোক তাঁর সমাধিস্থল নিমার্নের কাজে অংশ নেয়, তাঁর সমাধিস্থান সম্পন্ন করতে ৪০ বছর লেগেছিল। তাঁর মৃত্যু পযর্ন্ত এই সমাধিস্থলের প্রকল্প শেষ হয়নি। ছিন শিহুয়াং মসাধিস্থল চীনের সেনশি প্রদেশের উপকন্ঠের লিসেন পাহাড়ে অবস্থিত। সমাধিস্থলের আয়তন ৫৬ বর্গমিটার। সমাধিস্থলের নিম্ন অংশ গোল আকারের। দক্ষিণ-উত্তর ৩৫৯ মিটার লম্বা, পুর্ব-পশ্চিম ৩৪৫ মিটার প্রস্থ, উচ্চতা ৭৬ মিটার। গোটা সমাধিস্থল দেখতে পেরামিডের মতো।
১৯৭৪ সালে স্থানীয় কৃষক কুয়া খনন করার সময় বিপুল পরিমাণের চীনমাটি উদ্ধার করেন। কৃষকরা খুব একটা খেয়াল করেননি। তিনি এ সব চীনামাটি ফেলতে চেয়েছিলেন । একজন পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ব্যক্তি সরাজমিনে ছিলেন। তিনি এ সব চীনামাটি দেখার পর উপলদ্ধি করলেন এটা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধার। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জেলার পুরাকীর্তি ব্যুরোর্ কমর্কতার্দের রিপোট করলেন। এর পর বিশ্ব-কাঁপানো ছিন রাজবংশের সৈনিক ও ঘোড়ার মূতির্ খখন করা হয়। এর পর এখন পযর্ন্ত ছিন শিহুওয়াং সমাধিস্থল আর সৈন্য ও ঘোড়ার মুক্তি যাদুঘর একটি বিখ্যাত দশর্নীয়স্থানে পরিণত হয়েছে। বিদেশের বেশ কয়েক জন প্রেসিডেন্ট চীন সফরকালে এই সমাধিস্থলদেখতে যান।
রাংপুর জেলার শ্রোতা মোস্টাফিজুর রাহমান তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের জাতীয় সঙ্গীতের নাম কি? উত্তরে বলছি, চীনের জাতীয় সঙ্গীতের পুরনো নাম হল স্বেচ্ছাসেবীদের অভিযান। এর রচনাকার হলেন চীনের সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার তিয়ান হান, আর সুর দেন প্রথিতযশা: সুরশিল্পী নিয়ে এর। ১৯৩৫ সালে রচিত এই গান ছিল যুগের ছেলেমেয়ে নামক তখনকার এক ছায়াছবির প্রধান সঙ্গীত। এই ছায়াছবিতে ত্রিশের দশকে জাপান চীনকে আক্রমণ করার এবং চীনাজাতির সেই সংকটময় মুহুর্তে চীনের বুদ্ধিজীবিদের জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ ফ্রান্টে ঝাঁপিয়ে পড়ার বাহিনী প্রতিফলিত হয়েছে।
এই আবেগপূর্ণ তীক্ষ্ণ সুরের গান ব্যক্ত করে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিরোধী মনোভাব। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় চীনের জাপবিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল সকল দেশের জনসাধারণের মধ্যেও এই গানটি প্রচলিত ছিল। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই গানটিকেই গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলার শ্রোতা মাহমুদা সুলতানা মিতু তাঁর চিঠিতে চীনের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এখন এ সম্পর্কে কিছু বণর্না করবো। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাধ্যমিক শিক্ষায় চীনের বিশেষ অগ্রগতি হয়েছে। বেশির ভাগ বড় ও মাঝারি শহরে মাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রী বাড়িতে থেকে বিদ্যালয়ে যায়। সপ্তাহে তারা পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে যায় ,প্রতিদিন ছ'ঘন্টা পড়াশোনা করে এবং এক ঘন্টা করে খেলাধুলা বিজ্ঞানচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। যেহেতু চীনে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার আরো ত্বতান্বিত করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু এখন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাবতীয় স্নাকত ছাত্রছাত্রীই কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উত্পাদন শ্রমে অংশ নিতে সক্ষম করে তোলার জন্যে চীন সরকার বৃত্তিমূলক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কারিগরি বিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো বাড়াবার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। গ্রামাঞ্চলে আরো বেশী মাধ্যমিক কৃষিবিদ্যালয় খোলা হচ্ছে যাতে আরো বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিপ্রকৌশল-সংক্রান্ত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী অধ্যয়ন করতে পারে।
সিলেট জেলার শ্রোতা আব্দুল মান্নান তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারে মোট কতটি বিদেশী ভাষা প্রচারিত হয়। উত্তরে বলছি, চীন আন্তর্জাতিক বেতারে মোট ৩৮টি বিদেশী ভাষা প্রচরিত হয়। চীন আন্তর্জাতিক বেতার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তমবেতার। ভিওএ এবং বি বি সির পর চীন আন্তর্জাতিক বেতারের স্থান।
|