পুরাতন চীনে অথার্ত গুওমিডাং পাটির শাসনকালে শহরের শ্রমিকরা কতৃর্পক্ষের নির্যাদনের প্রতিবাদে ধর্মঘট বা হরতাল পালন করতেন। কিন্তু নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোন দিন ঘর্মঘট বা হরতাল দেখা দেয় নি। সরকার বা কতৃর্পক্ষের উপর জনসাধারণের সমালোচনা বা অসন্তোষ থাকলে সরাসরিভাবে সংশ্লিষ্ট প্রণালীতে ব্যাখ্যা করা যায়। উধ্বর্তন কর্মকর্তা আর গোড়ার স্তরের জনসাধারণের মধ্যে মত বিনিময় কোন বাধা নেই। সুতরাং যদি জনসাধারণের প্রস্তাব বা মতামত যুক্তিযুক্ত তাহলে কতৃর্পক্ষ অবশ্যই তাদের প্রস্তাব গ্রহন করেন। যখন জনসাধারণের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তখন কতৃর্পক্ষ বা উধ্বর্তন কর্মকর্তারা সঙ্গে সঙ্গে এ দ্বন্দ্বের সমাধান করেন। তবে চীনে ধর্মঘট পালা করতে নিষিদ্ধ তাই নয়। চীনের সংবিধান অনুযায়ী, চীনের নাগরিকদের আছে বাক স্বাধীনতা, চিঠিপত্র লেখার ও পাওয়ার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জনসমাবেশ ও জনসভার স্বাধীনতা, সংঘ গঠনের স্বাধীনতা, মিছিলের স্বাধীনতা, বিক্ষোভ প্রদর্শনের স্বাধীনতা ও ধর্মঘটের স্বাধীনতা। চীনের পুলিশের ইচ্ছা মতো মানুষকে নির্যতন করার ক্ষমতা নেই। এমন কি যখন তারা আক্রমাণের শিকার হন তখন তারা সহজেই বর্বরোচিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না। তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয় কেবল তারা চুড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন ।
ঝিনাইদহ জেলার শ্রোতা, এইচ, এম গোলাম রসুল তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে এ পযর্ন্ত কত জন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান মন্ত্রী হয়েছেন? চীনের কি সার্ক সদস্য হবার পরিকল্পনা আছে? এখন প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পযর্ন্ত মোট পাঁচ জন প্রেসিডেন্ট ও ছ'জন প্রধান মন্ত্রীর জন্ম হয়েছেন। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি । চীন এখন সার্কের পযর্বেক্ষক সদস্য। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন আর সার্কের মধ্যে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হবে আশা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলার শ্রোতা মো: সাজ্জাদ হোসেন তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের জাতীয় খেলা কোনটি? উত্তরে বলছি, চীনে বেশ কয়েকটি লেখা জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয়। যেমন , টেবিল-টেনিস, বাস্কিট বল, ভলিবল ইত্যাদি। কিন্তু টেবিল-টেনিসকে চীনের জাতীয় খেলা বলে গণ্য করা হয়। এ কথা বলা যায় যে চীনের আবালবৃদ্ধবনিতা এই খেলা পছন্দ করেন। এখন শহরের পার্ক পযর্ন্ত জায়গায়ও টেবিল-টেনিস টেবিল স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যেক দিন সকালে এ সব খোলা মাঠে টেবিল-টেনিস খেলতে দেখা যায়। চীনের টেবিল-টেনিস খেলোয়াড়রা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনের পদক অর্জন করেছেন।
হবিগন্জ জেলার শ্রোতা বন্যা অধিকারী তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন , চীনের সংগীতের সর্ব শ্রেষ্ঠ পুরস্কার কি? সি আর আই এর কাছে কোন দেশ থেকে বেশির ভাগ শ্রোতারা চিঠিপত্র লিখে? এখন প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি । চীনের সংগীতের সর্ব শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হল ' স্বর্ণ ঘন্টা ' পুরস্কার। প্রত্যেক বছর এক বার করে এই পরুস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, গত কয়েক বছর ধরে সি আর আই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অধিক থেকে অধিকতর শ্রোতা চিঠি পেয়ে থাকে। গত বছর সি আর আই মোট ২০ লক্ষাধিক চিঠিপত্র পেয়েছে। এ সব চিঠির মধ্যে আশি ভাগ দক্ষিণ এশিয়া দেশসমূহ থেকে এসেছে। শ্রোতাদের চিঠিপত্রের সংখ্যার দিক থেকে সিংহরী বিভাগ, তামিল বিভাগ এবং উদু বিভাগ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় স্থান পেয়েছে। আমরা আশা করি, আমাদের বাংলাদেশ ও ভারতের শ্রোতারা নিয়মিত আমাদের অনুষ্ঠান শুনবেন। নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমাদের অনুষ্ঠান সম্বন্ধে কোন মতামত ও প্রস্তাব থাকলে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন।
ঢাকা বিভাগের শ্রোতা সৈয়দা নাজমুন নাহার লক্ষী তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে সরকারী চাকরী পেতে হলে কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন? চীনে সরকারী চাকরী মেয়াদ কত বছর ? উত্তরে বলছি, চীনে সরকারী কর্মচারী হতে চাইলে কমপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাক হওয়া উচিত। প্রত্যেক বছর সরকার দেশব্যাপী একটি বিশেষ পরীক্ষার আয়োজন করে। জানা গেছে, এই পরীক্ষা অত্যন্ত কড়াকড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাক হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা যারা বিভিন্ন সরকারী সংস্থায় যোগ দিতে চান তাদের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে হবে। প্রত্যেক বছর হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী এই দেশব্যাপী পরীক্ষায় অংশ নেন। সাধারণত কয়েক শোর জনের মধ্যে একজন সরকারী কর্মকচী হওয়া সুযোগ পেতে পারেন। অন্য কথায় কয়েক শো জনের মধ্যে এক জন এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে পারেন। সাম্প্রতিক বছরগুলো সরকারী কর্মচারী হওয়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আশা-আকাংক্ষা। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীনে পুরুষ সরকারী কর্মচারীদের অবসর নেওয়ার বয়স হল ৬০ বছর এবং নারী সরকারী কর্মচারীদের অবসর নেওয়ার বয়স হল ৫৫ বছর। কিন্তু কোন কোন কর্মসংস্থায় নারীরা ৬০ বছর বয়স না হওয়ার পযর্ন্ত অবসর নেবেন না।
রাজশাহী জেলার শ্রোতা এমদাদুল হক তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের লোকসংখ্যা হত? চীনের লোকসংখ্যার ঘনত্ব কি রকম? উত্তরে বলছি, বতর্মানের চীনের লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি। এই সংখ্যা পৃথিবীর মোট লোকসংখ্যার ২২ শতাংশ ভাগ। চীনের বিভিন্ন এলাকার লোকসংখ্যার ঘনত্বের পাথর্ক্য খুব বেশী। বিশাল অভ্যন্তরীণ ভূখন্ডে অধিবাসীর সংখ্যা কম আর উপকূলীয় এলাকায় অধিবাসীর সংখ্যা বেশী। চীনে প্রতি বগর্কিলোমিটারে জনবসতির ঘনত্ব হল গড়ে ১০৭ জন। উপকূলীয় ১১টি প্রদেশ, কেন্দ্রশাসিত শহর ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রতি বগর্কিলোমিটারে লোকসংখ্যার ঘনত্ব গড়ে ৩২০.৬ জন আর একই সময়পর্বে মূল-ভূখন্ডের অভ্যন্তরীণ ১৮টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে লোকসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বগর্কিলোমিটারে গড়ে ৭১,৮ জন, তার মধ্যে সবচেয়ে কম লোকসংখ্যার তিব্বত, ছিংহাই, সিনচিয়াং, কানসু, নিংসিয়া ও অন্তমঙ্গোলিয়ার লোকসংখ্যা প্রতি বগর্কিলোমিটারে গড়ে ১১,৮ জন।
|