বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ফালগুনী রেডিও নেস ক্লাবের পরিচালক সুলতান মাহমুদ তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, সি আর আই কোন সাল থেকে বাংলা অনুষ্ঠান প্রচার করছে? চীনে ছেলে এবং মেয়েদের বিয়ের নুন্যতম বয়স কত? এখন তাঁর প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারী বাংলা অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়। এর আগে ইংরেজি বিভাগের একজন প্রবীন কর্মচারী বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেন । বাংলা অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের আগে প্রায় ছ' মাসের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছিল। ভারতের পশ্চিম বাংলা রাজ্য থেকে আসা দু'জন প্রবাসী চীনা বাংলা বিভাগে যোগ দেন। তাঁরা বাংলা বিভাগের প্রথম দু'জন ঘোষিকা। পরে কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রী পেইচিং ব্রককাস্টিং ইনস্টিউট থেকে স্নাতক হয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। বতর্মানে তাঁরা সবই অবসর নিয়েছেন। কিন্তু বাংলা বিভাগের জনশক্তির অভাব রয়েছে বলে অবসর নেওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কয়েক জন এখনও বাংলা বিভাগে কাজ করছেন। তাঁরা হলেন, ম্যাডাম ফং সিও ছিয়েন, ম্যাডাম চুং সাও লি, মিস্টার ঠাং ইয়াও খ্যাং। তাঁরা একটানা ৩৬ বছর ধরে বাংলা বিভাগে কাজ করে এসেছেন। বাংলা বিভাগে তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য এবং প্রশংসনীয়। এখন দিতীয়টি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীনের বিবাহ আইন অনুসারে চীনের ছেলে-মেয়ের নূন্যতম বিষয়ের বয়স হল: ছেলের বয়স ২৪ এবং মেয়ের বয়স ২২। কিন্তু আজকাল চীনের তরুন-তরুনীরা এ বয়সের মধ্যে খুব কম বিয়ে করে। শ্রোতা বন্ধুরা, চীনের বিবাহ প্রসংগে আমি একটু বেশী বণর্না করতে চাই। চীনের নয়া বিবাহ আইন অনুযাযী, চীনে স্ত্রীপুরুষের স্বেচ্ছা-পছন্দ, একবিয়ে এবং স্ত্রীপুরুষের সমানাধিকারের উপর বিবাহের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। বিয়ে হওয়ার পর, বাড়ীতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সম-মযার্দার অধিকারী। স্বামীর বা স্ত্রীর প্রত্যেকেরই নিজ নিজ পারিবারিক নাম ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। মা-বাবা অবশ্যই শিশুদেরকে লালনপালন ও শিক্ষাদান করবেন, ছেলেমেয়েরা পিতামাতার ভরণপোষণ এবং দেখা-শুনার দায়িত্ব অবশ্যই গ্রহণ করবে। শিশুরা তাদের বাবার অথবা মার পারিবারিক নাম গ্রহণ করতে পারে। নয়া বিবাহ অনুসারে, যারা একই বংশোদ্ভতবা সরাসরি রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্যে বিবাহ নিষেদ্ধ। চীনের বিবাহ সম্বন্ধে যদি আপনাদের আরও প্রশ্ন থাকে তাহলে চিঠি লিখে জানাবেন।
বাংলাদেশের িপ্রয়জন্মভূমি বেতার সংঘের সাধারণ সম্পাদক এম,মিনহাজ উদ্দিন বিপুল তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের কোন প্রদেশ সবচেয়ে বড়? উত্তরে বলছি, চীনদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। রাশিয়া ও ক্যানাডার পরই চীনের স্থান। বতর্মানে চীনে ৩১টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আছে। আয়তনের দিক থেকে চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সবচেয়ে বড়। কিন্তু লোকসংখ্যার দিক থেকে হোনান প্রদেশ সবচেয়ে বড়। কিন্তু এর আগে সিছুয়ান প্রদেশের লোকসংখ্যা সবচেয়ে বেশী ছিল। এখন সিছুয়ান প্রদেশের ছুংছিন শহর চীনের কেন্দ্রীসরকারের সরাসরি কতৃর্ত্বাধীন শহরে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার শ্রোতা মো: জাকারিয়া হক তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের প্রধান শহর কয়টি? চীনা জাতিদের প্রধান ধমীর্য় উত্সব কি? উত্তরে বলছি, চীনে অনেক বড় বড় শহর আছে। কিন্তু সাংহাই মহা নগরি চীনের সবচেয়ে বড় শহর। কিন্তু আয়তনের দিক থেকে রাজধানী পেইচিং সবচেয়ে বড়। সাংহাই শহর চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও বাণিজ্য শহর। চীনের জাতীয় জি ডি পিতে সাংহাইএর অবদান উল্লেখযোগ্য। চীনা জাতিদের প্রধান ধমীর্য় উত্সব কি তা বলা একটু কঠিন । কারণ চীনে কয়েকটি ধর্ম প্রচলিত। এখানে মামি শুধু ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে আপনাদের জন্য বণর্না করতে চাই। বাংলাদেশের মতো চীনে ইসলাম ধর্ম প্রচলিত আছে। চীনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসার শুরু হয় খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্য ভাগে অথার্ত চীনের থাং রাজবংশ আমলে। চীনের থাং রাজবংশ ও সোং রাজবংশ আমলে ইসলাম ধর্মাবলম্বী আরব ও পারশ্যের ব্যবসায়ীরা স্থলপথে মধ্য-এশিয়ার উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম চীনে আসতেন, আর নৌপথে আসতেন চীনের দক্ষিণ প্রান্তের গুয়াংযৌ শহরে ও দক্ষিণপূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য বন্দরে। চীনের মিং রাজবংশ আমলের খ্যাতনামা নৌ-অভিযাত্রী যেং হো-এর নেতৃত্বে পরিচালিত নৌবহর সাত বার সমুদ্র পার হয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ সফর করে। বাংলাদেশ ও ভারতও তারা সফর করেছিলেন। যেং হোর নেতৃত্বাধীন নৌঅভিযাত্রীদলের মুসলমান সদস্যরা মক্কায় গিয়ে হজ করেছিলেন। চীনের হুই, উইগুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক, তাতার, কিরগিজ , ডোংসিয়াং, সালার, এবং বোনান---এই দশটি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশে যেমন ঈদুল ফিতর, কোরবানীর ঈদ পালিত হয় চীনের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোও এ সব ধর্মীয় উত্সব পালিত হয়। এ দুটি উত্সবে যারা মুসলমান তারা এক দিনের ছুটিও পান।
|