v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-01 19:52:31    
মুখোমুখি

cri
    বগুড়া জেলার শ্রোতা আব্দুল্লাহেল হাদী তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনে কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি আছে? সে সব সংখ্যালঘু জাতি চীনের কোন কোন জায়গায় বসবাস করে? উত্তরে বলছি, চীন একটি জাতিবহুল দেশ। চীনে ৫৬টি জাতি বাস করে। চীনের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। এর মধ্যে শতকরা ৯৪জন হান জাতিভুক্ত। হান জাতি ছাড়া আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি আছে। সময়াভাবে আমি সকল জাতি সম্পর্কেবণর্না করতে পারব না। চীনের সব অঞ্চলেই হান জাতি বসবাস করে, তবে প্রধানত উত্তরপূবের হুয়াংহো নদী অববাহিকায়, ইয়াংসি নদী অববাহিকায় আর যুজিয়াং নদী অববাহিকায় এবং সোংলিয়াও সমভূমিতেই হানজাতি কেন্দ্রীভুত। সংখ্যালঘু জাতিগুলো তাদের শতশত বছরের বাসভুমি অনেকগুলো সুবিশাল অঞ্চলে বসবাস করে। আবার এমন নজিরও অনেক যে বিভিন্ন অনেক জাতি একত্রে মিলেমিশে , অথবা ব্যাপক দূরত্বে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সম্প্রদায় হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে বসবাস করে। অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনের শতকরা সত্তরটি জেলায় ও শহরে দুই বা দুয়ের বেশি জাতি একত্রে মিশ্রিতভাবে বাস করে। সিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বাস করে তেরটি জাতি, ইয়ুন্নান প্রদেশে তেইশটি জাতি, আর সিশুয়াংবান্ন স্বাশাসিত বিভাগে দশটিও বেশি জাতির বসবাস। স্বাধীন ও সমান জাতিসমূহের একটি মহাপরিবারে চীনের সবকটি জাতি ঐক্যবদ্ধ। কোনো জাতির লোকসংখ্যা যাই হোক না কেন, অথবা যেখানেই তারা বসবাস করুক না কেন, প্রতিটি জাতিই অন্যসব জাতির সমকক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কামকর্মে সক্রিয় অংশ নেয়। চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর অনেক প্রতিনিধি আছেন, চীনা কমিউনিষ্ট পাটিতে ও গণসরকারে আছেন সংখ্যালঘু জাতিভূক্ত নেতৃস্থানীয় ক্যাডারা। প্রতিটি জাতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোকে আর চাহিদাকে রাষ্ট্র পুরোপুরিভাবে বিবেচনার মধ্যে রাখে। রাষ্ট্র প্রতিটি জাতির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখকরতে হবে যে, বিভিন্ন জাতির ভাষাগুলোকে সরকারীভাবে উত্সাহ দেওয়া হয় ও লালন করা হয়।

    রাজশাহী জেলার শ্রোতা রাতু তরফদার তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কয়েকটি রেল লাই আছে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে চীনের রেলপথ সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। চীনের মাল-পরিবহণ ব্যবস্থায় রেলপথের গুরুত্ব খুব বেশী। দেশে মাল পরিবহণের মোট পরিমাণের শতকরা ৬০ ভাগ রেলযোগে সম্পন্ন হয়। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে চীনে প্রথম রেলপথ বসিয়েছিল ইংরেজরা ১৮৭৯ সালে। তখন থেকে মুক্তির বছর ১৯৪৯ সাল পযর্ন্ত এই ৭৩ বছরে মাত্র ২২ হাজার কিলোমিটার রেলপথ গড়ে উঠেছিল। এই রেলপথেরও প্রায় অধের্কই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল দীঘর্দিন ধরে দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধ চলার সময়ে। মুক্তির সময়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী রেলপথ ছিল মাত্র ১১ হাজার কিলোমিটার। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পুরনো রেলপথগুলো মেরামত বা সংস্কার এবং অজস্র নতুন রেলপথ তৈরী করা হয়। বতর্মানে চীনের প্রতি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে রেলগাড়ীর চলাচল হয়েছে। গত বছর ছিনহাই-তিব্বত রেলপথ স্থাপিত হয়েছে। তার মানে সারা চীনে এমন যায়গা নেই যেখানে রেলগাড়ীতে যাওয়া যায় না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা চীনে রেলগাড়ীর গতি কয়েক বার বাড়ানো হয়েছে। যেমন ধরুন, বিশ বছর আগে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে প্রায় ২১ ঘন্টা লাগত । কিন্তু এখন মাত্র ১১ ঘন্টা। আগামী দশ বছরের মধ্যে পেইচিং থেকে সাংহাই যেতে মাত্র ৭ ঘন্টা লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেলগাড়ী চীনা মানুষের প্রধান যানবাহন। কোন জায়গায় গেলে রেলগাড়ীতে চড়া নিরাপদ মনে করা হয়।

    কুষ্টিয়া জেলার শ্রোতা আবু ছিদ্দিক তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনের জাতীয় ফুল আর পাখি কি? শ্রোতা বন্ধু, এর আগে আরও কয়েক জন শ্রোতা একই প্রশ্ন করেছেন। দু:খের ব্যাপার হল, এখন পযন্র্ত চীনের জাতীয় ফুল আর পাখি নিবার্চিত হয়নি। হয়তো সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের প্রশ্ন উঠবে কেন চীনে জাতীয় ফুল আর পাখি নেই। উত্তরে বলছি, চীন একটি বিশাল দেশ। চীনের স্থলভাগের মোট আয়তন ৯৬ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। চীনে ২৩টি প্রদেশ , ৫টি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ৫টি কেনদ্রীয় শাসিত শহর আছে। সুতরাং চীনে জাতীয় ফুল ও পাখি নিবার্চন করা সত্যিই একটি কঠিন ব্যাপার। কয়েক বছর আগে জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় ফুল ও পাখি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোন মতৈক্য অর্জিত হয়নি বলে পরে এ ব্যাপার নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। উল্লেখ্য যে , এ ব্যাপারে চীনের মানুষের বেশী কৌতুহল নেই।

    নরসিংদি জেলার শ্রোতা হুমায়ুন কবীর তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন করেছেন, চীনের দীর্ঘতম নদীর নাম কি? উত্তরে বলছি, চীনের দীর্ঘতম নদীর নাম ছাংজিয়াং অথবা ইয়াংসি নদী। ইয়াংসি নদী পৃথিবীর তৃতীয় দীর্ঘতম নদী। ইয়াংসি নদীর উত্পত্তি হয়েছে থাংগুলা পবর্তমালার প্রধান শৃঙ্গ তুষারঢাকা গেলাডানডোং-এর দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে থুয়োথুয়ো নদী হিসেব। এর পর ইয়াংসি নদী ছিংহাই, তিব্বত, সিছুয়ান, ইয়ুন্নান, হুবেই, হুনান, জিংয়াসী, হানহুই এবং জিয়াংসুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শাংহাইতে পূবর্চীন সাগরে গিয়ে মিশেছে। ইয়াংসি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৬৩০০ কিলোমিটার। শাংহাই, সানজিং, উহান এবং ছোংছি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে সংযুক্ত করে একটি প্রধান শিরাপথের মতো ইয়াংসি নদী প্রবাহিত।

    দিনাজপুর জেলার শ্রোতা আতাহার আলী তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, সি আর আইএর বাংলা বিভাগে কর্মরতসাংবাদিকরা কোথায় বাংলা ভাষা শিখেছেন? উত্তরে বলছি, এখন বাংলা বিভাগে ১৩ জন সাংবাদিক আছেন। এদের মধ্যে ৯জন ২০০৪ সাল থেকে বাংলা বিভাগে কাজ করছেন। তাঁরা চীনের তথ্য মাধ্যম বিশ্ববিদ্যায়ের স্নাতক। কিন্তু তাঁরা ২০০২ সালে বাংলাদেশে দশ মাস পড়াশুনা করেছেন। ২ জন বাংলাদেশে পড়াশুনা করেছেন। বাকী ২ জন বতর্মানে বাংলা বিভাগে শিখছেন। বাংলা বিভাগের দু'জন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলা বিভাগের প্রবীন কর্মচারী বাই কেই ইয়ান তাদেরকে পড়াচ্ছেন। এ দু'জন ছাত্র বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগে অন্য বিষে শিখেছেন। এখানে উল্লেক করতে হবে যে, চীনে যত জন বাংলা ভাষা জানেন তারা সবাই কমপক্ষে একবার বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বতর্মানে চীনের তথ্য মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫জন ছাত্র-ছাত্রী বাংলা ভাষা শিখছেন। ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে কয়েকজন সম্ভাবত বাংলা বিভাগে যোগ দিতে পারেন।

    ভারতের বধর্মান জেলার শ্রোতা আবু নাসের মনিরুজ্জামাল তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, কোন সালে ভারত আর চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়? উত্তরে বলছি, ১৯৫০ ৪ এপ্রিলে দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করে। ভারত হল প্রথম অ-সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা হয়। চীন ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী সুদীর্ঘকালের । ১৯৫৪ সালে দু'দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে সফর বিনিময় হয়। দু'দেশের শীর্ষ নেতাদের যৌথ প্রস্তাবে বিশ্ববিখ্যাত শান্তিপূর্ণ পঞ্চশীলনীতি প্রণীত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীন আর ভারতের মধ্যে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। গত বছর ছিল 'চীন-ভারত মৈত্রী বর্ষ' । এ উপলক্ষ্যে দু'দেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত বছরের শেষ দিকে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ভারত সফর করেছেন। এতে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, চীন আর ভারতের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক একটি নতুন পযার্য়ে উন্নীত হয়েছে। আমা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে দু'দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতা আরও সম্প্রসারিত হবে। চীন আর ভারত দু'টো প্রতিবেশী দেশ। সুতরাং দু'দেশের মধ্যে আদান-প্রদান আরও জোরদার হওয়া উচিত।

    শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ শুনলেন আমাদের প্রত্যেক বুধবারের বিশেষ অনুষ্ঠান মুখোমুখি। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে আপনাদের জন্য একটি প্রশ্ন। প্রশ্নটি হল : চীনে কয়েটি জাতি আছে? আবার বলছি, চীনে কয়টি জাতি আছে। আপনার উত্তর চিঠিতে লিখে আমাদের পাঠাবেন। আজকের মুখোমু্খি এখানে শেষ হল, ভাল থাকুন , সুস্থ্য থাকুন , আগামী সপ্তাহে আবার কথা হবে।