রংপুর জেলার শ্র্রোতা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞাস করেছেন, চীনের সবচেয়ে উন্নত নগরী কোনটি? তার আয়তন ও লোকসংখ্যা কত? উত্তরে বলছি, চীনের মুলভূভাগের সাংহাইকে চীনের সবচেয়ে উন্নত শহর বলে মনে করা হয়। তার আয়তন হল ৫৮০০ বর্গকিলোমিটার এবং তার লোকসংখ্যা হল ১ কোটি ৬০ লাখ ৬ হাজার । অবশ্যই রাজধানী পেইচিং এবং চীনের হংকংও কম উন্নত শহর নয়। ইতিহাসে সাংহাই চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও ব্যাংকিং শহর ছিল। সুতরাং শিল্প ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে এই শহরের ভিত্তি ভাল। বতর্মানে সাংহাই চীনের মুলভূভাগের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ও ব্যাংকিং শহর । হংকং একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ও ব্যাংকিং শহর।
দিনাজপুর জেলার শ্রোতা জালাল উদ্দিন তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের রাজধানী পেইচিংএর লোকসংখ্যা কত? পেইচিং শহরে কি কোন রিকশা আছে? পেইচিং শহরে মসজিদের সংখ্যা কত? আছা, এখন প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, বতমার্নে রাজধানী পেইচিংএর লোকসংখ্যা ১৫ কোটি ৭০ লাখ। এখন দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। চীনে রিকশা আছে। কিন্তু রিকশার সংখ্যা খুব কম। সাধারণত শহরের উপকন্ঠে দেখা যায়। তবে, পেইচিং শহরের কোন কোন প্রাচীন দর্শনীয় স্থানেও রিকশাও দেখা যায়। কারণ কোন কোন বিদেশী পযর্টক রিকশায় বসে শহর ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে পছন্দ করেন। বতর্মানে পেইচিং শহরের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে জায়গায় রিকশায় চড়ে ভ্রমণের ব্যবস্থান নেওয়া হয়েছে। পযর্টকরা রিকশায় বসে পেইচিং শহরের কয়েকটি প্রধান দৃশ্যস্থানীয় জায়গা দেখতে পাবেন। এখানকার রিকশা দেখতে বাংলাদেশের রিকশার মত নয়। বাংলাদেশের রিকশার চাইতে পেইচিংএর রিকশার আকার একটু বড়। এখন তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। কারণ আমি এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজতে পারি নি। যাই হোক, আমার জানা মতে, রাজধানী পেইচিংএ দশ বারটি মসজিদ আছে। পেইচিং শহরের নিওচে নামক একটি রাস্তা আছে। এই অঞ্চলে কেবল মসলমানগণ বসবাস করে। এই এলাকার একটি মসজিদের ইতিহাস এক হাজারেও বেশী বছরের। পেইচিংএর ডোংসি মসজিদ পেইচিং শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এই মসজিদ তৈরী হয়েছিল ৫০০ বছর আগে। এই মসজিদটি ১৯৫২ ও ১৯৭৪ সালে দু বার মেরামত করার ফলে নতুন রুপ পেয়েছে। এখন মসজিদটিতে রয়েছে নামাজ পড়ার প্রশস্ত হল-ঘর, ওজু করার ঘর এবং গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারে যেমন সংরক্ষিত রয়েছে চীনের বিভিন্ন আমলের ইমাম ও আলেমদের হাতে লেখা কোরান এবং মুসলমানদের দশর্ন, ইতিহাস ও সাহিত্য-বিষয়ক রচনা ও গ্রন্থ, তেমনি রয়েছে মিশর, ভারত , তুরস্ক , পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে প্রকাশিত ইসলামী ধমর্গ্রস্থ। এই মসজিদের বড় হলঘরটিতে পাঁচ শোরও বেশি লোক এক সঙ্গে নামাজ পড়তে পারে। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়ে চীনের মুসলমানরা এবং পেইচিংস্থ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদুত, অন্যান্য কূটনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার্থীরা এই মসজিদে সমবেত হয়ে ঈদের নামাজ পড়েন। বলাবাহুল্য এই মসজিদে মুসলমানদের নিয়মিত ধমর্কর্ম ও নামাজ স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের শ্রোতা মনছুডা তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীন গণ প্রজাতন্ত্র কোন বছরে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তা কার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়? উত্তরে বলছি, ১৯৪৯ সালের পয়লা অক্টোবর চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নয়া চীনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারমান মাও জে ডং প্রতিষ্ঠার দিন সারা বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেছেন, " চীনা জনগণ উঠে দাঁড়িয়েছে।" নিজস্ব আন্তর্জাতিক মযার্দায়, চীন অবশেষে পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমকক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক শতাব্দীর আধা-ঔপনিবেশিক অপমানের মধ্যে থাইপিং , ১৮৯৮ সালের সংস্কারবাদীরা এবং সান ইয়াতসেনের নেতৃত্বে বুজোর্য়া বিপ্লবীরা যা চেয়েছেন, চীনের কমিউনিষ্ট পাটির নেতৃত্বে জনগণের বিপ্লব তা শেষ পযর্ন্ত সম্পন্ন করেছে।
রাজশাহী জেলার শ্রোতা প্রবীর কুমার মন্ডল তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের শহরের প্রধান যানবাহন কি? উত্তরে বলছি, চীনের শহরের প্রধান যানবাহন হল বাস। যেমন ধরুন রাজধানী পেইচিং শহরে অজস্র বাস আছে। এ সব বাস শহরের বিভিন্ন জায়গায় আসা-যাওয়া করে। তা ছাড়া , পেইচিং শহরে দু' টি সাবওয়ে এবং একটি মনোট্রেন আছে। পেইচিংএর নাগরিকরা যখন নিজ নিজ কর্মস্থান বা অফিসে যান তখন তারা বেশির ভাগ সময়ই বাসে চরে যান। অবশ্যই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ীর সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। এখন অনেক যবক-যুবতী নিজেরই গাড়ী চালিয়ে নিজেদের কর্মস্থানে যান। কিন্তু অধিকাংশ লোক যে কোন জায়গায় গেলে বাসে করে যান। আরেকটি কথা উল্লেখ করতে হবে যে, পেইচিংএর মতো মহা নগরীতে তেকসির সংখ্যাও খুব বেশী । সুতরাং, কোন জায়গায় দ্রুতদাড়াহুড়া যেতে হয় যারা তারা টেকসি করে যান। এক কথায় বতর্মানে চীনের শহরগুলোর যানবাহন খুবই উন্নত এবং সহজলভ্য।
|