মি. মঈনুল আলম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় লেখাপড়া করেছেন। তাঁর ছবি তোলার আগ্রহ ছিল। তিনি ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপজাতীয়দের নিয়ে তিনি বেশি কাজ করেন। এবার চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন সফরে এসেছেন। আমাদের সংবাদদাতা ইয়াং ওয়েই মিং তাঁর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
প্রশ্নঃ এবার কি প্রথম চীন এসেছেন?
উঃ এবার প্রথম এসেছি। প্রথমে গেলাম বেহাইতে। কিন্তু টাইফুনের কারণে ছবি তুলতে পারি নি। এরপরে গেলাম গুইয়াংয়ে। চমত্কার জায়গা। আমি দেখে অবাক হয়ে গেছি । বিশেষ করে ওখানকার উপজাতীয়দের জীবনযাত্রা দেখে। এসব উপজাতীয়দের জীবনযাত্রার সঙ্গে আমাদের দেশের উপজাতীয়দের বেশ মিল রয়েছে। বিশেষ করে মেং নামে একটি উপজাতি আছে এখানে। আমাদের দেশে একটি আছে মুরং। আমি মুরংদের নিয়ে কাজ করেছি। মেংদের বাশি বাজানো, বাশির ডিজাইন, ড্রেস, বিশেষ করে লাল, নীল অনেক কিছুতেই মুরংদের সঙ্গে মিল আছে।
প্রশ্নঃ সেখানে এমন কিছু কিনেছেন? বাঁশি বা কাপড়?
উঃ না, আমি কিনতে চেয়েছিলাম, কিছু কয়েন। বিশেষ করে আমাদের মুরংরাও কয়েন দিয়ে সাজে। কিন্তু কেনা হয় নি। কারণ ওরা বলল, এগুলো আসল কয়েন না, ওদের বানানো।
প্রশ্নঃ কিছু ছবি তুলেছেন?
উঃ নিশ্চয় অনেক ছবি তুলেছি। দেশে গিয়ে ওগুলো দেখব। চায়নার জন্য কিছু পাবলিকেশন্স করব। সিডিও করবো। বিশেষ করে আমার দেশে উপজাতি নিয়ে কাজ করেছি। এখানেও সেটা পেয়েছি। বিশেষ করে আমি পাহাড় খুব পছন্দ করি। চীনে মোট ৫৬টি জাতি আছে। এর মধ্যে হান জাতি প্রধান। বাকি ৫৫টি উপজাতি। বেইহাইয়ে অনেক উপজাতি থাকে। ওদের থাকার ঘর খুব সুন্দর। অনেক গাছপালা, সবুজ।
প্রশ্নঃ আপনার ছবির প্রধান বিষয়গুলো কি আসলে। মানুষ না পরিবেশ?
উঃ আমি আসলে কখনো শুধু পরিবেশ নিয়ে কাজ করি না। পরিবেশের সঙ্গে একটি ভিটিজ থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ পেইচিংয়ে কোথায় কোথায় ঘুরলেন?
উঃ তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে গিয়েছিলাম। অনেক বেশি শৃঙ্খলা। আর কোথাও যাওয়া হয় নি।
প্রশ্নঃ চীনে আসার পর কি দৃশ্য আপনার মনে বেশি ছাপ ফেলেছে?
উঃ অনেক কিছু আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। এত বিশাল একটি দেশ। অথচ আনাচে কানাচেও আপনি সরকারের তত্পরতা খুঁজে পাবেন। অর্থাত্ সরকারি ফ্যাসিলিটিজ যে কোন জায়গায় পাবেন। যেগুলো সবদেশে পাওয়া যায় না। ফ্যাসিলিটিজ পাওয়াতে মানুষ উন্নয়ন করছে খুব তাড়াতাড়ি। সাথে করি জিনিষ খুব ভাল লেগেছে যে, খুব সহজ , ছোট ছোট কিছু পদ্ধতিতে অনেক কিছু করছে।
প্রশ্নঃ যেমন?
উঃ যেমন, ইউরোপ , আমেরিকায় বড় বড় যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চলে। এখানে কিন্তু সেরকম নয়। আমি দেখেছি , একজন কৃষক গাছে জৈব সার দিচ্ছে। কিন্তু ইউরোপ হলে কেমিক্যাল সার দিত। কৃষক খুব সাধারণ যন্ত্র দিয়ে নিড়ানি দিচ্ছে, মাটি কোপাচ্ছে। চমত্কার। এগুলো থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।
প্রশ্নঃ আমি শুনেছি আপনারা যখন গুইয়াংয়ে যান, তখন আপনাদের প্রত্যেকের সঙ্গে একজন করে গাইড ছিলেন। আপনার গাইডের নাম কি ছিল?
উঃ আমার গাইডের নাম ছিল গুয়াংয়ে যে আমার সঙ্গে ছিল আন্না। ইংরেজী নাম। আসলে ওরা সবাই ইংরেজী বিভাগে পড়েতো। ওরা সবাই ইংরেজী চর্চা করে। ওদের দু'একটা বাংলা শব্দ শিখেয়েছি। ওদের সঙ্গে বেশ মজা করেছি। যেমন, চায়না নামটি বাংলায় একটু ঘুরিয়ে বলা যায় চাইনা। I don't want । কিন্তু আমি চায়নাকে চাই।
প্রশ্নঃ গুইয়াংয়ে আপনি কত ছবি তুলেছেন?
উঃ আসলে এবার আমি অনেক ছবি তুলেছি। এবার ডিজিটালে তুলি নি। ফিল্মে তুলেছি আর ব্যাগে রেখে দিয়েছি। দেশে গিয়ে এগুলো সব সাইল করব।
প্রশ্নঃ এগুলো নিয়ে কি কোন প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে?
উঃ হ্যা, আমার ইচ্ছা আছে। তিন থেকে চারটি ইচ্ছা আছে। প্রথমত, আমি আমার দেশে উপজাতি নিয়ে কাজ করেছি। এখানেও করলাম। আমি চাচ্ছি, একটা সেতু বন্ধন করতে। অর্থাত্ দুই উপজাতি নিয়ে একটা পাবলিকেশন করতে। তাহলে বোঝা যাবে কি অদ্ভুত মিল রয়েছে দু'দেশের মধ্যে। আরেকটা হচ্ছে, আমি একটা সিডি করবো। আরেকটা প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে। আমি গিয়ে চায়না দূতাবাসে যোগাযোগ করবো। আমার ইচ্ছার কথা জানাবো। ওঁরা রাজি হলে দেখাবো আমি কি করেছি।
প্রশ্নঃ আপনি আগে কোন প্রদর্শণী করেছেন?
উঃ আসলে আমি অনেক পুরস্কার পেয়েছি। বিশেষ করে জাপানে। আর প্রদর্শনী এখনো করা হয় নি। কারণ ছবি তুলতে গেলেই মনে হয়, আমার আরও অনেক কিছু করার আছে। ইচ্ছেগুলো যেন শেষ হয় না। তবে না করে ভালই হয়েছে। কারণ আমার মনে হচ্ছে চায়না আসার পর আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে।
ধন্যবাদ, আশা করি, আপনাদের ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়িত হবে।
|