২১ থেকে ২৫ অক্টোবর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশের ডঃ ইউনুস চীন সফর করেছেন। সফরকালে তিনি আমাদের সংবাদদাতা আ বাম সালাউদ্দিনকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ ডঃ ইউনুস আপনি গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্ষুদ্র ঋণের উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আমাদের আন্তরিক এবং অকৃত্রিম অভিনন্দন।
উঃ ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।
প্রশ্নঃ আমরা প্রথমেই জানতে চাইবো, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি এখন কেমন?
উঃ এটা অভূতপূর্ব অনুভূতি। কারণ এরকম সৌভাগ্যতো জীবনে খুব অল্প লোকেরই হয়। আমার সৌভাগ্য যে, এটা আমার কাছে এসেছে। আমার অনুভূতির চাইতেও বেশী। আমার আনন্দ হলো দেশবাসীর আনন্দ। মনে হয়েছে যে দেশের প্রত্যেকটা লোক যেন পুরস্কার পেয়েছে। কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছে , কেউ মিষ্টি বিতরণ করছে, নিজেরা বসে হৈহুল্লোর করছে, উত্সব পালন করছে। আমার কাছে দলে দলে স্রোতের মত মানুষ আসছে। কোলাকুলি করছে, কথা বলতে গিয়ে কেউ কেউ কেঁদে ফেলছে। আনন্দ আর উত্তেজনায় মানুষ যে কিভাবে কাঁদে, এক দিনে সেটা দেখলাম। যে ভাবে জড়িয়ে ধরলো, মনে হয় যে, সে একটা এমন অবলম্বন পেয়েছে তাতে আবেগ আপ্লত হয়ে পড়েছে।
প্রশ্নঃ আপনি দরিদ্র গ্রামীন মহিলাদের ঋণ সাহায্যের বিষয়টিকে কখন এবং কেন , কি জন্য গ্রহণ করলেন?
উঃ এটা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে জোবরা গ্রামে। সেখানে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ ইত্যাদি থেকে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে যে দুর্ভিক্ষ হলো , তখনই সবাইকে নাড়া দিয়েছিল বাংলাদেশের। আমাদেরকেও নাড়া দিয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছিলাম দূর্ভিক্ষ যাতে ভবিষ্যতে না হয় তার জন্য কি করা যায়। সে নানা জিনিস করতে করতে এটার মধ্যে এসে দাঁড়ালাম যে মানুষ ঋণ চায় কিন্তু মহাজন ছাড়া তার ঋণ নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ থেকেই এটা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬ সালে। ক্রমে ক্রমে এটা প্রসারিত হলো এক গ্রাম থেকে জোবরা গ্রামের থেকে অন্যান্য গ্রামে এবং বর্তমানে সারা বাংলাদেশে। এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রশ্নঃ আচ্ছা, গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ক্ষুদ্র ঋণ বাস্তবায়নের শুরুতে আপনার পূঁজির পরিমাণ কেমন ছিল? এবং কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলেন কি? তখনকার অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।
উঃ পুঁজি তেমন বিশেষ কিছু লাগে নি আমার। প্রথম যে টাকাটা লেগেছিল আমার সেটা হলো ৮৫৬ টাকা। সেটা হলো ৪২ জন মানুষ , যারা মহাজনের কাছ থেকে ধার করেছিলো। যার পরিমাণ ছিল ৮৫৬ টাকা। এই টাকাটা আমি আমার পকেট থেকে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে মহাজনের টাকা মহাজনকে ফেরত দিয়ে দাও। তাতে করে আর মহাজনের কথা মত কাজ করতে হবে না। তারা খুব শক্ত রকমের তাদের ওপর শর্ত আরোপ করেছিলো সে গুলো থেকে মুক্তি পেয়ে গেলো। কাছেই একটা গ্রাম। আমি নিজেই গ্যারান্টার হলাম, জমিদার হলাম, তাদের জমিদার হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দিলাম। কাজেই আমার আর নিজের কোন পয়সা লাগে নি। কাগজে সই করতে হয়েছে, টাকাটা ব্যাংক থেকে নিয়েছি এবং ব্যাংকের শর্ত অনুসারে ব্যাংক টাকা দিয়েছে এবং টাকাটা আবার সংগ্রহ করে ব্যাংকে ফেরত দিয়েছি। ওভাবেই শুরু হয়েছিল। কাজেই, টাকার বিষয়টা খুব মূখ্য ছিল না।
প্রশ্নঃ আমরা জানতে চাইবো গ্রামীন ব্যাংক এবং গ্রামীন ট্রাষ্টের কাজকর্ম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের বৈশিষ্ট সমূহ কি? এবং এই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতারা সময়মত ঋণ পরিশোধে সক্ষম হয় কি?
উঃ সক্ষম হচ্ছে বলেইতো সারা দুনিয়া জুড়ে এই তোলপাড় , ক্ষুদ্র ঋণের এই জয় জয়কার যে, যেখানে বড় লোকেরা টাকা শোধ করে না, সেখানে গরীব মানুষ বিশেষ করে গরীব মেয়ে মানুষ এই টাকা সুন্দরমত পরিশোধ করে দেয়। এটাই বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র ঋণ সম্প্রসারিত হওয়ার কারণ। গ্রামীন ব্যাংকের আদলে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। চীন দেশেও সেটা চলছে। সেখানেও একই অভিজ্ঞতা। এটা খুব সুন্দরভাবে চলে। তারা এই ঋণ নিয়ে নিজেদের রুটি রোজগারের একটা পথ খুঁজে নেয়, সেটাই হয় ক্ষুদ্র ঋণ বা গ্রামীন ব্যাংকের পদ্ধতি। তার মধ্যে যারা ঋণ নেয়, তারা সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করে। একবার ঋণ পরিশোধ হয়ে গেলে আরেকবার ঋণ নেয়ার উপযুক্ত হয়। আবার যদি ঋণ নিতে চায়, তাহলে আবার তিনি ঋণ নেন। যাতে করে সামনে চলার পথ এগিয়ে যায়।
|