প্রশ্নঃ আপনার নাম কি? কবে চীনে এসেছেন এবং চীনে লেখাপড়া করার প্রধান কারণ কি?
উঃ আমার নাম বিউটি। গত বছর অগাষ্ট মাসে চীনে এসেছি। আসার তেমন কোন কারণ ছিল না। মনে হয়েছিল তাই এসেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এসে খুব ভাল করেছি। চীনে পড়াশুনা আমার খুব কাজে লাগবে।
প্রশ্নঃ চীনে আপনার সাবজেক্ট কি? পিকিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আপনার বিশেষ মন্তব্য কি?
উঃ আমার সাবজেক্ট ভাষা ও সংস্কৃতি। আমার মনে হয় , ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয় পড়াশুনার জন্য এটি সবচেয়ে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া এটি বেইজিংয়ে অবস্থিত। বেইজিংয়ের বাইরে যারা পড়াশুনা করতে যান, তাদের ভাষা প্যাকটিস করতে সমস্যা হয়। এজন্য আমার মনে হয়, এটিই সবচেয়ে ভাল।
প্রশ্নঃ আপনার এখানে জীবনযাত্রা নিয়ে কি আমাদের কিছু বলবেন?
উঃ এখানে অনেক দেশের ছাত্র আছে। আমাদের ক্লাশে ছয়টি দেশের ছাত্রছাত্রী আছে। ফলে শুধু চাইনিজ না, অন্যান্য যেসব দেশের ছাত্রছাত্রী আছে, তাদের কালচার সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের ভাষা বুঝি না। কিন্তু শুনতে ভাল লাগে। আমরা মাঝে মাঝেই সবাই মিলে ঘুরতে চাই। যখন কোন কাজ করতে যাই, তখন বিভিন্ন দেশের বন্ধুরা বলেন, আমার দেশে হলে এটা এভাবে করা হত। ফলে আমি চীনের পাশাপাশি অন্য দেশের সংস্কৃতি জানতে পারছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০৭টি দেশের শিক্ষার্থী রয়েছে। আমার মনে হয়, অন্য কোথাও এত বিদেশী শিক্ষার্থী নেই। এদের অনেকেই আমার বন্ধু হয়েছে। অনেক সময় মজাও আছে, কর্ষাও আছে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা বাইরে কোথাও যেতে গেলে। আমি সাধারণত রান্না করে খাই। একবার আমরা টিচারের সঙ্গে সব ছাত্রছাত্রী মিলে বাইরে খেতে চাই। গরুর মাংস, মুরগের মাংস ও ভোজটেবল ছিল। সবাই খাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমি খাই না। তখন এক বান্ধবী খাবার তুলে দিতে যায়। আমি খুব তিব্রত বোধ করি। কারণ আমি মুসলিম রেস্টুরেন্ট ছাড়া খাই না।
প্রশ্নঃ আপনিতো বললেন, রুমে রান্না করেন। কিন্তু আপনি কি শুধু বাঙালী খাবার রান্না করেন? না চীনা খাবারও রান্না করেন?
উঃ শুধু বাঙালী খাবার রান্না করি। একবার কিন্তু সবজি কিনে চীনা খাবারের মতো রান্না করতে চেষ্টা করি। রান্না করতে জানি না। কিন্তু হোটেলে খেয়েছি। রান্না করার পর দেখতে মোটামুটি চীনা খাবারের মতোই হয়েছে। কিন্তু একবার মুখে দিয়ে আর খেতে পারি নি। ফেলে দিয়েছি। আমার রান্না হয় নি। বাংলাদেশেও কখনো রান্না করি নি। চীনে এসেই প্রথমে রান্না করতে শুরু করি। এখন ভালই পারি। সবাইতো বলে খাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ অবসর সময়ে আপনি কি করেন? কি কি করতে পছন্দ করেন?
উঃ অবসর সময়ে বাইরে এসে বসে থাকি। আমার গাছপালা, পাখী খুব ভাল লাগে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ছোট একটা লেক আছে। সাধারণত এই লেকের পাড়েই বসে থাকি। দৃশ্য দেখতে খুব ভাল লাগে।
প্রশ্নঃ মেহেদী সাহেব বলেছেন, তিনি আপনাদের সঙ্গে কাউমিস্টনস কিছু খেলাধুলা করেন। আপনি কি এতে অংশ নেন?
উঃ আমাদের হলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। ব্যাডমিটন আমি খেলি না, দর্শক। আমি সবসময়ই এই খেলা দেখি।
প্রশ্নঃ এখনতো আপনার গ্রীষ্মকালীন ছুটি। এই ছুটিতে কি আপনি কোথাও গিয়েছেন?
উঃ হ্যাঁ, গত ছুটিতে আরও বেশি যাওয়া হয়েছিল। এবার হোপেই, পেইতেইহো সমুদ্র সৈকতে গিয়েছি। খুব ভাল লেগেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশের সমুদ্র সৈকতে আমি কখনো যাই নি। কারণ সমুদ্র সৈকত থেকে আমার বাড়ী অনেক দূরে। ছবিতে দেখেছি এবং বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনেছি আমাদের সমুদ্র সৈকত খুব সুন্দর। এগুলোও সুন্দর। কিন্তু এগুলো মানুষের প্রচেষ্টার সুন্দর করে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদেরগুলো প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর।
প্রশ্নঃ বেইজিংয়ের কোন স্থানে গিয়েছেন?
উঃ হ্যা, তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে গিয়েছি। যাদুঘরে গিয়েছি। আমি পার্টি গিয়েছি।
প্রশ্নঃ এর মধ্যে আপনার কোনটি ভাল লেগেছে?
উঃ আমার পছন্দ সমুদ্র। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু'দিনের মন্য সমুদ্রে গিয়েছিলাম। খুব ঠান্ডা ছিল। আমাদের শিক্ষক বললেন, আজ তোমরা খোসল কর না। আগামীকার কর। কিন্তু পরদিন আরও ঠান্ডা। তারপরও সমুদ্রে গোসল করেছি। আমার খুব ভাল লেগেছে।
প্রশ্নঃ আপনিতো চীনে এসেছেন প্রায় একবছর। বাড়ীতে কি কোন চিঠি পাঠিয়েছেন?
উঃ আমার চিঠি লিখতে ভাল লাগে না। লিখতে পারি না। তবে ফোনে প্রায়ই কথা হয়। আমরা সপ্তাহে দু'য়েক বার ফোর করি। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। মা ভাইবোনের সঙ্গেও কথা হয়।
আমার পরিবর ও বাংলাদেশের সবার প্রতি সালাম রইলো। আমি যেন ভালোভাবে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে যেতে পারি , সেই দোয়া কামনা করছি।
(বিউটি সংবাদদাতা ছাও ইয়ানহুয়ার সঙ্গে)
|