চীনের আলোকচিত্র সমিতির আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশের আলোকচিত্র সমিতির চেয়াম্যান বুলবুল আহমেদ চীন সফর করেছেন। সফরকালে তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারে এলে বাংলা বিভাগের সংবাদকর্মী ইয়াং ওয়ে মিং তাঁর সাক্ষাত্কার দিয়েছেন।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে চীনের ওপর তোলা ছবিগুলো প্রদর্শন করেছেন কি?
উঃ আমরা বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের চোখে চীন শিরোনামে বাংলাদেশের জাতীয় যাদুঘরের গ্যালারীতে প্রথমে ৭ দিনের জন্য প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের আগ্রহ আর প্রদর্শনীতে দর্শকদের ভীড় দেখে আমরা প্রদর্শনীর সময় ৭ দিনের জায়গায় ১০ দিন করেছিলাম। তারপরেও অনেকের অভিযোগ যে আরও আরও অনেক বড় জায়গা নিয়ে ও বেশী সময় নিয়ে এটা করা উচিত। আমার ইচ্ছা এবার দেশে কিরে গিয়ে চীনের ১লা অক্টোবর জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আমি "আমার চোখে চীন" এই শিরোনামে একটি প্রদর্শণী করার আগ্রহ প্রকাশ করছি। এর মধ্যে আমার সবচেয়ে বেশী ভাল ছবি এসেছে, গত বছর ঠিক এই সময় আমি এসেছিলাম তিব্বত অঞ্চলে।
প্রশ্নঃ কোন সালে আপনি তিব্বত গিয়েছিলেন?
উঃ ২০০৫ সালের জুলাই মাসে আমি তিব্বত গিয়েছিলাম। সেখানে ৫০ জন বিদেশী ফটোগ্রাফার এবং ৫০ জন চীনের ফটোগ্রাফার এই একশজন ফটোগ্রাফারের চোখে তিব্বত কেমন এই ভাবে আমাদের ছবি তুলতে হয়েছে। এবং আমরা অনেক দিন ছিলাম ওখানে। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা যেটা আমরা এয়ারপোর্টে এসেছি এবং এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে আসার পরে আমরা অনুভব করি আমরা তিন জন বন্ধু এর মধ্যে একজন ছিল ইতালির। আরেকজন ছিলেন ফ্রান্সের এবং আমি এই তিনজন ছিলাম ঘনিষ্ঠ। আমরা তিন জন যখন এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে আসলাম তখন আমাদের মাথা ঝিমঝিম করছে। আমি যখন আমার বন্ধুদেরকে বলছি যে, আমার মাথায় যেন কেমন লাগছে ওরা বলছে আমাদেরও ও রকম লাগছে কারণ অনেক দীর্ঘ সময় জার্নি করে এসেছি সে কারণে হতে পারে। গাড়ীতে গিয়ে বসলাম। ওখান থেকে হোটেল পর্যন্ত যেতে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগেছে। তখন দেখলাম মাথা ব্যথা নেই। হোটেলে যাবার পর আবার মাথা ব্যথা শুরু হল। আমাদের সঙ্গে ডাক্তার ছিল। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করার পর ডাক্তার আমাদের বারণ করলেন , যাতে আমরা যেন ঘুমের ওঘুধ না খাই। কিন্তু মাথার ব্যথা সাড়ছে না। খুব কষ্ট করেছি উচ্চতার কারণে। কিন্তু সেটা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। পরের দিন সকাল বেলা ডাক্তার আসলো আমার রুমে , সে আমার জ্যাকেটের পকেটে ছোট্ট একটা সিলিন্ডার রেখে দিলো , যেটা ছোট কোকের বোতলের মত। তার সঙ্গে একটা পাইপ লাগিয়ে নাকে ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন যে, এটা কিছুক্ষণ রাখলেই ঠিক হয়ে যাবে। বুঝলাম যে ওটা অক্সিজেনের বোতল এবং ওটা নিয়েই ব্রেকফাষ্ট করতে যেতে বললেন।নীচে এসে দেখি আমাদের দলে যারা ছিল প্রত্যেকের নাকে একটি করে পাইপ লাগানো।
প্রশ্নঃ পরের কয়েক দিনও কি ব্যথা লেগেছে?
উঃ না আর লাগে নি। প্রথম দিনই শুধু ঘন্টা খানেকের জন্য অক্সিজেন ব্যবহার করেছি। কারণ আমরা যে সিটিতে ছিলাম সেটা ছিল সী লেভেল থেকে তিন হাজার ৭শ মিটার উপরে।
প্রশ্নঃ সেটা কি লাসা?
উঃ হ্যাঁ লাসা। তারপরে লাসা থেকে আমরা অন্যান্য সিটিতে গিয়েছি। যে সব সিটি লাসা থেকে আরো ৫৪০০ মিটার ওপরে। আমরা এনজয় করেছি তখন।
প্রশ্নঃ নিশ্চয় এবার এই বিপদের সফর আপনার জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে , তাই না?
উঃ অবশ্যই। এবং আরো একটু ভালো লাগলো গত মাসে আমি যখন আমার দেশে বসে একটি সংবাদ পড়ছিলাম পত্রিকাতে তখন দেখলাম যে তিব্বতের সঙ্গে পেইচিংয়ের রেল যোগাযোগ চালু হয়েছে। এটা আমাকে আরো উত্সাহিত করেছে এবং আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেছি যে আমরা ভবিষ্যতে দল বেধে বাংলাদেশ থেকে তিব্বত হয়ে পেইচিং আসতে পারবো অল্প পয়সায় অনেক জায়গা দেখতে দেখতে।
প্রশ্নঃ তিব্বতে কোন কোন ছবি আপনার সবচে' প্রিয় আর তিব্বতের কি কি ঘটনা আপনার মনে ছাপ ফেলেছে?
উঃ সব ঘটনা আর সব ছবিই আলোকচিত্র শিল্পীর চোখে সমান। ওখানকার প্রত্যেকটা ছবিই আমার মুখস্ত হয়ে আছে। মানুষের জনজীবনের ছবিই আমার বেশী ভালো লেগেছে। ল্যান্ডস্কেপ যেটা সেটাও ভালো লেগেছে। এখানে পশু-পাখী, ঘর-বাড়ি মানুষের আন্তরিকতা কিছুই ভুলবো না। শুধু তিব্বত কেন? এই জিনিসটা আমি গোটা চীনেই দেখলাম মানুষের ভেতর যে আন্তর্জাতিকতা এটা এলাকা ভাগ করার মত না। চীনের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম যে অঞ্চলেই , যাই সব জায়গার মানুষের মনে যে আন্তরিকতা তা আমার কাছে সমান মনে হয়েছে। আরো ভালো লাগে যে চীনের প্রতিটা মানুষ যারা বয়স্ক তাদেরকে যে ভাবে সম্মান করে এবং ছোটদের যে ভাবে স্নেহ করে তা আমার ভালো লেগেছে। বাসে উঠলে পড়ে দেখি একজন বয়স্ক বাসে উঠলে একজন যুবক দাঁড়িয়ে তাকে বসতে দিচ্ছে এবং পাতাল রেলে যখন ঘুরলাম সেখানেও আমি এ জিনিসটা লক্ষ্য করেছি। বেহাই, কোয়াং চৌ, হংকং, তিব্বতসহ সব জায়গায় দেখেছি।
প্রশ্নঃ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
উঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।
|