কিছু দিন আগে বাংলাদেশ-চীন সংস্কৃতি ও গণ সংযোগ কেন্দ্রের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট বেনু পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে চীন সফর করেছেন। তাঁরা বিশেষ করে চীনের ওয়েফাং আন্তর্জাতিক ঘূড়ি উত্সবে অংশ নেয়ার জন্য এসেছেন। পেইচিং সফরকালে বাংলা বিভাগের প্রবীন কর্মী শি চিং উ তাঁর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
শিঃ বেনু সাহেব আমাদের স্টুডিওতে আসার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবার আপনি কোন তারিখে পেইচিং এসেছেন?
উঃ আমরা ১৭ তারিখ এসেছি।
শিঃ কয়জনকে নিয়ে এবার আপনি এসেছেন?
উঃ আমাদের দলে আমি ছাড়াও আরো ৪জন আছেন। তারা হচ্ছেন জহিরুল হক, মাখন, মোশাররফ হোসেন, আলাউদ্দিন।
শিঃ কিসের উদ্দেশ্যে এবার চীন সফরে এসেছেন?
উঃ আমরা যাচ্ছি ওয়েফাং আন্তর্জাতিক ঘূড়ি উত্সবে। এর আয়োজক বিশ্ব ঘূড়ি ফেডারেশন এবং ওখানে আরেকটি কমিটি যার মধ্যে চীন, আমেরিকা , জাপান ইত্যাদিসহ কয়েকটি দেশ রয়েছে।
শিঃ এই ঘূড়ি আন্দোলনের প্রচলন সম্পর্কে আমাদের কিছু বলবেন কি?
উঃ ভালোই বলেছেন। এখন যে পর্যায়ে আমাদের দেশে ঘূড়ির চর্চা হচ্ছে তাকে একটি আন্দোলনই বলা যায়। তার কারণ হলো আমাদের পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো বিশেষভাবে এর কাভারেজ দিচ্ছে এবং খুব জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে আর বিশেষভাবে বাংলাদেশের ঘূড়ি ফেডারেশন সারা দেশে এর ওপর ওয়ার্কশপ এবং মেলা করে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছে । এই প্রশ্নে একটা সাধারণ আগ্রহও সারাদেশে তৈরী হয়েছে এবং আমাদের ওখানে প্রতিবছর এখন অনেক এলাকায় এলাকায় ঘূড়ি উত্সব এবং মেলা হচ্ছে।
শিঃ এই ক্ষেত্রে আমাদের দু'দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা সম্পর্কে আপনি কিছু বলুন।
উঃ এটাতো একটা নির্দোষ আনন্দের ব্যাপার, তো সেই প্রশ্নে আমি অকপটে স্বীকার করি যে, প্রশ্নে চীনের ভূমিকা ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য। ৫/৬ বছর আগে যখন তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে আমি একটি ঘূড়ি উড়তে দেখি্ এটা আমার কাছে প্রথমে ঘূড়ি মনে হয় নি। মনে হয়েছে একটি পাখি। আমি অনেক দূর থেকে যখন হেটে হেটে আসছিলাম, আমি খুব মুগ্ধভাবে লক্ষ্য করছিলাম যে এটা কোথাও দূরেও যাচ্ছে না, নামছেও না। আমার মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। একটু পরেই আমি উত্তর পেলাম যে , এটা একটা ঘূড়ি এবং তখন থেকে আমি খুবই আগ্রহী চীনা ঘূড়ি সম্পর্কে এবং আমি চীনা ঘূড়ি এবং ঘূড়ি তৈরীর প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির উপকরণ আমি বরাবরই চীন থেকে নিচ্ছি এবং ওগুলো দিয়ে আমি বাংলাদেশে আমাদের প্রচলিত অনেক বছরের যে, ঘূড়ির ডিজাইন চলছিল সেগুলোকে আমরা সমন্বিত করে আরেকটু বিকশিত করে আমরা আধুনিক ঘূড়ি তৈরী করছি এবং এগুলো মানুষের জনপ্রিয় এবং দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং আগ্রহ তৈরী হয়েছে যে এই ঘূড়ি দেখতে সুন্দর এবং উড়ে ভালো। সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো যে, এটা কাপড় এবং কার্বন রড, তারপরে আপনার পলিভিনাইল রড এবং গ্লাস ফাইবার ইত্যাদি দিয়ে তৈরী হয় এবং আরো এক্সেসরিজ দিয়ে তৈরী তাতে যে কোন সময় গুটিয়ে নিয়ে দূরে কোথাও বড় বড় ঘূড়ি নিয়ে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা তৈরী করতাম বাঁশের কাঠি, কাগজ এবং আঠা দিয়ে । যে গুলি পরিবহনে অসুবিধা এবং বেশি দিন টেকসই হতো না। এগুলি বছর বছর ধরে আমরা ব্যবহার করতে পারি। এবং উপকরণগুলোও খুব সহজে চীন থেকে সংগ্রহ করতে পারছি।
শিঃ বাংদেশ চীন সংস্কৃতি ও গণ সংযোগ কেন্দ্রের সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহু বছর ধরে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্যে আপনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। এ সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলেন।
উঃ আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে চীন একটি অনিবার্য অস্তিত্ব। বন্ধু হিসেবে , আমাদের ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসাবে আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তির পার্টনার হিসাবে, আমাদের সামরিক শক্তির প্রশ্নে বড় সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষণের এটা আমরা জানি। তো সে ক্ষেত্রে চীনের বন্ধুত্বতো আমাদের জন্য অবশ্যম্ভাবী ও অপরিহার্য। এ বন্ধুত্বকে আমাদের অবহেলা করার বা ছোট করে দেখার কিছু নেই। সে জন্য আমরা মনে প্রাণে চীনা বন্ধুত্ব কামরা করি এবং তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি এবং সক্রিয় আছি।
শিঃ এবার নিয়ে আপনি কতবার চীন সফরে এসেছেন?
উঃ খুব নির্ভুলভাবে বলা না গেলেও ৭/৮ বার কম পক্ষে।
শিঃ তাহলে এবার আপনি পেইচিংয়ে কয়দিন ছিলেন? আগেকার তুলনায় আপনার নতুন কি কি ধারণা আছে?
উঃ আমি গত ১৭/১৮ বছর থেকে আসছি। মৌলিক অনেক পরিবর্তণ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সারা বিশ্ববাসী জানে চীনের বিজ্ঞান প্রযুক্তি। চীন মহাবিশ্ব জয় করেছে কিছুদিন আগে এবং কয়েকটি দেশের মধ্যে চীন একটি। তারপরে তার সকল কিছু যে একটা অসম্ভব প্রবৃদ্ধি ও উন্নতি এটা পৃথিবীর সবাই জানে, আমরাও জানি। সেহেতু চীনের পাশে থেকে, সাথে থেকে আমাদের অগ্রগতি , আমাদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগিতা নিতে পারলে আমাদের খুবই ভালো হবে এই কথা আমরা খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
শিঃ আমি শুনেছি আন্তর্জাতিক ঘূড়ি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্যে কালকে আপনি পেইচিং থেকে ওয়েফাংয়ে যাচ্ছেন। কাজেই এই সুযোগে আমি আপনার শুভ যাত্রা কামনা করছি। আমাদের স্টুডিওতে আসার জন্য আপনাকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। শি চি উ মহাশয় , আপনি আমাদের অনেক পুরানো বন্ধু এবং বাংলাদেশ চীন মৈত্রীর প্রশ্নে আপনারও অনেক বড় ভূমিকা আছে । এটা আমরা সবসময়ই স্মরণ করি। ধন্যবাদ।
|