**চীনের মহাপ্রাচির তৈরি করতে কত দিন সময় লেগেছে এবং কোন রাজার আমলে এটা তৈরী হয়েছিল, এর বৈশিষ্ট কি? চীনের মহাপ্রাচীর কি চীনকে চারদিক থেকেই বেষ্টন করে আছে? এর দৈর্ঘ্য কত?
প্রশ্নকর্তাঃ বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ঈশ্বর বরুয়া বেতার শ্রোতা ক্লাবের মোঃ আজিজুর রহমান, ময়মনসিংহ জেলার মুজাখালীর সীমান্ত বন্ধু কুদ্রত উল্লাহ মন্ডল , স্মৃতি লিসনার্স ক্লাবের মোঃ নেয়ামুল হক মন্ডল, নারায়নগঞ্জ জেলার মুরাপারার রূপগঞ্জ নেশামুক্ত বেতার শ্রোতা সংঘের মোসাম্মত্ সুস্মিতা হাসান, ঝিনাইদহ জেলার ভ্রাতৃত্ব রেডিও লিসেনার্স ক্লাবের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রিজু, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার মোঃ লিটু মিয়া, রংপুর জেলার স্টেশন রোডের গ্লোবাল ডিএক্স ক্লাবের চেয়ারম্যান শামিম আহমেদ সন্ঞ্জু, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার গোবিন্দপুরের মাঝিড়া গ্রামের মোঃ মিথুন শেখ
উঃ বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের অন্যতম বলে খ্যাত মহা-প্রাচীর হচ্ছে বিশ্বের এমন একটি প্রাচীন সামরিক প্রতিরক্ষা প্রকল্প যার নির্মানের ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ এবং আকার সবচেয়ে বিরাট। এই সুমহান প্রাচীর চীনের ভূখন্ডে ৭ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী বিস্তৃত। ১৯৮৭ সালে মহা প্রাচীর বিশ্ব উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত হয় ।
মহা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ খৃষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে শুরু হয়। তখন মধ্য চীনের প্রশাসন উত্তরাঞ্চলের জাতির আক্রমন প্রতিরোধ করার জন্যে দেওয়াল দিয়ে সীমান্তে নির্মিত প্রহরা টাওয়ারগুলোকে ঘেরাও করে। চীনের বসন্ত ও শরত যুগ আর যুদ্ধমান রাজ্যসমূহের যুগে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অসংখ্যবার লড়াই হয়। বড় রাজ্যগুলোর মধ্যে পরষ্পরের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে সীমান্তের নিকটবর্তী পাহাড়ে মহা প্রাচীরের নির্মাণ শুরু হয়। খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা চীনকে একত্রিত করার পর আগের ছোট ছোট রাজ্যের নির্মিত মহা প্রাচীর সংযুক্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে আঁকাবাঁকা পাহাড়গুলোতে তৈরী এই প্রাচীর উত্তর সীমান্তের প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়। যাতে উত্তর দিকের মঙ্গোলিয়ার বিস্তীর্ণ তৃণভূমির পশুপালকদের আক্রমন প্রতিরোধ করা যায়। ছিন রাজ আমলে মহা প্রাচীরের দৈর্ঘ্য ছিল ৫০০০ কিলোমিটার। ছিন রাজবংশের পর হান রাজবংশ মহা-প্রাচীরের দৈর্ঘ্য আরও ১০ হাজার কিলোমিটার বাড়িয়ে দেয় । দু' হাজারাধিক বছর ধরে চীনের বিভিন্ন সময়পর্বের প্রশাসন ভিন্ন মাত্রায় মহা-প্রাচীর নির্মাণ করে। বিভিন্ন রাজবংশের নির্মিত প্রাচীর এক সঙ্গে সংযুক্ত হলে মোট দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী হতে পারে।তার মানে এই দৈর্ঘ্য পৃথিবীকে এক বার বেষ্টন করতে পারে।
মহা-প্রাচীর আঁকাবাঁকা আর উঁচু-নিচু পাহাড়ে বিস্তৃত। প্রাচীরের নিচে খাড়া পাহাড় । প্রাচীর আর পাহাড় পরষ্পরের সঙ্গে সংযোগ হয়।প্রাচীন কালের সামরিক অবস্থায় এই মহাপ্রাচীর অতিক্রম করার সম্ভাবনা প্রায় ছিল না। প্রাচীর সাধারণত বড় বড় ইট আর লম্বা পাথর দিয়ে তৈরী হয়। ইট আর পাথরের ভিতরে হলুদ মাটি আর পাথরের টুকরা ভরে দেয়া হয়। প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় দশ মিটার। তার প্রস্থ৪ থেকে ৫ মিটার। যাতে যুদ্ধের সময় খাদ্য আর অস্ত্র সরবরাহের সুবিধা হয়। বর্তমানে সামরিক ব্যবস্থা হিসেবে মহাপ্রাচীরের এই ব্যবহারিক ভূমিকা আর নেই। কিন্তু তার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থাপত্য সুমহান। মহাপ্রাচীর দৃশ্যতঃ খুব মজবুত একটি স্থাপত্য। দূর থেকে দেখলে এই সুমহান মহাপ্রাচীরকে একটি উড্ডীয়নমান ড্রাগনের মতো চীনের ভূখন্ডে বিস্তৃত হয়। নিকট থেকে দেখলে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সঙ্গে মিশে যাওয়া এই সুমহান মহাপ্রাচীর একটি রহস্যময় চিত্রের মতো।
মহাপ্রাচীরের ঐতিহাসিক আর সাংস্কৃতিক তাত্পর্য এবং পর্যটন মূল্য আছে। চীনে একটি প্রবাদ আছে: ' মহা প্রাচীর দেখতে না গেলে বীর পুরুষ হবে না'। দেশী-বিদেশী পযর্টকরা মহাপ্রাচীরে উঠার পর খুব গর্ব বোধ করেন। চীনে ভ্রমণ করতে আসা অনেক বিদেশী শীর্ষ নেতাও তার ব্যতিক্রম নন। এখন মহাপ্রাচীরের কয়েকটি অংশ অপেক্ষাকৃতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন পেইচিংএর বিখ্যাত বাতালিং, সিমাথাই, মুথিয়েনইউ, মহাপ্রাচীরের পূর্ব দিকের সানহাই কোয়ানএবং মহাপ্রাচীরের সর্ব পশ্চিম দিকে গানসু প্রদেশের চিয়াইউ কোয়ান প্রভৃতি। এ সব জায়গা চীনের বিখ্যাত পর্যটন স্থান। সারা বছর এ সব জায়গায় কেবল পর্যটকদের গাদাগাদি ভীড়। ১৯৮৭ সালে মহাপ্রাচীর 'চীনা জাতির প্রতীক' হিসেবে বিশ্ব উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত হয়।
|