চীনাদের চোখে রাশিয়ার ইভানোভো স্টাসোভার আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমি হচ্ছে একটি বিশেষ কল্যাণমূলক সংস্থা। "চীন ও রাশিয়ার মৈত্রী ভ্রমণ" নামক যৌথ সাক্ষাত্কার দল ২৮ আগস্ট এই আন্তর্জাতিক স্কুলে এসে সাক্ষাত্কার নিয়েছে।
প্রধান শিক্ষা ভবনের জাদুঘরে সংবাদদাতারা অনেক মূল্যবান ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ এবং সাদা-কালো আলোকচিত্র দেখেছেন। এর মধ্যে বহু চীনা ব্যক্তিদের ছবি রয়েছে। জাদুঘরের পরিচালক কুজনেসোভা সাক্ষাত্কার দলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
"সবাই জানেন, আমাদের এই স্কুল হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমি। আগে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাও এই ধরনের কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইভানোভো-স্টাসোভা শিশু একাডেমিতে ১১৭ জন চীনা শিশু লেখাপড়া করেছেন।"
ইভানোভো-স্টাসোভো আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমি হচ্ছে মানবজাতির ইতিহাসে একটি বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনে হয় ভবিষ্যতে এই ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর হবে না। এই সংস্থা ১৯৩৩ সালের ১ মে রাশিয়ার উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুল বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট এবং শহীদদের বংশধরগণকে শিক্ষাদান এবং প্রতিপালন করার সংস্থা। অনেক দেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের ছেলেমেয়ে এখানে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। কয় দশক বছর ধরে এই স্কুল সারা বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশাধিক দেশের দু'হাজারেরও বেশি শিশুকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর মধ্যে চীনা শিশুদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অসম্পুর্ণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী , পরপর প্রায় ১০০ জনেরও বেশি চীনা শিশু এখানে লেখাপড়া করেছেন। তাদের মধ্যে মাও জে তুং, লিউ শাও ছি, চু দে এবং লিন পিয়াও প্রমুখ চীনের প্রয়াত নেতাদের ছেলেমেয়েও ছিলেন।
জানা গেছে, ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমির ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেখানে লেখাপড়া করেছেন, এমন বিশাধিক জন চীনা ছাত্রছাত্রীরা আবার এখানে ফিরে এসেছেন। পরিতাপের ব্যাপার, তখন চীনে সার্স প্রকোপ চলছিল, ফলে যারা চীন থেকে উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য এসেছেন, তারা কেবল গাড়ির ভিতরে বসে উদযাপনী অনুষ্ঠানের আনন্দময় পরিবেশ উপভোগ করতে চেয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমির শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এই খবর জানার পর সক্রিয়ভাবে এসে তাঁদের সঙ্গে আলিঙ্গন এবং চুম্বন করলেন। সেই সময় মৈত্রী সার্সের ভয়কে পরাজিত করেছে।
৭০ বছর সময় পার হয়েছে। অতীত কালের কথা ইতিহাস হয়েছে। কিন্তু ইভানোভো স্টাসোভা আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমি আজ পর্যন্ত রয়েছে এবং ক্রমে ক্রমে একটি আন্তর্জাতিক কল্যাণ স্কুলে পরিণত হয়েছে। যদিও স্কুলের আর্থিক বরাদ্দ কম। ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন। কিন্তু এখানকার বাচ্চারা আর শিক্ষকরা সবই সুখী জীবন কাটাচ্ছেন। অধ্যক্ষ খারিনা শেবোছেকো "চীন ও রাশিয়ার মৈত্রী ভ্রমণ" দলের সংবাদদাতাদেরকে একটি প্রশংসা পত্র দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব খুশি। কারণ আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকে ১০০ জনেরও বেশি চীনা শিশু এখানে বসবাস ও লেখাপড়া করেছেন। ইভানোভোর বহু জাতীয় পরিবারের চীনা ছেলেমেয়ের উপর গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা আছে। আমরা চীনা ছাত্রছাত্রীদের বীরের মতো নিয়তি এবং লেখাপড়া ও শ্রমে তাঁদের অর্জিত সাফল্যের জন্য গর্ববোধ করি।"
বিদায়ের সময় সাক্ষাত্কার দলের সংবাদদাতারা আন্তর্জাতিক শিশু একাডেমির বাচ্চাদের সাথে "বন্ধুকে খুঁজো" এবং "সেঁতু পার হওয়া" নামক রাশিয়ার ঐতিহ্যিক খেলা এবং "বাজপাখি মুরগীকে ধরা" নামক চীনের ঐতিহ্যিক খেলা খেলেছেন। সংগীত এবং হাসাহাসির আওয়াজ হলের চার দিকে ছড়িয়ে পরে। যদিও এখানকার বাচ্চারা "চীন ও রাশিয়ার জাতীয় বর্ষের" আসল অর্থ সঠিকভাবে বুঝে না। আমরাও বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি অধিকার করি, তবু সবচেয়ে সরল এবং আন্তরিক মৈত্রী এখানে ভালোভাবে মিশেছে।
|