প্রত্যাশা হুইল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া স্কুল শাখার প্রিন্সিপাল মিসেস সাহা পেইচিংস্থ ভারতীয় দূতাবাসে স্বামীর সঙ্গে কয়েক বছর কাটিয়েছেন।
প্রশ্নঃ এখানে কিভাবে যুক্ত হলেন?
উঃ এখানে আমি আসলে ভারতীয় দূতাবাস স্কুলে দু'বছর ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলাম। এক বছর ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলাম। তখনই মাইকেল, যিনি এখানের পরিচালক , ওনার ছেলে ভারতীয় স্কুলে পড়তো। সেই থেকে আমাকে উনি চেনেন।
প্রশ্নঃ এখানে এসে কেমন লাগছে?
উঃ এখানে এসে একদম অন্য রকম লাগছে। আসলে আমি কোন দিন স্কুল সেটআপ করি নি। অনেক বছরের , প্রায় ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা আছে শিক্ষকতার।
প্রশ্নঃ একটা নতুন ধরনের স্কুল স্থাপন করতে গিয়ে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা হলো। আমাদের একটু বলবেন কি?
উঃ অভিজ্ঞতাতো ভালই হয়েছে। ওনারা এই বিদেশীদের সঙ্গে প্রথম কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে ওনাদের দিক থেকেও আমাদের দিক থেকেও বোঝাপড়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
প্রশ্নঃ এখানে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কি রকম?
উঃ ৮টি দেশের শিক্ষার্থী আছে। নেদারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, পেরু, হংকং চাইনিস, পোল্যান্ড, মালায়শিয়া ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ এখানে আপনাদের স্কুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি? যাতে অভিভাবাকরা তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করবেন।
উঃ এখানকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে টেনিস। আইতসপি বলুন, রেব বলুন সব বড় বড় স্কুল থেকে আসছে টেনিস খেলার জন্য। তারা শনি, রোববার যতটুকু সময় পায় , সেই সময় আসছে টেনিস খেলার জন্য। আমরা এমন কারিকুলাম রেখেছি যে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা পড়াশোনা করে। ইংরেজী, অংক , বিজ্ঞান ইত্যাদি। দুপুর ১টা থেকে ৩টা টেনিস ক্লাস। ৩ বছর বয়সের বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। ৪ বছর থেকে টেনিস ক্লাস রয়েছে। সুতরাং যদি কোন টেনিস ট্যালেন্টেড থাকে তখন তারা ভাল করবে। টেনিস ছাড়াও সকার খেলে, আকার আমার ক্লাস আছে। গান শোনা ব্যালে নাচ, চাইনিজ নাচ আছে। সুতরাং ১টা থেকে ৩টা এক ঘন্টা টেনিস খেলে। অন্য এক ঘন্টা অন্যান্য কারিকুলাম শিখে।
প্রশ্নঃ দূতাবাসের জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। যদি মজার কোন অভিজ্ঞতা আমাদের বলেন।
উঃ একটা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে রাজিব গান্ধী চীন সফরে এসেছিলেন। তখন উনি ও উনার স্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল। তখন উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন , আচ্ছা তোমরা চীনা খাবার খাও কিভাবে? কারণ আমাদের অনেকেই চীনা খাবার খায় না, ভেজিটেরিয়ান। তখন আমি বলেছিলাম , একজন মন্ত্রী এসে বলেছিলেন, আমি আটার রুটি খাব। তখন চীনে আটা পাওয়া যেত না। তখন আমি ময়দার রুটি তৈরী করে দিলাম। তিনি বললেন, রুটি এত সাদা কেন? তখন আমি বললাম, চায়নার আটা এ রকমই হয়, সাদা।
প্রশ্নঃ যদি নারী হিসেবে প্রশ্ন করি। চীনে আপনার বহুবার আসা-যাওয়া হয়েছে । এ সময়ে অনেক পরিবর্তন দেখেছেন। আপনি কি এমন কোন পরিবর্তন দেখেছেন, যা দেখে আপনি আশ্চর্য হয়েছেন।
উঃ হ্যা, চায়না আসার আগে আমার স্বামী বাংলাদেশে ছিলেন। ওখান থেকে যখন শুনলেন আমরা চায়না যাচ্ছি, তখন আমার মনে হয় কোন প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন। আমার স্বামীও তখন চায়না এসেছিলেন দেখতে। তিনি গিয়ে আমাদের বললেন, তোমরা গিয়ে চায়না চিনতেই পারবে না। তখন আমি ছেলেকে বললাম, বাবা যা বলছে তা হতেই পারে না। তারপর যখন আমরা বাংলাদেশ থেকে চায়নায় আসলাম, আশ্চর্য হলাম। এই ছিল আর এই হয়েছে বড় বড় বাড়ী ভবন।
প্রশ্নঃ সবচেয়ে কোন পরিবর্তন আপনাকে আকর্ষণ করেছে?
উঃ বিশেষ করে বড় বড় বাড়ি। ঝকঝক তকতকে। আগেকার দিনে এত বড় বাড়ি ছিল না।
প্রশ্নঃ চীনা নারীদের আপনি কেমন দেখলেন?
উঃ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তখনকার নারীরা শুধু নীল রংয়ের মাও স্যুট পড়তেন। আর যখন ১৯৮৭ সাল চীন আসছি, তখন হাইহিল পড়তে শুরু করেছে। একটু একটু ছোট স্কার্ট পড়তে শুরু হয়েছে। কিন্তু কোন ম্যাচিং ছিল না। ২০০১ সালে এসে দেখলাম সম্পূর্ণ অন্য রকম।
প্রশ্নঃ ৯০ দশকের প্রথম দিকে আপনি যখন পেইচিং ছেড়ে চলে যান, তখন সবচেয়ে বেশি কি অসুবিধা অনুভব করতেন?
উঃ তখন সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হতো আমার ছেলেকে নিয়ে। ওর কোন প্যান্ট ও জুতো পেতাম না। তখন বসে থাকতাম। যখন আমার স্বামী, হংকং যাবেন ও ছেলের জন্য জুতো , প্যান্ট নিয়ে আসবেন। আর চিনি, তেল পাওয়া যেত না।
প্রশ্নঃ এখন?
উঃ এখনতো সবকিছু পাওয়া যায়। ভারতীয় মশলাও পাওয়া যায়। আমি একা বলে সাধারণত রান্না করি না।
প্রশ্নঃ এখন প্রিন্সিপাল বা একজন মা হিসেবে আপনার স্বপ্নের কথা বলুন। আপনার কি স্বপ্ন আছে?
উঃ স্বপ্ন এখন এই স্কুলটা হাইস্কুল হবে। আস্তে আস্তে অনেক বাচ্চা হবে। অন্তত দেড়, দু'হাজার। সব টেনিস সেন্টার মিলিয়ে ।
প্রশ্নঃ টেনিসটা তো নতুন প্রজন্মের একটি বিষয়।
উঃ একদম অন্যরকম।
প্রশ্নঃ আজ ছাত্রছাত্রীকে উপদেশ দিতে বললে আপনি কি বলবেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে কি ধরণের আচরণ করবে ইত্যাদি।
উঃ লোককে সম্মান কর। জাতে ভেদাভেদ না ধরতে। মানুষ হিসেবে কাউকে ছোট জ্ঞান না করা যায়। আর পড়াশোনার ব্যাপারে বলব, শেষ সময়ের জন্য পড়াশোনার ফেলে না রাখা।
|