v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-07-26 19:39:40    
ভালোবাসার সীমান নেই

cri
    আমার একজন বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করে । একদিন সে আমাকে বলে যে , এক রাতে সে বাসায় যাওয়ার সময় ডাকাত তার টাকাপয়সা কেড়ে নিতে চায় । সে তখন চীনের কুংফুয়ের কৌশল দেখিয়েছে এবং সে লোক ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় । বিদেশিদের চোখে চীনের কুংফু খুব চমত্কার । অনেক বিদেশি বন্ধু বলেছে যে , চীনে এসে কিছু কুংফু শিখা হল তাদের স্বপ্ন । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে কুংফু সম্বন্ধে মার্কিন মেয়ে লোরীর গল্প বলবো ।

    লোরী যুক্তরাষ্ট্র জন্মগ্রহণ করেছে এবং সেখানে বড় হয়েছে । তিনি চীনের কুংফু খুব পছন্দ করেন । লোরী সাধারণ মার্কিন যুবকের মত চীনা ছবির কিছু সহজ কুংফু শিখতে চান না , তিনি আসল চীনা কুংফু শিখতে চান । এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি সত্যি চীনে এসেছেন । হয়ত অনেক শ্রোতা বন্ধু জানেনর যে মধ্য চীনের হো নান প্রদেশের শাও লি মন্দিরের চীনা কুংফু অনেক ভালো । লোরী ঠিক সেখানে গিয়েছেন ।

    লোরী খুব ভালো একজন মেয়ে , কঠিন কিছুকে তার ভয় লাগে না , আস্তে আস্তে লোরী শাও লি মন্দিরে খুব ভালো কুংফু শিখেছেন । এই পর্যন্ত শ্রোতা বন্ধুরা হয়ত ভাববেন এবার লোরীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে , তার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়া সময় হয়েছে । তবে লোরী কুংফু শেখার পর জন্মভূমিতে ফিরে যান নি , কারণ কুংফুর মাধ্যমে তিনি মনের ভালোবাসা খুঁজে বের করেছেন ।

    তাঁর প্রেমিকের নাম হল ওয়াং সিন ভেং । তিনি হলেন লোরীর কুংফু শিক্ষক । ওয়াং সিন ভেং বলেছেন , লোরী কুংফু পছন্দ করেন , তাঁর সঙ্গে আলাপ করার মাধ্যমে ওয়াং সিন ভেং জেনেছেন যে , তাদের শখ একই , কুংফু তাদের অভিন্ন ভাষা হয়েছে । দিনে দিনে দু'জনের মধ্যে ভালোবাস হয়েছে । যদিও প্রথমে তাদের মনোভাব বিনিময়ের সমস্যা হয় , কারণ তাদের ভাষা আলাদা । তবে ভালোবাসার জন্য এসব বাধা কিছুই না । দু'জনের ভালোবাসা দিন দিন গভীর হয়েছে , কিন্তু ওয়াং সিন ভেংয়ের বাবা মার উত্কন্ঠা আছে । তাঁরা মনে করেন লোরী যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরের লোক , কিন্তু ওয়াং সিন ভেংয়ের বাসা হো নান প্রদেশের একটি গ্রামে । চীনের রীতিনিতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আলাদা , তাঁরা জানেন না যে , লোরী চীনের জীবনের সঙ্গে খাপ খাবে কিনা ।

    চীনে একটি কথা আছে : সময় সব প্রমাণ করতে পারে । লোরী সত্যি চীন এবং কুংফু পছন্দ করে , তিনি ওয়াং সিন ভেংয়ের বাবা মাকে খুব ভালোবাসেন । বাসার সব কাজ তিনি ভালোভাবে করতে পারেন । এই অবস্থা দেখে আস্তে আস্তে তারা লোরীকে পছন্দ করেছেন । অবশেষে লোরী ও ওয়াং সিন ভেংয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান চীনের ঐতিহ্যিক রীতিনিতি অনুযায়ী গ্রামে আয়োজিত হয়েছে । সেদিন গ্রামের সব অধিবাসিরা তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এবং অনেক সাহায্য দিয়েছেন ।

    বিয়ের পর দু'জনের জীবন আরো সুখী হয়েছে । যদিও মাঝে মাঝে কিছু ছোটখাট ঝগড়া হয় , তবে ওয়াং সিন ভেংয়ের মা সবসময় লোরীর পক্ষে থাকেন । তিনি বলেছেন , লোরী একজন মেয়ে নিজের বাসা ত্যাগ করে চীনে এসেছে , আমাদের তাকে বেশি যত্ন নিতে হবে , এবং তাকে কোনো কষ্ট দেয়া যাবে না । লোরী বলেছেন , যদিও ভাষার বাধা আছে । তবে আমি জানি মা আমার কথা বোঝেন । ঝগড়া হলে মা সমসময় সহজ ভাষায় আমাকে বলেন , ওয়াং সিন ভেং ভালো না , লোরী ভালো । এতে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি ।

    এখন লোরী গ্রামের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইতে নিয়েছেন । তিনি গ্রামের অন্য স্ত্রীর মত সব কাজ করতে পারেন । যাতে কেউ মনে না করেন লোরী একজন বিদেশী । নিজের স্ত্রীকে আরো ভালোভাবে যত্ন নেয়ার জন্য ওয়াং সিন ভেংও ইংরেজী ভাষা শিখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন । লোরী জানিয়েছেন , তাদের ভালোভাসা শুরু হওয়ার সময় ওয়াং সিন ভেং শুধু ডজন খানেক ইংরেজী শব্দ জানতেন । অন্য কিছুই বোঝেন না । ভাব প্রকাশের সময় ডিকশানারীর ওপর নির্ভর করতে হয় । তবে একসঙ্গে থাকার সময় বেশি হয়েছে বলে এখন আমাদের ভাব বিনিময়ের কোনো সমস্যা নেই , আমরা পরস্পরের কথা বুঝি ।

    কুংফুর মাধ্যমে লোরী ও ওয়াং সিন ভেংয়ের বিয়ে হয়েছে । তবে কুংফু চর্চা করা তাদের জীবনের প্রথম স্থানে রয়েছে । এখন লোরীর কুংফু স্বপ্ন আরোবড় হয়েছে । লোরী একটি কুংফু স্কুল খুলে চান । ওয়াং সিন ভেং আসলেও একজন কুংফু শিক্ষক , তিনিও মনে করেন স্কুল খুলতে বেশ ভালো হবে। স্বপ্ন থাকলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে । লোরী ও ওয়াং সিন ভেং নিজের বাসায় একটি কুংফু ক্লাস গঠন করেছেন । লোরী কুংফু শিখা থেকে কুংফু শিখাতে শুরু করেছেন । অনেক বিদেশি তাদের নাম শুনে তাদের বাড়িতে গিয়ে কুংফু শিখতে এসেছেন । লোরী তার ছাত্রছাত্রীদের পছন্দ করেন । ছাত্রছাত্রীদের কুংফু স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লোরী অনেক চেষ্টা করেছেন । যদিও এসব ছাত্রছাত্রীদের বেশি টাকা নেই । তবে তারা আমার ক্লাসে এসে কুংফু শিখেন এবং প্রতিদিন আমি দেখেছি তারা খুব মন দিয়ে কুংফু চর্চা করেন । তাদের অগ্রগতি অর্জিত হলে আমিও তাদের জন্য খুব আনন্দ বোধ করি । সুতরাং টাকা আমার জন্য বড় সমস্যা নয় , সবার একসঙ্গে কুংফু শিখা সবচেয়ে সুখের ব্যাপার ।

    লোরী ও ওয়াং সিন ভেংর জন্য কুংফু হল তাদের ভালোবাসার সেতু । তাদের গল্প থেকেও বুঝা যায় , দূরত্ব ছাপিয়ে ভালোবাসা হতে পারে , দেশের সীমানা ছাপিয়ে ভালোবাসা হতে পারে । আমরা এখনে আশা করি তাদের ভালোবাসা আরো গভীর হবে তারা আরো সুখী হবেন এবং তাদের কুংফু ক্লাসে আরো বেশি লোক যোগ দেবেন ।