প্রশ্নঃ চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীতে আপনি কি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন?
উঃ চীনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে। সব মিলিয়ে তিন মাস হলো এখানে এসেছি।
প্রশ্নঃ কতদিনের প্রোগ্রামে এসেছেন?
উঃ ন'মাসের ।
প্রশ্নঃ আপনি চীনা ভাষায় গবেষণা করছেন?
উঃ জ্বীনা, ইংরেজী ভাষায় গবেষণা করছি। তবে চলাফেরা বা জীবনযাপনের জন্যে চীনা ভাষা জানতে হয়।
প্রশ্নঃ আপনি কি একাডেমীর ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকেন?
উঃ জ্বী না। আমি বাইরে বাসা ভাড়া করেছি।
প্রশ্নঃ নিজের উদ্যোগেই ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করছেন?
উঃ জ্বী। বাস বা সাবওয়েতে আসা-যাওয়া করতে শিখেছি। কিছুটা হাত-পা নেড়ে হলেও গন্তব্যে পৌঁছুতে পারছি।
প্রশ্নঃ কখনও কোথাও পথ হারিয়েছিলেন?
উঃ এখনও পথ হারাই নি।
প্রশ্নঃ চীন এমন এক বিশাল সমুদ্র, যেখানে একটি শেকড়ও হারায় না। এর কারণ কি জানেন?
উঃ কারণ, চীনারা খুবই বন্ধুত্বপরায়ন। এবং তারা খুব সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। তাছাড়া আমি কোথাও যাবার সময় সে জায়গার নাম চীনা ভাষায় কাগজে লিখে নেই। কাউকে দেখালে তিনি আমাকে গন্তব্যে পৌঁছুতে আন্তরিকভাবে সাহায্য করেন। তাই আমি এখনও কোনো সমস্যায় পড়ি নি। এখানকার ট্যাক্সি ড্রাইভাররাও খুবই সহযোগিতাপরায়ণ।
প্রশ্নঃ আর কি কি সুবিধা এখানে পেলেন?
উঃ নতুন একটি দেশে এসেছি। নতুন রীতি-নীতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। নতুন সমাজের নিয়ম-কানুন জানছি। এটা একটা বিশাল সুবিধা। তা ছাড়া, বড় কথা হলো একাডেমিক দিক থেকে আমরা দেখি যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। এবং চীন একটি উদীয়মান শক্তি। সে হিসেবে চীনের প্রতি আমার আগ্রহ রয়েছে। আমাদের দেশে এখনও চীন দেশের ওপর স্পোশালিস্ঠ গড়ে ওঠেন নি। চীন নিয়ে খুব বেশী পড়াশুনা করেন নি। সে জন্যে এটি আমার জন্যে এক বড় সুযোগ যে, আমি বেইচিংয়ে এসে চীন সম্বন্ধে পড়াশুনা করছি এবং তাদের নীতি সম্বন্ধে জানতে পারছি।
প্রশ্নঃ আপনার একাডেমিক গবেষণার জন্যে কি রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন?
উঃ সহযোগিতা তো রয়েছেই। তবে একটা অসুবিধা হচ্ছে, এখানে বেশীর ভাগ বই, জার্নাল বা প্রবন্ধগুলো সব চীনা ভাষায়। তবে এগুলো খুবই সমৃদ্ধ। এগুলো আমি অনুবাদ করতে পারছি না, কারণ এখানে অনুবাদের খরচ অনেক। তাই সার সংক্ষেপটা শুনে নিচ্ছি এবং তার ভিত্তিতেই আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। এখানে ইংরেজী ভাষায় বই পাওয়াটা সহজ নয়।
প্রশ্নঃ আমি শুনেছি যে, চীনে একটি দ্বিভাষিক সরকারী ওয়েবসাইট আছে চীনা ও ইংরেজীতে। আপনি কখনো দেখেছেন?
উঃ আমি দেখেছি। ওখানে সরকারী নীতিমালা বিশদভাবে নেই। তা ছাড়া, কিছু আপডেট হয় নি। যেমন ২০০০ সালের সংস্করণ এখনো ওভাবেই আছে। পররাষ্ট্র বিষয়ে ২০০৫ সালে একটি বই অবশ্য বেরিয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রতিটি দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে এক থেকে দেড় পৃষ্ঠার মতো বর্ণনা আছে। বিশদ তথ্য নেই।
প্রশ্নঃ এ বিষয়ে আপনি একাডেমীর সঙ্গে আলাপ করেছেন?
উঃ জ্বী, করেছি। একটা সফটওয়্যার পেয়েছি, যার সাহায্যে চীনা থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করা যায়। অনুবাদ ভাল হয় না, তবে ওটা দিয়ে আমি আপাততঃ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রশ্নঃ চীনের পররাষ্ট্র-নীতি সম্বন্ধে আপনি কি কি জেনেছেন?
উঃ চীনের পররাষ্ট্র নীতির মূল ভিত্তিই হচ্ছে, পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব। দেখা গেছে যে, কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে চীন খুব সতর্কভাবে মন্তব্য করে। যেমন, ইরাক যুদ্ধের কথাই ধরা যাক। সেখানে চীন খুব শক্ত ভূমিকা নেয় নি। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর বেশী নজর দিচ্ছে। কারণ , তারা প্রথমে নিজেদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবার চেষ্টা করছে। একটা কথা আছে, চীন শান্তিপূর্ণভাবে , শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে উপরে ওঠছে। এবং এক সময় দেখা যাবে যে চীন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সে জন্যে কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে তারা নিজেদের জড়াতে রাজী নয়।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র নীতির তুলনা করতে বললে আপনি কি বলবেন?
উঃ তুলনা করা একটু মুশকিল। ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক দিকে বাংলাদেশ ছোট এবং চীন বড় রাষ্ট্র। বাংলাদেশ ভারত-পরিবেষ্টিত একটি রাষ্ট্র বলে তার পক্ষে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি বাস্তবায়ন করা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে বাংলাদেশও চীনের মতো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। সে জন্যে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রাষ্ট্রের বিশেষ করে পররাষ্ট্র নীতিগত বিপর্যয় ঘটে নি। এ দিক থেকে দু'দেশের একটি বিশাল মিল রয়েছে।
প্রশ্নঃ অন্যান্য ক্ষেত্রেও কি দু'দেশের মধ্যে আর কোনো মিল খুঁজে পেলেন?
উঃ আতিথেয়তার ক্ষেত্রে উভয় দেশের চমত্কার মিল আছে। বিদেশীদের প্রতি বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও বিশেষ অতিথিসুলভ আচরণ উভয় দেশের বৈশিষ্ট্য। ভাষাগত পার্থক্য ছাড়া সামাজিক দিক থেকে উভয়ের মিলই বেশী।
|