২৪ বছর বয়স্ক রুশ তরুণী কাটিশা উত্তর-পূর্ব চিনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের হোকাং শহরের একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে রুশ শিক্ষকের কাজ করছেন। এক বছর আগে একটি বিনিময় চুক্তির আওতায় তিনি রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অংগরাজ্য থেকে হোকাংয়ে এসেছেন । এখন কাটিশা কেমন করে জীবনযাপন করছেন ? সেই সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করছি আমি শি চিং উ ।
ডাগর নয়না কাটিশার । চুলের রং সোনালী । অপুর্ব সন্দরী । আমাদের সংবাদদাতার সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছেন , আবহাওয়া ছাড়া খাদ্যবস্তু ও চালচলনের দিক থেকে হোকাং ও রাশিয়ার মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে । তবে স্থানীয় লোকেরা দয়ালু ও অতিথিপরায়ণ বলে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি এই শহরকে ভালোবেসে ফেলেছেন । তিনি বলেছেন ,
আমি হোকাংকে খুব পছন্দ করি । এটি একটি মনোরম শহর । এখানে আসতে পেরে আমি মহা খুশী । এখানকার লোকেরা বেশ ভালো । এখানে জীবনযাপন ও কাজ করার মধ্যে আমি আনন্দ খুঁজে পাই ।
কাটিশার দেশের বাড়ি - দূরপ্রাচ্য অংগরাজ্যের বিরোবিডজান শহর রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত । এই শহর ও হোকাংয়ের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে হেইলুংচিয়াং নদী । ১৯৯৯ সালে হোকাং শহর দূরপ্রাচ্য অংগরাজ্যের সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন করে । বহু আগে থেকে কাটিশা হেইলুংচিয়াং নদীর সেই পারের চীনের প্রতি আগ্রহশীল হয়ে ওঠেন । ৬ বছর আগের একদিন তার বাবার একজন চীনা বন্ধু তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন । তখন তিনি কেবল অষ্টাদশী। তিনি তার কাছে চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কাহিনী শোনেন । এভাবে কাটিশা চীনের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন ।
পরে কাটিশা বাবার এই চীনা বন্ধুর কাছ থেকে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন । তখন তাকে একটি শ্রুতিমধুর চীনা নাম - চিয়াং হুং দেয়া হয় । চীনা ভাষায় হুংয়ের অর্থ রামধনু । তিনি আশা করেছিলেন, ভবিষ্যতে তিনি রামধনুর মত একটি সেতু নির্মাণ করে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একজন দূত হয়ে দাঁড়াবেন ।
ক্লাস নেয়ার সময়ে কাটিশা সবসময় চীনা ভাষায় ছাত্রদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন । তার চীনা ভাষার মধ্যে কিছু রুশ টান থাকলেও ছাত্ররা পুরোপুরিই তার পাঠ বুঝতে পারেন ।
কাটিশা ও তার ছাত্রদের মধ্যে বয়সের বেশি তারতম্য নেই বলে তাদের মধ্যে অভিন্ন ভাষা অনেক । যদিও তারা মাত্র এক বছর ধরে মেলামেশা করেছেন , তবুও ছাত্ররা এই সুন্দরী রুশ শিক্ষিকাকে খুবই ভালোবাসেন । কুয়াং ইয়ু নামক একজন ছাত্র বলেন ,
আমাদের মধ্যে যুগের ব্যবধান নেই । আমরা স্বাভাবিকভাবে মত বিনিময় করতে পারি । তিনি মাঝেমধ্যে আমাদের কাছে তার বাড়ি ও তার দেশের মজার মজার গল্প বলেন । তিনি আমাদের প্রত্যেক ছাত্রের জন্যে একটি করে অত্যন্ত শ্রুতিমধুর রুশ নাম দিয়েছেন । তিনি আমাদের রুশ নাম ধরে ডাকেন আর আমরা তার চীনা নাম ধরে ডাকি ।
কাটিশা প্রায় ছাত্রদের জীবনের ঘটনাবহুল স্থানে নিয়ে গিয়ে তাদের রুশ ভাষা শিখান । কেনাকাটা সম্পর্কে শিখাতে চাইলে তিনি ছাত্রদের সুপার মার্কেটে নিয়ে যান এবং প্রতিটি পণ্য দেখিয়ে তাদের রুশ ভাষা শিখান । তার এই শিক্ষা পদ্ধতি ছাত্রদের মধ্যে সমাদর পায় । তাদের কাছে কাটিশার ক্লাসে যোগদান একটি আনন্দদায়ক ব্যাপার । লিউ ফা লিয়ান নামক একজন ছাত্রী আমাদের সংবাদদাতকে বলেছেন ,
শিক্ষিকা কাটিশার ক্লাসে সবসময় এক প্রাণচঞ্চল পরিবেশ বিরাজ করে । তিনি বহু উপায়ে একটি রুশ শব্দ ব্যাখ্যা করেন । ভাষা দিয়ে পড়ানোর পাশাপাশি তিনি মাঝেমাঝে হাতের ভংগী দিয়ে বা ছবি এঁকে আমাদের শিখান । এভাবে আমরা তাড়াতাড়ি শিখতে পারি এবং সহজেই মুখস্ত করতে পারি । আমাদের সম্পর্ক আপন বোন ও বন্ধুদের মত ।
ছোটবেলা থেকে কাটিশা ছবি আঁকতে পছন্দ করেন । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে মূল বিষয় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তেল চিত্র শিখেন । হোকাংয়ে তিনি সর্বদাই ছবি এঁকে ছাত্রদের কাছে রাশিয়ার সংস্কৃতি প্রদর্শন করেন । চীনে যা দেখেছেন , তিনি তা হাতে কলমে লিখে নিতে অভ্যস্ত । তার ঘরের দেয়ালে টাংগানো রয়েছে নিজের আঁকা বেশ কয়েকটি ছবি । তার ছাত্র আন চিংচিং কাটিশার চিত্রাংকনের দক্ষতায় অত্যন্ত মুগ্ধ । তিনি বলেছেন ,
তিনি সুনিপুণভাবে ছবি আঁকতে পারেন । আমাদের মনে হয়, তার প্রতিভা আছে । তিনি সত্যিই একজন চিন্তাশীল ও মার্জিত শিক্ষক।
ক্লাসের পর তিনি ছাত্রদের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়াতে পছন্দ করেন । কখনো কখনো তিনি চীনা ছাত্রদের কাছ থেকে চীনা গান শিখেন । কোনো একটা গান পছন্দ হলে তিনি তার চীনা কথাগুলো মুখস্ত করার চেষ্টা করেন । সম্প্রতি তিনি আপনজনদের মধ্যকার ভাবানুভূতি প্রকাশকারী " বাবামা" নামক একটি চীনা গান শিখে ফেলেছেন । তিনি আনন্দের সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতার কাছে তা শোনালেন ।
উন্মুক্তমনা কাটিশা বিদ্যালয়ের চীনা সহকর্মীদের সঙ্গেও বেশ মধুর সম্পর্ক স্থাপন করেছেন । তার সহকর্মীরা তার কাছে চীনের সংস্কৃতি ও চালচলন সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছুক । খাওয়া-দাওয়ার সময়ে তার চীনা সহকর্মীরা তাকে বলেন , বসন্ত উত্সবের সময়ে চীনাদের মাছ খেতে হবে । কেন না , মাছের চীনা শব্দের উচ্চারণ উদ্বৃত্তে চীনা শব্দের উচ্চারন একই । মাছ খেলে সারা বছর লোকদের উদ্বৃত্ত থাকবে । কোনো লোকের জন্মদিন হলে নূডলস খেতে হবে । কেন না, নূডলস লম্বা লম্বা বলে দীর্ঘায়ুর প্রতীক । সকলে এই প্রিয় রুশ সহকর্মীকে পছন্দ করেন । শিক্ষিকা চাও হাই ইয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
তিনি আমাদের বিভাগের প্রত্যক শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন । আমরা তাকে বিদেশী বলে মনে করি না । আমরা তাকে আমাদের নিজেদের ছোট বোনের মত মনে করি ।
এক বছর পর কাটিশা স্বদেশে ফিরে যাবেন । তিনি চীনে তার কার্যমেয়াদ বাড়াতে চান । তিনি বলেছেন ,
আমি চীনকে খুবই ভালোবাসি । চীনে আসা আমার একটি সুন্দর স্বপ্ন ছিল । আমি চীনকে আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছি । এখানে আমার প্রয়োজন দেখা দিলে আমি চীনে থেকে যাবো । তিনি বলেছেন , আগামী বছর রাশিয়ায় চীন বর্ষ পালিত হবে । তিনি আশা করেন ,সেই সময়ে তিনি তা দেখানোর জন্যে তার চীনা ছাত্রদের রাশিয়ায় নিয়ে যাবেন ।
|