৫ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান চীনে আনুষ্ঠানিক সফর করেছেন। তাঁর এবারকার সফরের ওপর চীন সরকার ও প্রধান প্রধান তথ্য মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্ব এবং সম্মান দিয়েছে। সফরকালে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি চাও শিং ও রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার থাং চিয়া সুয়েনের সঙ্গে সাক্ষাত্ এবং বৈঠক করেছে। তাঁর এবারকার সফর সম্পর্কে একটি সাক্ষাত্কারভিত্তিক অনুষ্ঠান এখন প্রচারিত হচ্ছে।
চলতি বছর বাংলাদেশের সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘন ঘন চীন সফর হয়েছে। এমন মৈত্রী সফরের মাধ্যমে দু'দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ৬ জুন চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রে "চীন-দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ভূমিকা" নামক বক্তৃতা দেন। এই অনুষ্ঠানে চীনস্থ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা এবং চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় , চীনের পিপলস ডেইলী পত্রিকা, সিনহুয়া বার্তা সংস্থা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার নিবিড় ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বন্ধনে আবদ্ধ। চীন আর দক্ষিণ এশিয়ার রয়েছে অভিন্ন সীমান্ত, রয়েছে অভিন্ন নদ-নদী, যেগুলো হিমালয় পর্বতমালা থেকে উত্সরিত এবং প্রতিবেশী ভারত, নেপাল আর বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চমত্কার বক্তৃতা সবাইকে আকর্ষণ করেছে, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেমের সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি এবং উন্নয়নকে আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন।
সেমিনারের পর সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। বাংলা বিভাগের নতুন কর্মী শুয়ে ফেই ফেই এই সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলায় প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং তার মনে গভীর দাগ কেটেছে।
সংবাদ সম্মেলনের সময় খুব কম ছিলো। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফরকালীন বিস্তারিত তথ্য এবং তাঁর বিশেষ অনুভূতি জানার জন্য ৭ জুন সকাল বাংলা বিভাগের পরিচালক ইয়ু কুয়াং য়ুএ এবং বিশেষজ্ঞ মহিউদ্দিন তাহের আবার তিয়াও ইয়ু থাই জাতীয় অতিথি ভবনে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
সাক্ষাত্কার নেয়ার আগে আমরা জেনেছি যে, এর আগের দিনে তিনি চীনের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার পর রাতের বেলা চীনের মহাপ্রাচীরে পরিদর্শনে গিয়েছেন। আপনারা হয়তো জানেন না, পেইচিংয়ের কেন্দ্র স্থল থেকে মহাপ্রাচীর যেতে কমপক্ষে ২ ঘন্টা সময় লাগে। তা থেকে বুঝা যায়, চীনের ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে।
একই দিন বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেইচিং ত্যাগ করার কথা। কিন্তু চীন ও বাংলাদেশ এমন কি চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার মৈত্রী এ ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সফরের মাধ্যমে দিনে দিনে আরো নিবিড় হবে।
এই বিষয়ে চীনের প্রবীণ কূটনীতিবিদ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ায় চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত চৌ কাং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, ১৯৭৫ সালে চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর ত্রিশাধিক বছরে দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়ন অত্যন্ত ভালো। বিশেষ করে গত বছরে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাওয়ের বাংলাদেশ সফর এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর দু'পক্ষের সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এবারকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর হচ্ছে দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের এক অংশ। তাঁর সঙ্গে চীনের নেতৃবৃন্দের বৈঠক সমঝোতা বাড়ানো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আর আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে দু'পক্ষের সহযোগিতা জোরদার করবে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ হচ্ছে চীনের প্রতিবেশী। চীন আর দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান রয়েছে। চীন দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়। বলা যায় , বর্তমান হচ্ছে চীন আর দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যুগে । গত বছর সার্কের ১৩তম শীর্ষ সম্মেলনে মৌলিকভাবে চীনকে সার্কের পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, চীন আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কের পর্যবেক্ষক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীন আর সার্কের বিভিন্ন সদস্য দেশের সম্পর্ক আরো বিরাট বিকশিত হবে।
|