নিখিল চীন নারী ফেডারেশনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ চীন গণমৈত্রী সমিতির ৫-সদস্যবিশিষ্ট নারী প্রতিনিধি দলের সম্প্রতিক চীন সফরকালে দলনেত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাংসদ বেগম শাহরীয়ার কবির বুলুর দেয়া সাক্ষাত্কারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ:
প্রশ্ন: চীনের কোন বিষয় আপনার মনে বেশী দাগ রেখেছে?
উত্তর: চীনের গণ-মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব জোরদারের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এসেছিলাম, তা সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমি চীনা নারীদের জীবনযাত্রা, রীতি-নীতি জেনেছি। তাদের সাথে আমাদের অনেক মিল রয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে মিল আছে, উভয় দেশের নারীদের সমস্যা একই বা প্রায় একই। চীনা নারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, গ্রামে গিয়ে নারীদের সঙ্গে মিশেছি। টাউনশিপে, শহরে, প্রাচীন শহরে সবখানে গিয়েছি যে গুণটি আমার বেশী ভালো লেগেছে, তা হলো তারা খুব কর্মঠ, মিশুক। তারা সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে। তারা খুবই অতিথিপরায়ণ। বাংলাদেশের মেয়েদেরও এসব গুণাবলী আছে।
চীনের সরকার যেমন মেয়েদের কল্যাণে নানা কর্মসূচী, নিয়েছে, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের জন্যেও অনেক কর্মসূচী রয়েছে। যেমন বাংলাদেশে মেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ভালো ছাত্রীদের জন্যে বিশেষ বৃত্তিও দেয়া হয়ে থাকে,ফলে মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে এবং তাদের কর্মসংস্থানও বেড়েছে। মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করছে। সামরিক, বেসামরিক, সরকারী-সব ক্ষেত্রেই এখন তাদের বিচরণ আছে। তারা ডাক্তার, প্রকৌশলী, দোকানদার, পাইল্ট, ট্রেন চালক, রিকশা চালক, সব পেশার পেশাজীবী।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের জন্যে ৪৫টি আসন বরাদ্দ হয়েছে। এ সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উত্তর: নারীদের ক্ষমতায়নের জন্যেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়না। সংসদ যেহেতু সর্বময় ক্ষমতা ও আইন প্রণয়নের কেন্দ্র, সেহেতু সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লে সমাজে তাদের ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটানো যাবে। আগেকার সংসদের নারী আসনগুলোতে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এককভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে সংসদের সকল দল আনুপাতিক হারে নারী আসন নির্বাচন করতে পারে। এটা বেশী প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এর সুবাদে সকল সংসদীয় দলের নারী প্রতিনিধিরা, অর্থাত্ দলমত নির্বিশেষ নারী প্রতিনিধিরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
প্রশ্ন: চীনা নারীদের সম্বন্ধে আপনারা অনুভূতি কি?
উত্তর: চীনা নারীরা সমাজের সর্বস্তরে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছেন। তবে আমি বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছি যে, এখানে বৃদ্ধারাও সমানতালে কাজ করছেন। কেউই বসে নেই।
প্রশ্ন: খুয়েনমিন শহর কেমন লেগেছে?
উত্তর: খুবই সুন্দর। বিশেষ করে প্রস্তর বনে খুব ভালো লেগেছে। আমি একজন জীব বিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে জানি প্রস্তর বন কিভাবে বনে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু সেটা তাত্ত্বিক জ্ঞান। এবারই প্রথম আমি তা বাস্তবে চাক্ষুষ করলাম। সত্যি খুব ভালো লেগেছে। সেখানে আ চিয়াও সি গ্রামে গিয়েছি। গ্রামটি আচিয়াও সি নামে এক মহিলার নামানুকরনেই পরিচিত। সেখানে আমি সূচীকর্ম আর বুনন শিল্প দেখেছি। ঠিক একই রকম আমাদের দেশেও আছে। তা দেখে আমার মনে হয়েছে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, ভিন দেশে নয়।
প্রশ্ন: পেইচিংয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের মনোদৈহিক অবস্থার বিকাশের পাশাপাশি আর কিছু কি লক্ষ্য করেছেন?
উত্তর: এখানে এসে সত্যি একটা নতুন জিনিষ লক্ষ্য করলাম। সেটি হচ্ছে ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও হোমওয়ার্ক অর্থাত্ পড়ালিখা করতে হয়। সেটি ছেলেমেয়েদের সার্বিক বিকাশে পারিবারিক সমর্থনের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলে আমি মনে করি। এটি দেশে ফিরে গিয়ে আমি কাজে লাগাবো।
প্রশ্ন: নিখিল চীন নারী ফেডারেশনের চেয়ার পারসন কু শিও লিয়েনের সঙ্গে আপনারা কি কোনো মতৈক্যে পৌঁছেছেন?
উত্তর: আমরা উভয় দেশের নারীদের মধ্যে প্রযুক্তি আর অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছি।
সংবাদদাতা:ইয়াং ওয়েইমিং
|