প্রশ্নকর্তাঃবাংলাদেশের বগুড়া জেলার দুপচাঁটিয়া এর জয়পুর পাড়া গ্রামের মোঃ ইমরুল হাসান প্রশ্ন করেছেন ।
উত্তরঃচীনের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে শিশু শিক্ষা, প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল , উচ্চতরশিক্ষা এবং স্কুলের বাইরে অর্থাত্ অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ইত্যাদি। শিশু শিক্ষা মানে অনূর্ধ ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রাক স্কুলশিক্ষাদান। চীনে শিশু শিক্ষা প্রধানতঃ কিন্ডারগার্টেন বা পূর্ব স্কুল ক্লাসে চালিত হয়। চীনের কিন্ডারগার্টেন সাধারণতঃ ৩ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুরা ভর্তি হতে পারে । বর্তমানে চীনে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন আছে।
চীনের বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন অনুযায়ী, উপযুক্ত বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে রাষ্ট্র বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেয়। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উভয়ই বাধ্যতামূলক শিক্ষা। ফলে শিক্ষা অবৈতনিক কেবল কিছু বই-খাতা এবং প্রাসঙ্গিক ব্যয় লাগে, প্রতি বছরের মোট ব্যয় প্রায় কয়েক শ ইউয়েন রেনমিনপি।
চীনের প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা ৬ বছর বয়স থেকে শুরু । বেশির ভাগ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার ছয় বছর মেয়াদ। প্রধান কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে, চীনা ভাষা, অঙ্ক, বিজ্ঞান, বিদেশী ভাষা, নৈতিক আচরণ, সংগীত, ক্রিড়া ইত্যাদি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে ৪ লক্ষেরও বেশি প্রাথমিক স্কুল আছে, ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ১২ কোটি।
চীনের মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা ৩ বছর। প্রধান কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে, চীনা ভাষা, অঙ্ক, বিদেশী ভাষা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে চীনে ৬০ হাজারেরও বেশি মাধ্যমিক স্কুল আছে । শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬ কোটি।
চীনের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে, সাধারণ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, পেশাগত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, প্রযুক্তিগত মাধ্যমিক স্কুল ইত্যাদি। চীনের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক শিক্ষা নয়, ফলে ছাত্রদের বেতন দিতে হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থা অনুযায়ী এর ব্যয় আলাদা, এখন সাধারনতঃ প্রতি বছরে কয়েক হাজার ইউয়েন রেনমিনপি লাগে।
চীনের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাও তিন বছরের । প্রধান কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে, চীনা ভাষা, অঙ্ক, বিদেশী ভাষা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি। চীনে মাধ্যমিক স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রবেশ করতে চাইলে ভর্তি পরীক্ষা পাস করতে হবে। ছাত্রদের পছন্দ এবং পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্কুলের কর্তৃপক্ষ মেধা তালিকার ক্রমানুসারে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির ব্যবস্থা করে । সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে মোট৩০ হাজারাধিক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল আছে। অধ্যায়নরতছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩ কোটি।
চীনের উচ্চ শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে কলেজ, স্নাতক , মাস্টার ডিগ্রি প্রদান এবং স্নাতকোত্তর প্রভৃতি কয়েক শ্রেণী । উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানেরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ পেশাগত কলেজ, বেতার ও টেলিভিশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ বিদ্যালয় প্রভৃতি । চীনের উচ্চ শিক্ষার ইতিহাস একশতাধিক বছরের । সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন চীনে ৩ হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, এর মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ হচ্ছে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, অন্য সব বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিখ্যাত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় সবই সরকারী প্রতিষ্ঠান। এখন এগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার জন্য ভর্তি পরিক্ষায় পাস করতে হয়। চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিভিন্ন প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের কর্তৃপক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করে এবং ভর্তিরপয়েন্ট- তালিকা নির্ধারন করে।
বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া , চীনে আরো বিপুল সংখ্যক অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্থা আছে। সর্বদাই শিক্ষাকে গুরুত্ব দেনবলেচীনারা বিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষা সংস্থাগুলোরমাধ্যমেও নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার ওপর খুব গুরুত্ব দেন।
চীনের অনানুষ্ঠানিকশিক্ষা সংস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে যুব বা কিশোর ভবন, তত্পরতা কেন্দ্র, ইন্টারনেট শিক্ষা এবং নানা প্রশিক্ষণ কোর্স ইত্যাদি। চীনের কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের পছন্দ এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে এই সংস্থাগুলো বাছাই করে সংগীত, নাচ-গান, ছবি আঁকা শিখতে পারেন, বা স্কুলে শেখা সাংস্কৃতি জ্ঞান এখানে সুসংবদ্ধ করতে পারেন।
|