|
|
|
|
|
চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ-কাজের
অগ্রগতি
|
|
৩০ বছরেরও বেশী সময়ের নিরলস প্রয়াসে চীনের পরিবেশ সংরক্ষণ কাজে বিশ্ব-স্বীকৃত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস আর দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ায় চীন সুস্পষ্টভাবে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ জোরদার করেছে। মোটের ওপর দেখতে গেলে , সারা দেশের পরিবেশ দূষণের অবনতি তীব্রতর হয়ে ওঠার প্রবনতা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। কোনো কোনো শহর আর অঞ্চলের পরিবেশের গুণগত মানের কিছু উন্নতি হয়েছে, যা চীনের টেকসই উন্নয়নের নীতি বাস্তবায়নে যথোচিত অবদান রেখেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর সরকারের
গুরুত্ব আরোপ
১৯৯৭ সাল থেকে চীন সরকার একটানা
৭ বছর জাতীয় গণ কংগ্রেস ও জাতীয়
গণ-রাজনৈতিক সম্মেলনের বার্ষিক
অধিবেশন চলাকালে বিশেষ আলোচনাবৈঠক
আয়োজিত করেছে, এতে পরিবেশ সংরক্ষণের
কাজ সংক্রান্ত রিপোর্ট শোনানো
হয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের কাজের
যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চীনের
রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ মনে করেন,
পরিবেশ সংরক্ষণ হলো দেশকে শক্তিশালী
করা , জনগণকে ধনী করা এবং বিশ্বের
শান্তি সুনিশ্চিত করার এক বিরাট
ব্যাপার, আর বিষয়টি দেশের পরিবেশের
নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিবেশ সংরক্ষণের মূল বিষয় বা
মর্ম হলো উত্পাদন-শক্তি সুরক্ষা
করা । পরিবেশ ও উন্নয়নের সামগ্রিক
নীতি নির্ধারণের ব্যবস্থা গড়ে
তোলা ও পূর্ণাঙ্গ করতে হলে বিভিন্ন
স্থানের সরকারী কর্মকর্তাদের
উচিত পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে গুরুত্ব
দেয়া এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব
পালন করা । পরিবেশ সংরক্ষণের
একীভূত তত্ত্বাবধানেরব্যবস্থা
জোরদার করতে, পরিবেশ সংরক্ষণে
পুঁজি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং এতে
জনসাধারণকে অংশ গ্রহণ করতে উত্সাহ
দেয়া জরুরী । পরিবেশ সংরক্ষণের
বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বিষয়কে বিশেষ
গুরুত্ব দিতে হবে, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ
শহরগুলো, অববাহিকা , অঞ্চল এবং
সমুদ্রসীমায় দূষণ প্রতিরোধ ও
সংস্কারের কাজ ভালভাবে সম্পন্ন
করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সংস্কারের
মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগকে
শক্তিশালী করা হচ্ছে । ১৯৮৮ সালের
আগে রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ
ব্যুরো ছিল রাষ্ট্রীয় শহর ও গ্রামাঞ্চলের
নির্মাণ কাজ ও পরিবেশ সংরক্ষণ
মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত । ১৯৮৮সাল
থেকে তা রাষ্ট্রীয় পরিষদের সরাসরী
তত্ত্বাবধানে একটি সংস্থা। আর
১৯৯৩ সালে এটি রাষ্ট্রের উপমন্ত্রী
পর্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যুরো
হয়েছে । একই সঙ্গে এটি ১৯৯৮ সালে
মন্ত্রণালয়ের সমান পর্যায়ের রাষ্ট্রীয়
ব্যুরো হয়েছে। এর নতুন নাম দেয়া
হয়েছে : রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ
প্রশাসন।
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা
হয়েছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ৮৪
হাজার গুরুতর দূষণ -সৃষ্টিকারী
ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আর
বাতিল করা হয়েছে । চীনের ২ লক্ষ
৩৮ হাজার দূষণ-সৃষ্টিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের
মধ্যে ৯০শতাংশেরও বেশী প্রতিষ্ঠানের
নিঃসৃত দূষিত পদার্থের দূষণের
মাত্রা নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায়
কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
রাষ্ট্রের নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ
অঞ্চলগুলোতে দূষণ সংস্কার প্রকল্পে
প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গেছে।
হুয়াইহো নদীর প্রধান ধারার দূষণের
মাত্রা লক্ষণীয়ভাবে কমানো গেছে
। হাইহো এবং লিয়াওহো নদীর অববাহিকার
দূষণের মাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে,
থাইহু হ্রদের পানির গুণগত মানের
অবনতির প্রবনতা প্রাথমিকভাবে
নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে । তিয়েনছি
হ্রদের দূষণের প্রবনতাও কিছুটা
কমানো হয়েছে। ছাওহু হ্রদের পানি-দূষণের
পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ
এসেছে । বিশেষ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে
দূষণ-সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ
নিঃসরণের মোট পরিমাণ কমানো হয়েছে,
“টক বৃষ্টি” পড়ার আওতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি
বৃদ্ধি রোধ করা হয়েছে। পেইচিং
মহানগরের বায়ুমণ্ডল দূষণ সংস্কার
প্রকল্পে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত
হয়েছে । পোহাই উপসাগরের দূষণ
সংস্কার কাজ সার্বিকভাবে শুরু
হয়েছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ
ও গঠন জোরদার হয়েছে
চীনে দূষণ প্রতিরোধ ও সংস্কার
এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ
উভয় বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ
এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ
আর গঠন উভয় বিষয়কে আঁকড়ে ধরার
নীতি অনুসরণ করা হয়।এতে প্রাকৃতিক
পরিবেশ সংরক্ষণ ও গঠনের গতি দ্রুততর
করা হয়েছে। সারা দেশে সব মিলিয়ে
নানা রকমের ১২২৭টি প্রাকৃতিক
সংরক্ষণ এলাকা স্থাপিত হয়েছে।এগুলোর
মোট আয়তন ৯কোটি ৮২ লক্ষ ১০ হাজার
হেক্টর, যা চীনের স্থলভাগের মোট
আয়তনের ৯.৮৫%। ৪টি প্রাকৃতিক
পরিবেশ সংরক্ষণ প্রদেশ, দু’ শোরও
বেশী জাতীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক
পরিবেশের আদর্শ এলাকা পরীক্ষামূলকভাবে
গঠন রাষ্ট্রের অনুমোদন পেয়েছে।
বর্তমানে দেশের বনাঞ্চলে ব্যাপকভাবে
বৃক্ষচর্যার জন্য পাহাড়ী এলাকা
সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া
হয়েছে ।এই সংরক্ষণ এলাকাগুলোর
মোট আয়তন ১.২৯৬ কোটি একর। সারাদেশের
মোট আয়তনের ১৬.৫ শতাংশ এখন বনাঞ্চল।
পরিবেশ সংরক্ষণের আইন-ব্যবস্থা
গঠনে অগ্রগতি অর্জন
বর্তমানে চীনে “বায়ুমণ্ডলের দূষণ
প্রতিরোধ আইন”, “পানি দূষণ প্রতিরোধ
আইন”, “সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণ
আইন” সংশোধন করা হয়েছে ; “শব্দ
দূষণ প্রতিরোধ আইন”, “” পানির
দূষণ প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নের
বিস্তারিত নিয়মবিধি”, “নির্মাণ
প্রকল্পের পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়মবিধি”
ইত্যাদি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ
পর্যন্ত চীন মোট ৬টি পরিবেশ সংরক্ষণ
আইন, ১০টি সংশ্লিষ্ট সম্পদ আইন
এবং ৩০টি পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি
এবং ৯০টিরও বেশী পরিবেশ সংরক্ষণ
নিয়ম প্রকাশ করেছে, ৪৩০টি রাষ্ট্রীয়
পরিবেশ সংরক্ষণ মানদণ্ড প্রণয়ন
করেছে এবং ১০২০টি স্থানীয় পরিবেশ
সংরক্ষণ নিয়মবিধি প্রকাশ করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণে অর্থবিনিয়োগ
বৃদ্ধি
১৯৯৬ সাল থকে ২০০০ সাল পর্যন্ত
সমগ্র চীনে পরিবেশ সংরক্ষণে পুঁজিবিনিয়োগের
মোট পরিমাণ ৩৬০ বিলিয়ন ইউয়ান।
এটা ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯৫ সালের চেয়ে
২৩০ বিলিয়ন ইউয়ান বেশী , এবং
দেশের মোট জি ডি পির শতকরা ০.৯৩
ভাগের সমান। বিশেষ করে সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে চীনের কেন্দ্রীয় আর্থিক
দফতরের ইস্যু করা দীর্ঘমেয়াদী
“ দেশগঠন বণ্ডের” মধ্যে ৪৬ বিলিয়ন
ইউয়ান দূষণ প্রতিরোধ ও প্রাকৃতিক
পরিবেশ গঠন-খাতে ব্যবহার করা
হয়েছে ,এটা পরিবেশের গুণমান উন্নততর
করা এবং দেশের অভ্রন্তরীণ চাহিদা
বাড়িয়ে দেয়া আর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি
ত্বরান্বিত করার জন্যে সক্রীয়
ভূমিকা পালন করেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে
নাগরিকদের সচেতনতার উন্নতি
পরিবেশ সংরক্ষণে গোটা সমাজের
মনোযোগ,সমর্থন ও অংশগ্রহণের উত্সাহ
ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংরক্ষণ
প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়
দেশের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত
অঞ্চল ও মহানগরের ১৩৯টি জেলা
-পর্যায়ের প্রশাসনিক ইউনিটের
প্রায় দশ হাজার পরিবারের মধ্যে
জরিপ চালানোর দায়িত্ব পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের
স্বদেশের অবস্থা গবেষণাকেন্দ্রের
ওপর অর্পণ করেছে । এই জরিপের
ফলাফল থেকে জানা গেছে, পরিবেশ
সংক্রান্ত সমস্যা ইতিমধ্যেই সমাজের
মনোযোগ আকর্ষণের “হট টপিক” হয়ে
উঠেছে । পরিবেশ সংরক্ষণের শিক্ষাকে
৯ বছর-মেয়াদী বাধ্যতামূলক শিক্ষা
ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
“সবুজ” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর “সবুজ”কমিউনিটি
গঠনের তত্পরতা ক্রমেই অধিকতর
সামাজিক প্রভাব বিস্তার শুরু
করছে।
রাষ্ট্র জনসাধারণকে পরিবেশ সংরক্ষণে
অংশ নিতে উত্সাহ দিচ্ছে। পরিবেশ
সংরক্ষণ আইন লংঘন সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে
খবর দেয়ার জন্য বিশেষ টেলিফোন
নম্বর-১২৩৬৯ চালু করা হয়েছে ।
পরিবেশ বিষয়ক তথ্য প্রকাশের মাত্রা
জোরদার করা হয়েছে । পর্যায়ক্রমে
৪৭টি গুরুত্বপূর্ণ শহরের বায়ুর
গুণগত মানের দৈনিক রিপোর্ট প্রকাশ
ও পূর্বাভাসের ব্যবস্থা নেয়া
হয়েছে । প্রধান নদনদীর অববাহিকা
অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর
পানির গুণগত মানের সাপ্তাহিক
রিপোর্ট এবং (গুরুত্বপূর্ণ স্থানের)
সাঁতার ও স্নানের উপযোগী সমুদ্রসীমায়
পানির গুণগত মানের সাপ্তাহিক
রিপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ
দিবসের কাছাকাছি সময়ে বিগত বছরের
সারা দেশের পরিবেশের গুণগত মানের
তথ্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|