প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সংরক্ষণ


       “প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য চুক্তি ” অনেক আগেই স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চীন বরাবরই সক্রীয়ভাবে চুক্তির আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে অংশ নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই চুক্তি পালনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় মতামত প্রকাশ করেছে । বিশ্বে যে ক’টি দেশ সবার আগে এই চুক্তির কার্যক্রম পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে, চীন সেসব দেশের একটি। ১৯৯৪ সালে সম্পাদিত “চীনের প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সংরক্ষণের কার্যক্রম পরিকল্পনার ” কল্যাণে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের প্রচুর তত্পরতার অনুসরণীয় নিয়ম পাওয়া গেছে। “ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ” অনুযায়ী, বন্য প্রাণী সম্পদের ক্ষতিসাধনের যাবতীয় অপরাধমূলক তত্পরতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে ,এতে সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড । 

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পদের কার্যকর সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে । ২০০৩ সালের জানুয়ারী থেকে চীনের বিজ্ঞান একাডেমির উদ্যোগে বিলুপ্তির সম্মুখীন হওয়া উদ্ভিদগুলোর সংরক্ষণের জরুরী প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫ বছরের মধ্যে একাডেমির অধীনে ১২টি বোটানিকাল গার্ডেনে সংরক্ষিত ১৩ হাজার প্রকারের উদ্ভিদ বাড়িয়ে ২১ হাজার প্রকার করা হবে এবং ৪৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন -বিশিষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম বোটানিকাল গার্ডেন গড়ে তোলা হবে। এই প্রকল্পের অধীনে বিলুপ্তির সম্মুখীন দুর্লভ উদ্ভিদ সংগ্রহ খাতে পুঁজিবিনিয়োগ হবে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশী। ছিনলিং পর্বত, উহান, সিশুয়াংপাননা এবং পেইচিং প্রভৃতি স্থানকে জিন ব্যাংকগুলোর কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে । 

বিলুপ্তির সম্মুখীন বন্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্পেও প্রাথমিক পর্যায়ে সুফল পাওয়া গেছে, এরিমধ্যে সারা দেশে ২৫০টি বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। পাণ্ডা, লালঝুটি বিশিষ্ট আইবিস( বিরল প্রজাতির সারস পাখি) সহ সাত ধরনের প্রাণী সংরক্ষণের বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে চীনের “জাতীয় রত্ন” এবং প্রাণীর “জীবিত ফসিল” বলে আখ্যায়িত বৃহত্ পাণ্ডার মোট সংখ্যা এক হাজারের উপর বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে, তাদের বেঁচে থাকার পরিবেশ অব্যাহতভাবে উন্নততর করা হচ্ছে; লাল ঝুটি আইবিস(বিশেষ সারস) পাখির সংখ্যা সাতটি থেকে বাড়িয়ে আড়াই শোর মতো করা হয়েছে। এদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া ক্রমাগতভাবে প্রশমিত করা হচ্ছে । পরিকল্পিতভাবে ইয়াংসি নদীর কুমির পালন করার ফলে তার সংখ্যা বেড়ে প্রায় দশ হাজার হয়েছে; হাইনান দ্বীপের বিশেষ হরিণের সংখ্যা ২৬ থেকে বেড়ে ৭ শোরও বেশী হয়েছে; বিরল জাতীয় “ইঔ”নামক গাঙচিলের সংখ্যা ২ হাজার থেকে বেড়ে ১০ হাজারেরও বেশী হয়েছে ; দুটি বিরল প্রজাতির বাঘ চীনের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে এবং পূর্ব ও দক্ষিণ চীনে আলাদা অলাদাভাবে আবার দেখা গেছে । অন্যদিকে শ্বেত ডানা বিশিষ্ট ডলফিনের কৃত্রিম প্রজনন গবেষণার কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে । অবৈধভাবে প্রাণী শিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের একাধিক প্রাণী সংরক্ষণ সংগঠনের সহযোগিতায় অতি-মূল্যবান তিব্বতী এণ্টিলোপের সংখ্যা দ্রুত হ্রাসের প্রবনতা রোধ করা গেছে, বর্তমানে এদের সংখ্যা ৭০ হাজারের কাছাকাছি বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।