বনসম্পদের সংরক্ষণ


      গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে চীন বৃক্ষ রোপন বা বনাঞ্চল সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বের সামনে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৩৯.৮ বিলিয়ন গাছ রোপন করা হয়েছে । বর্তমানে চীনে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট বনাঞ্চলের আয়তন ৪.৬৬৭ কোটি হেক্টর, এটা সারা বিশ্বের কৃত্রিম বনাঞ্চলের আয়তনের ২৬%, এবং বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে, চীনের মোট আয়তনের মধ্যে বনাঞ্চলের অনুপাত ১৬.৫৫%। বিশ্বের বনসম্পদের ক্রমাগত অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে চীনে বনাঞ্চলের আয়তন এবং কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধির গতি বজায় রাখা হয়েছে, জাতিসংঘের পরিবেশ সংরক্ষণ প্রোগ্রাম চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বনাঞ্চল সংরক্ষণকারী ১৫টি দেশের মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছে । 

১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চীনের কেন্দ্রীয় সরকার চীনের তুলনামূলকভাবে দরিদ্র মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চলের বনসম্পদ ও তৃণভূমি সংরক্ষণ খাতে ৪২.৭ বিলিয়ন ইউয়ান অর্থ বিনিয়োগ করেছে । এই অর্থ দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া হয়, তাঁদেরকে তাঁদের মাত্রাতিরিক্ত আবাদ করা কৃষিজমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে সেই জমিকে আবার বনাঞ্চল আর তৃণভূমিতে রূপান্তরিত করার জন্যে উত্সাহ দেয়া হয় । নিকৃষ্ট জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে সেটাকে আবার বনাঞ্চলে রূপান্তরিত করার প্রকল্প দেশের ২৫টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর কেন্দ্রশাসিত মহানগরে সার্বিকভাবে চালানো হয়েছে, ২০০২ সাল নাগাদ সারা দেশে এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৬৪.৪ লক্ষ হেক্টর বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয়েছে, তার মধ্যে ৩১.৮ লক্ষ কৃষিজমিকে বনাঞ্চলে রূপান্তরিত করা হয়েছে এবং পাহাড়ী এলাকার যে সব জমি বৃক্ষরোপনের উপযোগী সেই সব জমিতে বৃক্ষ রোপন করে ৩২.৬ লক্ষ হেক্টর বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয়েছে। আবাদী জমিকে আবার বনাঞ্চলে রূপান্তরিত করার প্রকল্পে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক সুফল বা উপকার পাওয়া গেছে, কিছু অঞ্চলে পানি ও মাটির ক্ষয় রোধের কিছু উন্নতি হয়েছে। বনসম্পদ সংরক্ষণের অন্য একটি ব্যবস্থা হলো ১৯৯৮ সাল থেকে সূচিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ প্রকল্প , এই প্রকল্পে সারাদেশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটা বন্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অনেক অঞ্চলে আগে গাছ-কাটা শ্রমিক বা কাঠুরিয়ারা এখন বনসম্পদের রক্ষক হয়েছেন । 

চীনের বনশিল্পের টেকসই উন্নয়নের রণনীতি গবেষণার রিপোর্টে নিরূপিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৫০ সালে চীনের মোট আয়তনের মধ্যে বনাঞ্চলের অনুপাত হবে ২৮%।