প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্তমান অবস্থা


 বনাঞ্চলের পরিধি

    বহু বছর ধরে চীন বনাঞ্চল সংরক্ষণ আর বৃক্ষরোপনের ক্ষেত্রে বেশ লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে ।২০০২ সাল পর্যন্ত চীনের কৃত্রিম বনাঞ্চলের আয়তন ৪.৬ কোটি হেক্টর ছাড়িয়েছে, চীনের কৃত্রিম বনাঞ্চলের আয়তন বৃদ্ধির গতি এবং আওতা বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে বৃক্ষরোপনের আয়তন দ্রুত বেড়ে চলেছে, দেশের মোট আয়তনের মধ্যে বনাঞ্চলের অনুপাত ১৯৯৮ সালের ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০২ সালে ১৬.৫৫ শতাংশ হয়েছে । বর্তমানে বনাঞ্চলের মোট আয়তন ১৫.৮ কোটি হেক্টর হয়েছে। চীনে কার্যকর ‘টেকসই উন্নয়ন আর সবুজ চীন গঠনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা’ অনুযায়ী, চীন ২০১০ সালের মধ্যে চীন বনাঞ্চলের আয়তন বাড়িয়ে দেশের মোট আয়তনের ২০শতাংশেরও বেশিতে উন্নীত করার প্রয়াস চালাচ্ছে।

মরুকরণ

চীন বিশ্বের মধ্যে মরুকরণে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম । যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের আংশিক অঞ্চলে বাতাস ও বালি সংস্কারসাধন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে বেশ লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তবুও গোটা দেশের সার্বিক অবস্থার অবনতি এখনও কার্যকরভাবে রোধ করা যায় নি, জমির গুণমানের অবনতি এবং মরুকরণের আয়তন এখনও বাড়ছে ।১৯৯৯ সালে চীনের দ্বিতীয় জাতীয় মরুভূমিকরণ ও মরুতে রূপান্তরিত জমি জরীপের ফলাফল থেকে জানা গেছে, সারা দেশে মরুতে রূপান্তরিত ভূমির মোট আয়তন ১৭.৪লক্ষ বর্গকিলোমিটারযা দেশের ভূমির মোট আয়তনের প্রায় ২০ শতাংশ এবং যা প্রতি বছর ৩৪০০ বর্গকিলোমিটার করে সম্প্রসারিত হচ্ছে । বর্তমানে চীনের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের উত্পাদন ও জীবনযাত্রা মরুভূমিকরণের ফলে গুরুতর বিপন্ন । আর প্রতি বছর মরুভূমিকরণের সৃষ্ট চীনের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক ক্ষতি৫৪ বিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশী।

পানি ও মাটির ক্ষয়

ব্যাপক পানি ও মাটির ক্ষয়ে চীনের ভূমিসম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগ ও নানান পরিবেশ সমস্যা তৈরি করেছে । বিশেষ করে হুয়াংথু মালভূমি (অর্থাত্ পীত মাটির মালভূমি) এলাকার পানি ও মাটির ক্ষয় সবচেয়ে গুরুতর, এতে সৃষ্ট দুযোর্গ বা ক্ষতিও সবচেয়ে বেশী। চীনের পানি ও মাটি ক্ষয়ের সামগ্রিক অবস্থা এই রকম : আংশিকভাবে তা সংস্কার করা হয়েছে , কিন্তু সামগ্রিক দিক থেকে ক্ষয় এখনও বাড়ছে । সংস্কারের গতি ক্ষয়ে যাওয়ার সমান নয় । বর্তমানে পানি ও মাটির ক্ষয়ের দরুন চীনের কৃষিজমির তিন ভাগের এক ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বা বিপন্ন হয়ে পড়ছে । প্রতি বছর পানি প্রবাহে ক্ষয়ে যাওয়া মাটির মোট পরিমাণ ৫ বিলিয়ন টনেরও বেশী, যা গড়ে সারাদেশের কৃষিজমির উপরিভাগ থেকে এক সেণ্টিমিটার মাটি কেটে ফেলে দেয়ার সমান । ক্ষয়প্রাপ্ত ৫ বিলিয়ন টন মাটির যে উপাদানগুলো ফসলের উপকারে আসতে পারে তার পরিমাণ ৪ কোটি টন স্ট্যাণ্ডার্ড(বেশ উন্নতমানের) রাসায়নিক সারের সমান । উপকারী উপাদানের পরিমাণের দিক থেকে হিসেব করলে তা চীনের রাসায়নিক সারের বার্ষিক উত্পাদনের সমান । পানি ও মাটি ক্ষয়ের প্রধান কারণ হলো চাষাবাদের অনুপযুক্ত পদ্ধতি এবং বনসম্পদ ও তৃণভূমি ধ্বংস করা । চীনের পাহাড়গুলোর ঢালুতে চাষের জমির মোট আয়তন প্রায় ৬.৭ কোটি একর। তার মধ্যে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে (কেটে) চাষ করা জমি প্রায়১.৭ কোটি একর। বাকী ৫ কোটি একর ঢালু জমির ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় পানি ও মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার দরুন বিপন্ন হয়ে পড়ছে ।

জলাভূমি

চীনের জলাভূমির মোট আয়তন ৬.৬কোটি হেক্টর( নদনদী ও পুকুর ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত নয় ), এই আয়তন বিশ্বের জলাভূমির মোট আয়তনের ১০ শতাংশ, যা এশিয়ায় প্রথম স্থান অধিকার করে আছে এবং বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। জলাভূমির গুরুত্ব সম্পর্কে চীনের সচেতনতা উন্নত হবার সঙ্গে সঙ্গেগত শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে চীন তার জলাভুমি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে , এতে নির্দিষ্ট মাত্রায় জলাভূমি এবং তার রকমারি প্রাণী ও উদ্ভিদের সুরক্ষা হয়েছে। কিন্তু লোকসংখ্যা ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যৌথ চাপে জলাভূমি-সম্পদের ওপর মানবজাতির উত্পাদন ও জীবনযাত্রার নির্ভরশীলতা এবং উন্নয়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাবে জলাভূমি ও তার প্রাণী ও উদ্ভিদের রকমারিতা ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। গত ৪০ বছরে উপকূলীয় সৈকতের জলাভূমির ৫০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, দেশের ১৩ শতাংশ হ্রদ বিলুপ্ত হয়েছে, হেইলোংচিয়াং নদী অববাহিকার তিন-নদী সমতলভূমির ৭৮ শতাংশ প্রাকৃতিক বিল-জাতীয় জলাভূমি লোপ পেয়েছে, হোংহু হ্রদের জলজ উদ্ভিদের প্রজাতির সংখ্যা ২৪টি কমেছে, মাছের প্রজাতের সংখ্যা ৫০টি কমেছে । জলাভূমি সম্পদের ধ্বংস গুরুতরভাবে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ও বাসিন্দাদের জীবন ধারণের পরিবেশ বিপন্ন করে তুলছে। জলাভূমি ও তার প্রাণী আর উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সুরক্ষায় ইতিমধ্যেই চীন সরকার ও জনসাধারণের মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।