চীনের বিখ্যাত স্থপতিরা

 লিয়াং সি ছেন

       লিয়াং সি চেন(১৯০১--১৯৭২), ১৯১৫ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত পেইচিংয়ের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯২৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালে মার্কিন প্রিন্সট বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। লিয়াং সি চেন দীর্ঘকাল ধরে স্থাপত্যে শিক্ষাদান করেন, স্থাপত্যে শিক্ষাদানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।  

       লিয়াং সি ছেন ত্রিশের দশক থেকে চীনের প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে তদন্ত ও গবেষণা চালিয়েছেন এবং জীবিতকালে চীনের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প সম্পর্কে অনেক রচনা ও নিবন্ধ লিখেছেন। এইসব রচনা ও নিবন্ধের খুবই উচ্চ বিদ্যাগত মূল্য আছে।  

       লিয়াং সি ছেন পেইচিং শহর নির্মান পরিকল্পনা ও স্থাপত্যকর্মগুলোর ডিজাইন সম্পর্কেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন এবং পেইচিং শহর নির্মান পরিকল্পনার কাজে, জাতীয় প্রতীকের ডিজাই আর গণবীরদের স্মৃতিস্তম্ভ, ইয়াংচৌয়ের চিয়েন চেন সন্ন্যাসীর স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি ডিজাইনের কাজে অংশ নিয়ে স্থাপত্যকর্মের ডিজাইনের জাতীয় রূপ অনুসন্ধান করেছেন।  

       লিয়াং সি ছেন ছিলেন চীনের সর্বাগ্রে বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম তদন্ত ও গবেষণা এবং স্থাপত্য সম্পর্কিত দলিলগুলো সাজানোকারী পণ্ডিতদের মধ্যে একজন। তাঁর লেখা রচনা ও নিবন্ধগুলো হচ্ছে চীনের স্থাপত্য মহলের মূল্যবান সম্পদ।  

উ লিয়াং ইউন

      উ লিয়াং ইউন ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউ. আই. এ.’র সহসভাপতি এবং ডাবলিউ. এস.ই.’র সভাপতি ছিলেন। তিনি হচ্ছেন নয়াচীনের স্থাপত্য ও শহর নির্মান পরিকল্পনার একজন অগ্রদূত। তিনি চীনের স্থাপত্য ও শহর নির্মান পরিকল্পনা শিক্ষা সম্পর্কিত ধারাবাহিক চিন্তাধারা ও প্রস্তাব উত্থাপন করে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থাপত্য ও শহর নির্মান পরিকল্পনা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার পরিকল্পিত ও ডিজাইনকৃত প্রতিনিধিত্বমূলক স্থাপত্যকর্ম পেইচিংয়ের চিউ আর রাস্তার নতুন চকমিলানো বাড়ি প্রকল্প জাতিসংঘের ১৯৯২ সালের গৃহ পুরষ্কার, এশিয় স্থাপত্য সমিতির শ্রেষ্ঠ ডিজাইন স্বর্ণ পুরষ্কার এবং চীনের স্থাপত্য সমিতির শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য সৃষ্টি পুরস্কার পেয়েছে। তাঁর পরিচালনাধীন রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিজ্ঞান তহবিলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অর্থাত্ উন্নত অঞ্চলের নগরায়ন প্রক্রিয়ায় স্থাপত্য পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের গবেষণা আন্তর্জাতিক উন্নতমানের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাফল্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।

চাং খাই চি

      চাং খাই চি হচ্ছেন চীনের প্রথম প্রজন্মের স্থপতি। ১৯১২ সালে সাংহাইয়ে তাঁর জন্ম। ১৯৩৫ সালে তিনি নানচিং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক হন। তিনি বেইচিংয়ের স্থাপত্যকর্মের ডিজাইন গবেষণাগারের প্রধান স্থপতি, পেইচিং পৌর সরকারের স্থাপত্য বিষয়ক উপদেষ্টা এবং চীনের স্থাপত্য সোসাইটি পরিষদের উপপ্রধান ছিলেন। ১৯৯০ সালে পূর্ত মন্ত্রণালয় তাঁকে “স্থাপত্য ডিজাইন মাষ্টার” খেতাব প্রদান করে। তিনি থিয়েন আন মেন গ্যালারি, বিপ্লব যাদুঘর, ইতিহাস যাদুঘর, তিয়াও ইয়ু থাই রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন, পেইচিং প্ল্যানেটোরিয়াম ইত্যাদি স্থাপত্যকর্মের ডিজাইন করেছেন।

ইয়াং থিন পাও

       ইয়াং থিন পাও(১৯০১--১৯৮২)। তিনি ১৯২১ সালে মার্কিন পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েভর্তি হন এবং ১৯২৪ সালে এমার্সন পুরস্কার প্রতিযোগিতার প্রথম শ্রেণীর পুরস্কার এবং মার্কিন মিউনিসিপাল আর্ট সোসাইটি পুরস্কার প্রতিযোগিতার প্রথম শ্রেণীর পুরস্কার পান।  

       গত শতাব্দীর ২০’র দশকের শেষ দিক থেকে ইয়ং টিং বাও প্রধানতঃ শেনইয়ং রেল স্টেশন, পেইচিংয়ের পরিবহন ব্যাঙ্ক, নানচিংয়ের কেন্দ্রীয় হাস্পাতাল, ছিংহুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সম্প্রসারণ প্রকল্প, নানচিংয়ের সান উয়াত্-সেন সমাধি স্থলের সংগীত মঞ্চ, শেনইয়ংয়ের উত্তর-পূর্ব বিশ্ববিদ্যালয়, পেইচিংয়ের শান্তি হোটেল ইত্যাদি স্থাপত্যের নকশা করেছেন। তা ছাড়া, তিনি পেইচিংয়ের মহা গণ ভবন, পেইচিং রেল স্টেশন, পেইচিং গ্রন্থাগারের নতুন ভবন, চেয়ারম্যান মাওয়ের স্মৃতি ভবন প্রভৃতি প্রকল্পের নকশার কাজেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর জীবনে পরিচালনা, অংশগ্রহণ বা নির্দেশ দিয়েছেন এমন স্থাপত্যের সংখ্যা শতাধিক। ইয়ং টিং বাও স্থাপত্য নকশা করার সময়রাষ্ট্রীয় অবস্থা বিবেচনা করেন, পরিবেশকে গুরুত্ব দেন, ভালোভাবে চীন ও পাশ্চাত্যের স্থাপত্যের ঐতিহ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার করেন । তিনিআধুনিক চীনের স্থাপত্যের স্টাইল প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস অনুসন্ধান করেছেন। শিক্ষাদানে তিনি ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক কৌশল এবং নকশার পদ্ধতির প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেন, বাস্তবঅনুশীলন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে উত্সাহিতকরেন।