চীনের আধুনিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্থাপত্যকর্ম

সাংহাইয়ের হো ফিন হোটেল

       সাংহাইয়ের হো ফিন হোটেল অর্থাত্ শান্তি হোটেল ১৯২৯ সালে নির্মিত। আগে এর নাম ছিলো হুয়া মাও হোটেল। এটি চিকাগো স্থাপত্য সম্প্রদায়ের গথিক স্থাপত্যকর্ম। এর উচ্চতা সাতাত্তর মিটার। মোট বারো তলা। এর বাইরের দেওয়াল গ্রানাইট পাথর দিয়ে গেঁথে গেঁথে তৈরি। এর রয়েছে পিরামিড ধরণের সবুজ ব্রোন্জের টালি ছাওয়া সরু টাওয়ারের মতো বিল্ডিং , ঘূর্ণমান গেট, প্রশস্ত হলঘর ও বারান্দা, ইতালির মার্বেল পাথরের মেঝ ও থাম। ব্রোন্জ রঙের প্রাচীন ধরণের বাতি এবং স্বতন্ত্র নয়টি রাষ্ট্রের রীতির বিশেষ সূয়িট ইত্যাদি। গোটা স্থাপত্যকর্মসুন্দর ও সরল। এর “দূরপ্রাচ্যের এক নম্বর বিল্ডিং” এর সুনাম আছে।

নানচিংয়ের ইয়াত্ সেনের সমাধি

       নানচিং শহরের পূর্ব উপকন্ঠের চুং সান পাহাড়ে অবস্থিত ইয়াত্ সেনের সমাধি হচ্ছে চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান অগ্রদূত সুন ইয়াত্ সেনের সমাধি । পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নির্মিত গোটা সমাধির স্থাপত্যকর্মপুঞ্জ দেখতে সুমহত্ । গোটা সমাধি এলাকার সমতলের আকার একটা অতিকায় ঘন্টার মতো। ঘন্টার চূড়োয় পাহাড়ের পানদেশের অর্ধচন্দ্রাকার মহাচত্বর। ইয়াত্ সেনের সমাধি দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত মধ্যরেখা বেয়ে ক্রমে উপরে উঠে গেছে। মহাচত্বর থেকে যথাক্রমে পাথরের খিলান, সমাধিগামী পথ, সমাধির গেট, সমাধিপ্রস্তর প্যাভিলিয়ন, স্মৃতি-ঘর ও সমাধি-ঘর। ইয়াত্ সেনের সমাধির স্থাপত্যরীতিতে চীনের স্থাপত্যরীতি ও পাশ্চাত্যের স্থাপত্যরীতির সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। চুং সান পাহাড়ের মহত্ পরিস্থিতি ও সমাধিস্থলের বিভিন্ন স্থাপত্যকর্ম বিস্তীর্ণ সবুজ এলাকা ও দীর্ঘ সোপানের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। দেখতে খুবই মহিমাময়। এই সমাধিকে “চীনের সাম্প্রতিক যুগের স্থাপত্যের ইতিহাসের এক নম্বর সমাধির” আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

(ছবিঃ ইয়াত্ সেনের সমাধি)


মহা গণ ভবন 

       পেইচিংয়ের থিয়েন আন মেন মহাচত্বরের পশ্চিম পাশ্বে অবস্থিত মহা গণ ভবন হচ্ছে চীনের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তত্পরতা আয়োজনের স্থান এবং একই সময় চীনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনমূলক একটি স্থাপত্যকর্মও বটে। মহা গণ ভবন ১৯৫৯ সালে নির্মিত । এর মোট মেঝের আয়তন এক লক্ষ সত্তর হাজার বর্গমিটারেরও বেশি। এটা দেখতে অত্যন্ত মহত্ ও মহিমাময়। হলুদ ও সবুজের পালাবদলের টালি ছাওয়া ছাদ, সুউচ্চ ও সুবিরাট বারান্দার থামগুলো এবং চারদিকের স্পষ্ট গ্র্যাডেশনের স্থাপত্যকর্মগুলো নিয়ে থিয়েন আন মেন মহাচত্বরের একটি সামগ্রিক মহত্ ও সুন্দর চিত্র গড়ে উঠেছে। মহা গণ ভবনে মোট এক শো’টিরও বেশি হলঘর ও সভাকক্ষ আছে। প্রতিটি হলঘর ও সভাকক্ষের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে। মহা গণ ভবনের স্থাপত্যরীতিতে শুধু চীনের ঐতিহ্যিক ডিজাইনের ধারণাই বজায় রাখা হয় নি, বরং বিদেশের ভালো স্থাপত্যরীতিও আহরণ করা হয়েছে । গোটা বিন্যাস খুবই রুচিসম্মত এবং বৈশিষ্টপূর্ণ।

পেইচিংয়ের সিয়াং সান হোটেল

       পেইচিংয়ের পশ্চিম উপকন্ঠের সিয়াং সান পার্কের ভেতরে অবস্থিত সিয়াং সান হোটেল ১৯৮২ সালে তৈরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত আহ্ মিঙ ফেই স্থপতি কার্যালয় এর ডিজাইন করেছে। স্থাপত্যরীতিতে চীনের উদ্যান স্থাপত্যরীতির বৈশিষ্ট্য আহরণ করা হয়েছে। স্থাপত্যকর্মের দেওয়ালে বড় আয়তনে সাদা প্রলেপ ব্যবহার করা হয়েছে। সোজাভাবে দেখতে গেলে স্থাপত্যকর্মটি দুর্গার মতো। দেওয়ালের ছিদ্রগুলো সব খুবই নিয়মমাফিক। সিয়াং সুন হোটেলের আঙিনা ধরণের স্থাপত্যরীতিতে যেমন দক্ষিণ চীনের উদ্যানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মের বৈশিষ্ট রয়েছে, তেমনি উত্তর চীনের উদ্যানের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মের বৈশিষ্ট রয়েছে, তেমনি উত্তর চীনের উদ্যানের মতো বিশাল অবকাশ রাখা হয়েছে। গোটা স্থাপত্যকর্ম যেমন চীনের ঐতিহ্যিক উদ্যান স্থাপত্যরীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, তেমনি আধুনিককালের পর্যটনশিল্পের চাহিদাও মেটাতে পারে। সিয়াং সান হোটেল ১৯৮৪ সালে মার্কিন স্থাপত্য সোসাইটির সাম্মানিক পুরষ্কার পেয়েছে।

ছিন হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের নতুন ভবন 

       ১৯৯১ সালে নির্মিত নতুন ভবন ১৯১৯ ও ১৯৩১ সালে দু’বারে নির্মিত পুরোনো গ্রন্থাগারের সঙ্গে সুষমভাবে সংযুক্ত হয়ে গিয়ে একাকার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের কেন্দ্রস্থলের বৃহত্তম স্থাপত্যকর্মে পরিণত হয়েছে। আগেকার পুরানো স্থাপত্যকর্মের সঙ্গে কিভাবে সুষমভাবে সংযুক্ত হয়ে গিয়ে একাকার হতে পারে তা প্রতিটি নতুন স্থাপত্যকর্মের সম্মুখীণ সমস্যা। ছিন হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের নতুন ভবন এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এই স্থাপত্যকর্ম গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের পেইচিংয়ের দশটি প্রধান স্থাপত্যকর্মের তালিকাভুক্ত হয়েছে।

বিদেশী ভাষার শিক্ষাদান এবং গবেষণা প্রকাশনালয়ের অফিস ভবন

       এটা হচ্ছে কার্যালয়, বাণিজ্য, অভ্যর্থনা ইত্যাদি উপাদান মিলিয়ে একটি সার্বিক স্থাপত্য। এই ভবন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভালো মেলাবন্ধন ঘটিয়েছে। এর আকার বৈশিষ্ট্য, রং এবং সাজানোর পদ্ধতি বেশ আকর্ষণীয়। এটি জানালা দিয়ে উত্স-মূলকে রুমের বাইরে এবং ভিতরে ভাগ করেছে, গাছের উপর একটি সেতু দিয়ে ইটের লাল রংয়ের স্থাপত্যের দু’ভাগ সংলগ্ন করা হয়েছে এবং একটি প্রাকৃতিক বাদান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ভবন হচ্ছে গত শতাব্দীর ৯০’র দশকে পেইচিংয়ের শ্রেষ্ঠ দশটি স্থাপত্যের অন্যতম।

সাংহাইয়ের চিন মাও অট্টালিকা 

       সাংহাইয়ের পু তুংয়ের হুয়াং ফু নদীর তীরে অবস্থিত “চীনের উচ্চতর ভবন” নামে পরিচিত জিন মাও ভবন ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে নির্মিত হয়েছে।  

       “চীনের উচ্চতম অট্টালিকা” বলে পরিচিত সাংহাইয়ের চিন মাও অট্টালিকার উচ্চতা ৪২০ মিটারেরও বেশি। এর প্রধান অংশ ৮৮তলা। এটা শুধু এ পর্যন্ত চীনের উচ্চতম অট্টালিকাই নয়, বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম অট্টালিকাও বটে। চিন মাও অট্টালিকার মোট মেঝের আয়তন দুই লক্ষ নব্বই হাজার বর্গমিটার।  

       এর ডিজাইন ও নির্মানে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে চীনের স্থাপত্যরীতির সুন্দর সংযুক্তকরণ প্রতিফলিত হয়েছে এবং চীনের স্থাপত্যের ইতিহাসের কয়েক ডজন দিক বিশ্বের সেরা ও চীনের সেরা অট্টালিকার মর্যাদা পেয়েছে। এটা হচ্ছে আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের আদর্শ স্থাপত্যকর্ম এবং প্রধানতঃ চীনাদেরই নির্মিত বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর স্থাপত্যকর্ম।