সুং রাজবংশের আমলের স্থপত্যকর্ম


       ৯৬০ খৃষ্টাব্দ থেকে ১২৭৯ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী সুং রাজবংশের আমল ছিলো চীনের প্রাচীনকালের রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে দুর্বল আমল। কিন্তু এসময় অর্থনীতি, হস্তশিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিকাশ সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিরাট অগ্রগতি হয়েছে। সৌন্দর্য্যই এই সময়পর্বের স্থাপত্যকর্মগুলোর বৈশিষ্ট।

       সুং রাজবংশ আমলের শহরে রাস্তাগুলোর দু’ধারে দোকানপাট খোলা ও পরিবহন, দোকানপাট, সেতু ইত্যাদি স্থাপত্যকর্মের নতুন বিকাশ হয়েছে। পেই সুং রাজবংশের রাজধানী বিয়ান লিয়ান (এখনকার হোনান প্রদেশের খাই ফোং) এর চেহারা ছিলো পুরোপুরি একটি বাণিজ্য নগরের চেহারা। এই সময়পর্বের চীনের স্থাপত্যকর্মে প্রধান স্থাপত্যকর্মকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য শূন্যের গভীরতার উপর জোর দেওয়া হতো এবং স্থাপত্যকর্মের শোভাবর্ধন ও রঙ দেওয়ার কাজের উপর জোর দেওয়া হতো। সানসি প্রদেশের থাই ইউয়ান শহরে অবস্থিত চিন মন্দিরের ভেতরের সামনের প্রাসাদ এবং মাছের পুকুরের উপর নির্মিত দেখতে পাখির ডানা মেলার মতো আকারের সেতুটি হচ্ছে আদর্শ সুং রাজবংশের আমলের স্থাপত্যকর্ম।

(ছবিঃ মাছের পুকুরের উপর নির্মিত, দেখতে পাখির ডানা মেলার মতো আকারের সেতু।  )

       সুং রাজবংশ আমলের ইট ও পাথরের তৈরি স্থাপত্যকর্মের মান বেড়ে চলে। তখনকার প্রধান প্রধান ইট ও পাথরের তৈরি স্থাপত্যকর্ম হলো বৌদ্ধ প্যাগোডা ও সেতু। চেচিয়াং প্রদেশের হানচৌ শহরের লিন ইং মন্দিরের প্যাগোডা, হোনান প্রদেশের খাই ফোং শহরের ফেন প্যাগোডা আর হোপেই প্রদেমের চাও জেলার ইউন থং সেতু ইত্যাদি আদর্শ সুং রাজবংশ আমলের ইট ও পাথরের তৈরি স্থাপত্যকর্ম।  

       সুং রাজবংশ আমলে চীনের আর্থসমাজের নির্দিষ্টমাত্রার বিকাশ হয়। শৈল্পিক ভাবের উপর জোর দানকারী উদ্যানগুলোর নির্মান এই সময়পর্বে শুরু হয়। চীনের প্রাচীন উদ্যানগুলোর স্থাপত্যরীতিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে কৃত্রিম সৌন্দর্যের সমন্বয় সাধিত হয়। শৈল্পিক ভাব ফুটিয়ে তোলার জন্য স্থাপত্যকর্মের সঙ্গে কৃত্রিম পাহাড়, পুকুর, পাথর, ফুল ও গাছ ইত্যাদিও নির্মান করা হয়। অপেক্ষাকৃত প্রতিনিধিমূলক সুং রাজবংশ আমলের উদ্যানগুলোতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে সু ইউ ছিনের ছাং লাং প্যাভিলিয়ন ও সি মা কুয়াংয়ের দু লা উদ্যান।  

        সুং রাজবংশে জারীকৃত “নির্মান পদ্ধতি” নামে পূর্ণাংগ স্থাপত্য প্রযুক্তির বিশেষ রচনা থেকে দেখা যায়, চীনের স্থাপত্যকর্মের নির্মান প্রযুক্তি ও নির্মান ব্যবস্থাপনার মান নতুন স্তরে উন্নীত হয়েছে।