চীনের প্রাচীন স্থাপত্যকর্মগুলোরঅধিকাংশই হানজাতির কাঠের তৈরি স্থাপত্যকর্ম। তাছাড়া বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকর্মগুলোও রয়েছে। এইসব প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ভিত্তিতে জন্ম নেয় এবং বিকশিত ও পরিপক্ক হয়। খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার ও স্বাধীন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এগুলোর খুবই উচ্চ নন্দন তাত্ত্বিক মূল্য ও শৈল্পিক মান আছে। চীনের প্রাচীন স্থাপত্যশিল্প হলো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কাল স্থায়ী, সবচেয়ে বেশি এলাকায় বিস্থিত এবং খুবই স্পষ্ট স্থাপত্যরীতিবিশিষ্ট একটি স্বতন্ত্র শিল্প ব্যবস্থা । এই শিল্প ব্যবস্থা জাপান, উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনামের প্রাচীন স্থাপত্যকর্মগুলোরউপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর পর ইউরোপের স্থাপত্যকর্মগুলোর উপরও প্রভাব ফেলেছে।
চীনের ভূভাগ বিশাল এবং জাতিগুলোর সংখ্যা বেশি। প্রাচীন চীনারা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থা অনুসারে বিভিন্ন কাঠামোর ও বিভিন্ন স্থাপত্যরীতির প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম নির্মাণ করেছেন। উত্তরচীনের হুয়াংহো নদীর অববাহিকায় প্রাচীন চীনারা শীত ও ঝড়তুষার প্রতিরোধের জন্য কাঠ ও হলুদ মাটি দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতেন। আর দক্ষিণ চীনে নির্মাণ উপকরণের মধ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাঁশ ও আল-খাগড়া। কিছু কিছু এলাকায় আদ্রতা এড়ানো ও বায়ুর চলাচল বাড়ানোর জন্য ঘরবাড়ির চীচে শুষ্ক রেলিংও নির্মাণ করা হতো।
চীনের প্রাচীন স্থাপত্যকর্ম তিনটি প্রধান সময়পর্বের মধ্যে দিয়ে বিকশিত হয়েছে। এই তিনটি সময়পর্ব হলো ছিং ও হান রাজবংশের সময়পর্ব। সুই ও থান রাজবংশের সময়পর্ব এবং মিন ও ছিন রাজবংশের সময়পর্ব। এই তিনটি সময়পর্বে প্রাসাদ, সমাধি, রাজধানি নগর, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জলসেচ প্রকল্প ইত্যাদিসহ বিপুলসংখ্যক প্রতিনিধিমূলক স্থাপত্যকর্ম নির্মিত হয়েছে এবং এগুলোর স্থাপত্যরীতি ও নির্মাণ উপকরণ বাছাই ইত্যাদি ক্ষেত্রের প্রভাব তারপরের স্থাপত্যকর্মগুলোর উপরও পড়েছে।
কিন্তু সুদীর্ঘকাল এবং যুদ্ধবিগ্রহে ধ্বংস হওয়ার জন্য কিছু সুপ্রাচীন স্থাপত্যকর্ম চীনের ভূভাগে আর দেখা যায় না। এপর্যন্ত চীনের যে প্রাচীন স্থাপত্যকর্মগুলো সংরক্ষিত রয়েছে তার বেশি ভাগ থান রাজবংশের পর অর্থাত্ সপ্তম শতাব্দীর পর নির্মিত।
|