সমাধি স্থাপত্যকর্ম


       সমাধি স্থাপত্যকর্মহলো চীনের প্রাচীন স্থাপত্যকর্মগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনের প্রাচীনকালের লোকেরা মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মর মৃত্যু হয় না এই রকম ধারণা পোষণ করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার উপর ব্যাপক গুরুত্ব দিতেন। তাই সমাজের সব স্তরের লোকেরা খুব মনোযোগ দিয়ে সমাধি নির্মান করতেন। সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় চীনের সমাধি স্থাপত্যকর্মের যথেষ্ট অগ্রগতি হয় এবং বিশ্ববিরল ও সুবিরাট প্রাচীনকালের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীদের সমাধিপুঞ্জের আবির্ভাব হয়। বরং ঐতিহাসিক বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সমাধি স্থাপত্যকর্ম ক্রমে ছবি আঁকা, হস্তলিপি, খোদাইকর্ম ইত্যাদি শৈল্পিক শাখার সঙ্গে মিশে গিয়ে একাধিক ধরণের শৈল্পিক সাফল্যের প্রতিফলনকারী সামগ্রিক সত্ত্বায় পরিণত হয়েছে।

       সমাধি স্থাপত্যকর্ম হলো চীনের প্রাচীন স্থাপত্যকর্মের মধ্যে সবচেয়ে মহত্ ও সবচেয়ে বিরাট স্থাপত্যকর্ম সাধারণত: প্রাকৃতিক ভৌগলিক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত। অল্প কিছু সমতলভূমিতে নির্মিত। চীনের বেশিরভাগ সমাধির কাঠামো এরকম: চারিদিকে প্রাচীর ঘেরা, চারদিকেই দরজা এবং চার কোণে টাওয়ার। সমাধির সামনে রাস্তা, সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে চিরসবুজ পাইনগাছ ও সাইপ্রেস গাছ, পরিবেশটা গাম্ভীর্যপূর্ণ ও শান্ত।  

ছিং সম্রাটের সমাধি  

       শেনসি প্রদেশের সিয়ান শহরের লিশান পাহাড়ের উত্তর পাদদেশে দুই হাজার বছরেরও আগে নির্মিত ছিং সম্রাটের সমাধি হলো চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত সমাধি। “ বিশ্বের অষ্টম মহা বিষ্ময়” বলে পরিচিত ছিং সম্রাটের সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তিগুলো হলো এই সমাধি রক্ষাকারী “ বাহিনী” । এইসব মূর্তি খুবই প্রাণবন্ত। এদের খোদাই ও নির্মানের কৌশল খুবই অসাধারণ। এটি উনিশশো সাতাশি সালে “ বিশ্ব উত্তরাধিকার-সম্পত্তির তালিকা”-ভুক্ত হয়েছে। বিশ্ব উত্তরাধিকার-সম্পত্তি কমিটি এভাবে মূল্যায়ন করেছে যে, ছিং সম্রাটের সমাধির চারদিকের সেইসব বিখ্যাত মাটির তৈরি মূর্তিগুলোর ভাবভঙ্গী বিভিন্ন রকম, তাদের যুদ্ধঘোড়া, যুদ্ধযান আর অস্ত্রশস্ত্র সহ সেগুলো হচ্ছে বাস্তবতাবাদের নিখুঁত্ সৃষ্টিকর্ম এবং একই সময় এগুলো খুবই উচ্চ ঐতিহাসিক মূল্যও বজায় রেখেছে।

ছবি: ছিং সম্রাটের সৈনিক ও ঘোড়ার মূর্তি

       শেনসি প্রদেশের সিয়ান শহরের নিকটে চীনের সম্রাটদের বেশ কিছু সমাধি কেন্দ্রীভূত রয়েছে। ছিং সম্রাটের সমাধি এবং থান রাজবংশের আঠারোজন সম্রাটের সমাধিও এখানে রয়েছে। এর মধ্যে সি হান রাজবংশের সম্রাট লিউ ছে’র সমাধি, মাও লিন সমাধি, সি হান রাজবংশের সম্রাটদের সমাধিগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। সমাধিস্থ মূল্যবান সামগ্রীও এখানে সবচেয়ে বেশি। চাও লিন সমাধি হলো থান রাজবংশের সম্রাট লি সি মিনের সমাধি। সমাধিস্থলের আয়তন খুবই বিরাট। এর ভেতরে আরো রয়েছে সতেরোটি কীর্তিমান উজীর ও অভিজাত আত্মীয়ের সমাধিসংগী। চাও লিন সমাধির ভূর্গভ ও মাটির উপরের সর্বত্রই মূল্যবান পুরাকীর্তি। এইসব পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো থান রাজবংশের নিখুঁত খোদাইকর্ম “ লিউ চুন থু” অর্থাত্ ছ’টি তেজী ঘোড়ার চিত্র।  

মিন আর ছিন রাজবংশের সম্রাটদের সমাধি  

       মিং এবং ছিং রাজামলের সম্রাটদের কবর হচ্ছে চীনের সম্রাটের কবরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত স্থাপত্য।

       মিন রাজবংশের সম্রাটদের সমাধিগুলো প্রধানত: পেইচিংয়ের ছাংপিনে অর্থাত্ সি সান লিনে মানে তেরোটি সমাধিস্থলে অবস্থিত। এই তেরোটি সমাধি হলো পেইচিংকে মিন রাজবংশের রাজধানী হিসেবে ধার্য করার পরে মিন রাজবংশের তেরোজন সম্রাটের সমাধিপুঞ্জ। এর আয়তন চল্লিশ বর্গকিলোমিটার। মিন রাজবংশের তেরোটি সমাধি হলো চীনের অভ্যন্তরে এপর্যন্ত সংরক্ষিত সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত ও সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সমাধি স্থাপত্যকর্মপুঞ্জ। এর মধ্যে মিন রাজবংশের সম্রাট চু দি’র সমাধি, ছান লিন সমাধি এবং মিন রাজবংশের সম্রাট চু ই চুনের সমাধি, তিন লিন সমাধির ভূগর্ভস্থ প্রাসাদে পাথরের খিলানের গঠন মজবুত রয়েছে। চারদিকের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো রয়েছে। পানি জমেছে এমন জায়গা খুবই কম। একটি পাথরের খিলানও ধ্বসে পড়ে নি। এতে চীনের প্রাচীনকালের লোকদের ভূগর্ভস্থ স্থাপত্যকর্ম নির্মাণের উচ্চ প্রযুক্তি পুরোপুরি প্রদর্শিত হয়েছে।

       চীনে এপর্যন্ত সংরক্ষিত সমাধি স্থাপত্যকর্মগুলোর মধ্যে আকারে সবচেয়ে মহত্, স্থাপত্য ব্যবস্থার দিক থেকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ রাজসমাধিস্থল ছিন রাজবংশের তুং লিন সমাধিস্থলের আয়তন আটাত্তর বর্গকিলোমিটার।

       এর মধ্যে সমাহিত রয়েছেন ছিন রাজবংশের পাঁচজন সম্রাট, চৌদ্দজন সম্রাজ্ঞী ও সম্রাটের শতাধিক উপপত্মী।এর ভেতরের প্রধান প্রধান সমাধি স্থাপত্যকর্ম খুবই সূক্ষ্মসুন্দর।