চীনের ধর্মনীতি


       ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চীন সরকার ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা নীতি প্রনয়ন করেছে এবং দেশের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাজনীতি ও ধর্মের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। চীনের নাগরিকরা অবাধে নিজেদের ধর্ম বাছাই করতে পারেন এবং কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন সেই পরিচয় দিতে পারেন। চীনে সব ধর্ম মর্যাদার দিক থেকে সমান। এখানে সবধর্মের লোকেরা মিলেমিশে থাকেন বলে তাদের মধ্যে কখনো ধর্মীয় সংঘর্ষ ঘটে নি। ধর্মাবলম্বী আর ধর্ম নিরপেক্ষ নাগরিকরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল , ঐক্যবদ্ধ আর সহাবস্থানে থাকেন।

       চীন গণপ্রজাতন্ত্রের সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, চীন গণপ্রতাতন্ত্রের নাগরিকদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা আছে। কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা, সমাজ গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তিকে ধর্ম বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে পারবে না, কিংবা ধর্মাবলম্বী ও ধর্ম নিরপেক্ষ নাগরিকদের অবহেলা করতে পারবে না। সংবিধানে এও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তিকে ধর্মীয় কাজে লাগিয়ে সমাজের শৃংখলায় বেঘাত করা, নাগরিকদের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করা আর দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করার তত্পরতা চালানো যাবে না। ধর্ম গোষ্ঠী আর ধর্মীয় বিষয় বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়।  

       চীনের সংখ্যালঘুজাতির আঞ্চলিক স্বশাসন আইন, দেওয়ানী আইন, শিক্ষা আইন, শ্রম আইন , বাধ্যতামূলক শিক্ষা আইন, গণ কংগ্রেসের নির্বাচন আইন, গ্রামবাসী কমিটির সাংগঠনিক আইন আর বিজ্ঞাপন আইন প্রভৃতি আইনে আরো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যে ধরনের ধর্ম বিশ্বাসই করুক না কেন, নাগরিকদের নির্বাচন অধিকার আর পদপ্রার্থী হওয়ার অধিকার রয়েছে। ধর্মীয় গোষ্ঠী আইনসংগত সম্পত্তি আইনের রক্ষা ভোগ করবে। শিক্ষা এবং ধর্ম পৃথক বিষয়। নাগরিকরা যে ধরনের ধর্ম বিশ্বাস করুক না কেন, আইন অনুসারে তারা শিক্ষা গ্রগণের সমান সুযোগ ভোগ করবে। বিভিন্ন জাতির উচিত পরস্পরের ভাষা ও লিপি , আচার ব্যবহার আর ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীন মর্যাদা প্রদর্শন করা। কর্মসংস্থানের ব্যাপারে ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসী বলে অবহেলিত হবেন না এবং বিজ্ঞাপন আর ট্রেড মার্কে সংখ্যালঘুজাতিও ধর্মের প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করবে না।  

       ১৯৯৪ সালের জানুয়ারী মাসে ধর্মীয় আচারের স্থানের আইনসংগত অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য চীন সরকার ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম স্থানের পরিচালনা নিয়মবিধি প্রকাশ করেছে। একই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে চীনের অভ্যন্তরে বিদেশীদের ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনার নিয়মবিধিও প্রকাশ করেছে। এতে চীনের অভ্যন্তরে বিদেশীদের ধর্ম প্রচারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা হয়েছে এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে চীনের ধর্মীয় মহলের সঙ্গে বিদেশীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সফর বিনিময় আর সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের আদান সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

       চীনের সংশ্লিষ্ট আইনে আরো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, ধর্ম প্রচারকরা যে স্বাভাবিক ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম চালান আর ধর্মীয় উপাসনালয়ে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে নিজেদের ভাষায় ধর্মাবলম্বীরা যে সকল ধর্ম ক্রিয়াকর্ম চালান, যেমন বুদ্ধকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা, ধর্মীয় সূত্র পাঠ করা, নামাজ পড়া, দেবতার প্রতি প্রার্থনা করা, ধর্মীয় রচনা পড়ানো, ধর্মপ্রচার করা, ম্যাস, ব্যাপটিস্ট, নানহুদ , রোজা রাখা, ধর্মীয় উত্সব পালন ইত্যাদি, সেগুলো ধর্মীয় সংস্থা আইনগত রক্ষিত এবং এইক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির হস্তক্ষেপ করা যাবে না।  

       বিশ্বের বহু দেশের মতো চীনে শিক্ষা থেকে ধর্মকে আলাদা বিষয়ক নীতি করা হয়েছে। নাগরিকদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় না। আংশিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর গবেষণাগারে ধর্মীয় শিক্ষা এবং গবেষণার কাজ চালানো হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থার পরিচালনাধীন ধর্মীয় তত্ত্ব ইন্সটিটিউটে যার যার ধর্মের চাহিদা অনুযায়ী ধর্মীয় পেশাগত শিক্ষা চালানো হয়।  

       দীর্ঘকালীন ঐতিহাসিক উন্নয়নে চীনের বিভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতি চীনের ঐতিহ্যিক মতাদর্শ আর সংস্কৃতির অংশে পরিনত হয়েছে। বিভিন্ন ধর্ম সমাজের সেবা আর মানুষের উপকার করার মত প্রচার করে।