চীনে প্রধান প্রধান ধর্ম


      বৌদ্ধ ধর্ম

       বৌদ্ধ ধর্ম খৃষ্টপূর্ব প্রথমশতাব্দিতে বিদেশ থেকে চীনে প্রবেশ করে। খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দির পর তা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করে। এবং ধীরে ধীরে চীনের বৃহত্তম প্রভাবশালী ধর্মে পরিনত হয়। চীনের বৌদ্ধধর্ম তিনটি বৃহত্ত ভাষা ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। অর্থাত্ হান ভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্ম, তিব্বতী ভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্ম আর পালি ভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্ম। এই তিনটি বৃহত্ ভাষা ব্যবস্থার সন্ন্যাসীদের সংখ্যা ২ লক্ষ। বর্তমানে চীনে বৌদ্ধ ধর্মের মন্দিরের সংখ্যা ১৩ হাজার। বৌদ্ধধর্ম ইন্সটিটিউটের সংখ্যা ৩৩ আর বৌদ্ধ ধর্মের পত্রিকার সংখ্যা পঞ্চাশে দাঁড়িয়েছে।

       তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম চীনের বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখা। তা প্রধানতঃতিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল, মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, ছিংহাই প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচলিত । তিব্বতী জাতি, মঙ্গোলিয় জাতি, ইউকুও জাতি , মেনবা জাতি, লোবা জাতি আর থুবা জাতির লোকেরা তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাস করে। তাদের লোকসংখ্যা ৭০ লক্ষ। পারিভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্ম প্রধানতঃ দক্ষিণ পঞ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের সিসানপেননান তাই জাতির স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল, তেন হোন তাই জাতির চিংফু জাতির স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল আর সি মাও প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাই জাতি, পু লাং জাতি, আ ছাং জাতি আর ওয়া জাতির বেশীর ভাগ লোকেরা পালি ভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাস করেন। এই ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ১০ লক্ষেরও বেশী। হান জাতির লোকভিত্তিক হানভাষা ব্যবস্থার বৌদ্ধধর্মাবলম্বী চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে।

( ছবিতে চীনের চেইচিয়াং প্রদেশের প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ ধর্ম মন্দির-নিন পু শহরের লিন সি সি মন্দির দেখা যাচ্ছে )


তাও ধর্ম

       খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দিতে চীনে তাও ধর্মের জন্ম। এই ধর্মের ইতিহাস প্রায় ১ হাজার ৮ শো বছরেরও পুরনো। তাওধর্মের লোকেরা চীনের প্রাচীনকালের প্রকৃতি আর পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশে গূজা নিবেদন করেন। এই ধর্মের বহু সম্প্রদায় ছিলো। পরে ধীরে ধীরে এই ধর্ম ছুয়েন চেন তাও আর চেন ই তাও এই দুটো বড় সম্প্রদায়ে পরিনত হয়েছে। হান জাতির মধ্যে তাওধর্মের বেশ প্রভাব রয়েছে। তাও ধর্মাবলম্বী হওয়ার জন্য বিশেষ কোনো নিয়মবিধি নেই। ফলে এই ধর্মাবলম্বীদের সঠিক পরিসংখ্যান করা কঠিন। চীনে তাওধর্ম মন্দিরের সংখ্যা দেড় হাজার। এইসব মন্দিরে নরনারী ধর্ম-প্রচারকের সংখ্যা ২৫ হাজার।

(ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাও ধর্মের তীর্থস্থান-সিছুয়ান প্রদেশের ছিংছেন পর্বত )


ইসলাম ধর্ম

খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দি থেকে চীনে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু হয়। চীনের হুই, উইগুর , তাতার, কিরগিজ, কাজাক, উজবেক, তুংসিয়াং, সালা, বোআন প্রভৃতি সংখ্যালঘুজাতির ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের মধ্যে আধকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন। চীনের অধিকাআংশ মুসলমান সিনচিয়াং স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল , নিনসিয়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল আর কানসু, ছিআংহাই, ইউননান প্রভৃতি প্রদেশে বসে করেন। বর্তমানে চীনে ৩০ হাজারেরও বেশী মসজিদ আছে। এইসব মসজিদে ইমামের সংখ্যা ৪০ হাজার ।

(ছবিতে দেখা যাচ্ছে নিন সিয়া থুংসিং সমজিদ )

ক্যাথলিক ধর্ম

       খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দি থেকে চীনে ক্যাথলিক ধর্মের সম্প্রচার শুরু হয়। ১৮৪০ সালের আফিম যুদ্ধের পর ক্যাথলিক ধর্ম ব্যাপকভাবে চীনে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে চীনে ক্যাথলিক দরবারের ১ শো প্যারিশ আছে। ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ। গত বিশ বছরের অধিক সময়ে চীনের ক্যাথলিক দরবারের উদ্যোগে প্রায় দেড় হাজার অল্পবয়সী ধর্মপ্রচারককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ধর্মীয় তাত্ত্বিক জ্ঞান আরো উন্নততর করার জন্য একশ’রও বেশী অল্পবয়সী ধর্মপ্রচারককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া চীনের ক্যাথলিক দরবারের অধীনে মোট ৩ হাজার অল্পবয়সী সিস্টার আছেন। এরমধ্যে ২ শ জন সিস্টার আজীবণ সিস্টার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চীনে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার লোক ক্যাথলিক দরবারের কাছে ক্যাথলিমক ধর্মাবলম্বী হওয়ার আবেদন জানান। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ কপি বাইবেল ছাপানো হয়েছে।

(ছবিতে দেখা যাচ্ছে পেইচিংয়ের ওয়াংফুচিং রাস্তায় অবস্থিত ক্যাথলিক গীর্জা )

খ্রীষ্টান ধর্ম

       উনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে চীনে খ্রীষ্টান ধর্মের প্রচার শুরু হয়। আফিম যুদ্ধের পর চীনে এই ধর্মের প্রচার কাজ অনেক বেড়েছে। ১৯৫০ সালে খ্রীষ্টান ধর্ম মহলে সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব দূর করা, দেশপ্রেমিক মনোবল স্থাপন করা আর চীনের খ্রীষ্টান ধর্মের স্বশাসন , খরচের বিষয়ে আত্মনির্ভরতা বাস্তবায়ন আর নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে ধর্ম প্রচার বিকশিত করার জন্য একটি আন্দোলন চালানো হয়েছে। বর্তমানে চীনে ১ কোটি খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী আর ১৮ হাজার ধর্মপ্রচারক আছেন। ধর্মীয়কাজ চালানোর জন্য ১২ হাজার গীর্জা আর ২৫ হাজার অন্যান্য উপাসনালয় আছে।