চীনে সংখ্যালঘুজাতির গুরুত্বপূর্ণ উত্সব 


      চীনে সংখ্যালঘুজাতির উত্সব বেশি। সব জাতির নিজস্ব বিরাট উত্সব রয়েছে। যেমন তিব্বতী জাতির তিব্বতী নববর্ষ, তাই জাতির পানি বিচ্ছুরণ উত্সব, ই জাতির মশাল উত্সব, জুয়ান জাতির গান গাওয়া প্রতিযোগিতা আর মঙ্গোলিয়া জাতির নাদামো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। বেশকিছু অঞ্চলে তিব্বতী ক্যালেন্ডারের নববর্ষ আর কোরবানি, সরকারী উত্সব বলে ধার্য করা হয়েছে।  

কোরবানি উত্সব 

       কোরবানি উত্সব ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্যকহী বার্ষিক উত্সব। আরবী ভাষায় তাকে ঈদ-উল-আজহা বলে। কোরবানির অর্থ পশু জবাই। চীনে হুই জাতি, উইগুর জাতি, কাজাখ জাতি, উজবেক জাতি তাজিখ জাতি, তাতার জাতি, কিরগিজ জাতি, সালা জাতি, তুংসিয়াং জাতি, পাওআন জাতি প্রভৃতি ইসলাম ধর্মাবলম্বী জাতি এই উত্সব পালন করে। কোরবানি উত্সবের সময়, ইসলাম ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের দ্বাদশ মাসের ১০ তারিখ। এই উত্সবের আগে বাসায় বাসায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় আর উত্সবে ব্যবহার্য নানা রকম জল খাবার তৈরি করা হয়। উত্সবের দিন ভোরে মুসলমানরা গোসল করে পরিস্কার পোষাক পরে মসজিদে গিয়ে ইমামের পাঠ করা কোরান শুনেন এবং ঈদের নামাজ পড়েন। বাড়িতে বাড়িতে ভেড়া, উট বা গরু জবাই করে আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিলি করা হয় এবং অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়। সবাই এক সাথে খাসি, তেলে ভাজা জল খাবার আর তরমুজ ও ফল খেতে খেতে আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলেন। সিংচিয়াং উইগুর জাতির লোকেরা কোরবানি উত্সবের সময় বিরাটাকারের নৃত্য সংগীতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। কাজাখ, কিরগিজ, তাজিক, উজবেক প্রভৃতি জাতি উত্সবকালে ধাবমান অশ্বে আরোহন করে মেষ ধরার প্রতিযোগিতা, ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা, কুস্তি প্রতিযোগিতা প্রভৃতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে মুসলমানরা কোরবানি উদযাপন করছেন


ঈদ-উল-ফিতর  

       চীনে হুই জাতি, উইগুর জাতি, কাজাখ জাতি, উজবেক জাতি, তাজিক জাতি, তাতার জাতি, কিরগিজ জাতি, সালা জাতি, তুংসিয়াং জাতি, পাওআন জাতি প্রভৃতি সংখ্যালঘুজাতি মিলিতভাবে ঈদ-উল-ফিতর পালন করে। এই উত্সবের দিন তারিখ ইসলাম ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের দশম মাসের প্রথম দিন। প্রতি বছরের ইসলাম ধর্মীয় ক্যালেন্ডারের নবম মাসকে রমজানের মাস বলে। রমজান মাসের দিনের সংখ্যা ২৯ বা ৩০ । রমজান মাসে মুসলমানের সূর্যোদয়ের আগে ভরপেট খেয়ে নেয়। সূর্যোদয়ের পর পুরো দিন যতো ক্ষুধাই লাগুক না কেন, পানি সহ কিছুই খাওয়া যায় না। ধুমপায়ীরাও ধুমপান করতে পারেন না। এটাকে রোজা রাখা বলে। তাছাড়া রমজান মাসে দম্পতির যৌন সহবাসও নিষিদ্ধ করা হয়, যাতে আল্লাহ’র প্রতি আনুগত্য ব্যক্ত করা হয়। রমজান মাসে বাচ্চা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধ আর দুর্বলদের রোজা রাখতে হয় না। নারীদের রজঃস্রাবকালেও রোজা রাখা যায় না, কিন্তু তারা ইচ্ছা মতো খেতে পারেন না এবং গণব্যবহার্য স্থানে খাওয়া দাওয়া নিষিদ্ধ। রোগী আর যারা ভ্রমণের থাকেন, তাদেরও রোজা রাখতে হয় না,কিন্তু পরে তা পূরণ করে নিতে হয়। পূরণ করতে না পারলে জরিমানা হিসেবে তাদের টাকা পয়সা দান করতে হয়। সন্ধ্যাবেলায় সূর্য ডুবে গেলে মসজিদে ইফতারের ঘন্টার আওয়াজ বেজে উঠে। তখন খাদ্য গ্রহণ করা যায়। পথচারীদের যখন ক্ষিদে পায়, তখন তারা অপরিচিত বাসায় যেতে পারেন খাদ্য চাওয়ার জন্য। তারা স্বাগতিকদের অন্তরঙ্গ অভ্যর্থনা পান। 

       ঈদ-উল-ফিতরের উত্সব সমারোহের সঙ্গে আয়োজন করা হয়। ঈদ-উল-ফিতর আসার আগে মুসলনরা বাসায় রঙ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, চুল কাটেন আর গোসল করেন। যুবক-যুবতীদের বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণতঃ এই সময়ে আয়োজন করা হয়।  

তিব্বতী নববর্ষ  

       তিব্বতী নববর্ষ তিব্বতী জাতির সবচেয়ে আড়ম্বপূর্ণ আর ঝাকজমকপূর্ণ জাতীয় উত্সব। তিব্বতী বর্ষের প্রথম মাসের ১ তারিখে থেকে এই উত্সব ১৫ দিন পঠন্ড স্থায়ী। নববর্ষের প্রথম দিনে ভোর হতে না হতে উত্সবের পোষাক পরা যুবক যুবতীরা পরস্পরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিব্বতীরা নিকটবর্তী মন্দিরের বুদ্ধের সর্মীপে উপাসনা করতে যান, অথবা দলবদ্ধ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় নাচ গান করতে যান। কিন্তু তারা বন্ধ-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যান না। 


(ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিব্বতী নববর্ষে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা ) 

 

নাদামো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা  

       নাদামো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আন্তঃমঙ্গলিয়া, কান সু, ছিং হাই আর সিংচিয়াংয়ের মঙ্গলিয় জাতির লোকদের বার্ষিক ঐতিহ্যবাহী উত্সব। প্রতি বছরের জুলাই বা আগষ্ট মাসে গ্রীষ্মকালীন স্বর্ণযুগে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলিয় ভাষায় ‘নাদামো’ শব্দের অর্থ আমোদ প্রমোদ বা খেলাধূলা। নাদামো ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস আছে। আগে নাদামো চলাকালে বিরাটাকারের উপাসনার আয়োজন করা হতো। লামারা বুদ্ধের রক্ষা চাওয়া আর দুর্যোগ দূর করার জন্য ধুপ আর মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো। এখন নাদামো ক্রীড়া প্রতিযোগিতার প্রধান বিষয় কুস্ডি, ঘোড় দৌড় আর তীর নিক্ষেপ। কোনও কোনও অঞ্চলে দৌড়-ঝাপ-ভারনিক্ষেপ, দড়ি টানাটানি, ভলিবল, বাস্কেটবল ইত্যাদি ক্রীড়ার ও আয়োজন করা হয়।