চীনের সংখ্যালঘুজাতি বিষয়ক নীতি


       চীন একটি একীভূত বহুজাতিক দেশ। চীন সরকার বিভিন্ন জাতির সমতা, সংহতি ও পারস্পরিক সাহায্য সংক্রান্ত জাতিগত নীতি পালন করে এবং সংখ্যালঘু জাতির ধর্ম বিশ্বাসের স্বাধীনতা আর আচার ব্যবহারের মর্যাদা সুরক্ষা করে।

       সংখ্যালঘুজাতির আঞ্চলিক স্বশাসন ব্যবস্থা চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা অনুসারে , দেশের একীভূত নেতৃত্বে বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে আঞ্চলিক স্বশাসন প্রবর্তন করে স্বশাসন সংস্থাগঠন করা হয় এবং স্বশাসনাধিকার পালন করা হয়। স্থানীয় বাস্তব অবস্থা অনুসারে দেশের আইন ও নীতি কার্যকর করার জন্য। সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন অঞ্চলকে সুনিশ্চিত করে ব্যাপকভাবে সংখ্যালঘুজাতির বিভিন্ন স্তরের মানুষ, পেশাজীবি ও শ্রমিকদের প্রতিদায়িত্ব পালন করে। সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির জনগণ সমগ্র দেশের জনগণের সঙ্গে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বকে শক্তিশালী করে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়নের নির্মানকাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন অঞ্চলের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বিকাশ একদিকে যেমন দ্রুততর হচ্ছে অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধ ও সমৃদ্ধশালী সংখ্যালঘুজাতির স্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

      গত কয়েক দশকে অনুশীলনে চীনের ক্ষমতাসীন। কমিউনিষ্ট পার্টির পক্ষে সংখ্যালঘুজাতি বিষয়ক কতকগুলো ধারাবাহিক দৃষ্টিভংগী আর নীতি প্রণয়ন হয়েছে। এই দৃষ্টিভংগী ও নীতিগুলো হলোঃ 

      জাতির উদ্ভাবন, বিকাশ আর বিলোপ একটি সুদীর্ঘকালীন ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া, জাতিগত সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে থাকবে।  

      সমাজতান্ত্রিক পর্যায় হল বিভিন্ন জাতির অভিন্ন সমৃদ্ধির সময়পর্ব। জাতিতে জাতিতে অভিন্ন উপাদান ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। তবু জাতির বৈশিষ্ট্য আর পাথর্ক্য অব্যাহত থাকবে।  

      জাতিগত সমস্যা সমাজের সাধারণ সমস্যার এক অংশ। জাতিগত সমস্যা গোটা সমাজের সমস্যা সমাধান করলেই কেবল ধাপে ধাপে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে। বর্তমান পর্যায়ে চীনের জাতিগত সমস্যা শুধু সমাজতন্ত্র গড়ে তোলার অভিন্ন ব্রতেই ধীরে ধীরে মীমাংসা করা যাবে।  

      বিভিন্ন জাতির লোকসংখ্যা কত , ইতিহাস দীর্ঘ বা স্বল্প, উন্নয়নের মাত্রা উঁচু বা নীচু হোক না কেন, তারা মাতৃভূমির সভ্যতার জন্য অবদান রেখেছে। সবক্ষেত্রে তাদের সমান হওয়া উচিত। বিভিন্ন জাতির জনগণের মহাসংহতি জোরদার করা আর দেশের একিকরণ সুরক্ষা করা উচিত।  

      ব্যাপকভাবে অর্থনীতির উন্নয়ন করা সমাজতন্ত্রের মৌলিক কর্তব্য । বিভিন্ন জাতির উচিত পরস্পরকে সাহায্য করা আর আভিন্ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সাধন করা।  

       সংখ্যালঘুজাতির আঞ্চলিক স্বশাসন মার্কসবাদী জাতিগত তত্ত্বের প্রতি চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এটাই চীনের জাতিগত সমস্যা সমাধানের মৌলিক ব্যবস্থা।  

       কর্মদক্ষতা আর রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন সংখ্যালঘুজাতির একটি ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলা জাতিগত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি।  

      কতকগুলো অঞ্চলে জাতিগত সমস্যা আর ধর্মীয় সমস্যার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। জাতিগত সমস্যা সমাধানের সময় সার্বিক আর সঠিকভাবে দেশের ধর্ম বিষয়ক নীতি কার্যকরী করা দরকার।  

      তা ছাড়া চীন সরকার সংখ্যালঘুজাতির অঞ্চলগুলোতে অর্থনীতি , সংস্কৃতি, শিক্ষা প্রভৃতি ব্রতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করায় ব্রতী হওয়া আর ধর্মাবলম্বী জনতা সহ ব্যাপক সংখ্যালঘুজাতির জনতার বস্তুগত ও সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যালঘুজাতির ধর্ম বিশ্বাসের উপর বিশেষ মর্যাদা প্রদর্শন করে, সংখ্যালঘুজাতির সাংস্কৃতিক সম্পত্তি সুরক্ষা করে আর ধর্মীয় সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক সম্পত্তি ও লোক শিল্পকলার বিষয়ে তদন্ত, সংগ্রহ, সাজানো, গবেষণা আর প্রকাশনার কাজ চালায়। তা ছাড়া সংখ্যালঘুজাতি অঞ্চলের ঐতিহাসিক আর সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন মন্দির আর ধর্মীয় ব্যবস্থা মেরামত করার জন্য দেশ বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে।