চীনের আর্কষনীয় ছোট নগর


       চীনের শহরগুলোর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের।বিশেষ করে যে সব শহরের ইতিহাস শতাধিক বছরের এবং যে সব শহর ভালভাবে সংরক্ষিত হয়েছে সে সব শহরের অত্যন্ত আকর্ষণ আছে।যেমন ইয়ুন্নান প্রদেশের লিচিয়াং নদী বিশ্ব সংস্কৃতি উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত হয়েছে। ছোট ছোট শহরের ইতিহাস আর সংস্কৃতি, ছোট ছোট শহরের প্রাচীনকাল ও বর্তমান বহু পর্যটকের অনুসন্ধানের স্থানে পরিণত হয়েছে।সুতরাং চৌওজুয়াং, প্রাচীন ফিনিক্স নগর, ইয়াংসু, উজেন, নানশিয়েন আর ডালি প্রভৃতি ছোট শহরগুলো দেশী-বিদেশী পযর্টকদের নয়নগোচর হয়েছে।

চৌওজুয়াং

       চৌওজুয়াং ছোট নগর চীনের পুর্বাংশের চিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত, প্রাচীন সুচৌ শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূর ।চীনের প্রাচীনকালের রবিখ্যাত চিত্রকর মিষ্টার উ গুয়েনজং তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছেন , “ হুয়ানসেন পাহাড়ে চীনের পবর্তমালার সৌন্দর্যের সমাবেশ , চৌওজুয়াং নগরে চীনের নদনদীর সৌন্দর্যের সমাবেশ। বিদেশের পত্রপত্রিকাগুলোতে চীনের চৌওজুয়াং নগরকে “চীনের প্রথম জলাঞ্চল” বলে আখ্যায়িত হয় ।

      চৌওজুয়াং নগরের চার দিকে বেস্টন করে আছে : দিন হ্রদ,বাইজিয়েন হ্রদ, দিনসেন হ্রদ, নান হ্রদ ও ৩০টি ছোট-বড় নদনদী। গোটা নগরের বাড়ীঘর সবই নদীর তীরে নির্মিত হয়।এ সব প্রাচীন শৈলীর স্থাপত্য শান্ত আর পরিছন্ন পবিবেশ প্রকাশ পায়।গোটা নগরে ৬০ শতাংশের আবাস মিং আর ছিং রাজবংশ আমলের স্থাপত্য। কেবল ০.৪ বর্গকিলোমিটারের আয়তন আধিকারী এই প্রাচীন নগরে প্রায় শতাধিক প্রাচীন শৈলীর আবাস আর ষাটটিরও বেশী ইটের ভাস্কর্য গেট-টাওয়ার রয়েছে ।এর সঙ্গে সঙ্গে চৌওজুয়াং নগরে ১৪টি স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাচীন সেতু সংরক্ষিত আছে।এ সব সেতুতে দক্ষিণ চীনের বৈশিষ্টমূলক “ছোট সেতু, নদীতে পানি প্রবাহিত এবং নদীর তীরে আবাস” এই অদ্বিতীয় রীতিনীতি প্রতিফলিত হয়।চৌওজুয়াং নগরের পরিবেশ শান্ত আর পরিচ্ছন্ন। চৌওজুয়াং একটি পড়াশুনার সন্তোষজনক জায়গা এবং ওখানে লোকেরা পড়াশুনার দিকে বেশী মনোযোগ দেন।চীনের মিং আর ছিং রাজবংশ আমলে প্রাসাদের আয়োজিত পরীক্ষায় চৌওজুয়াং নগরে ২০ জনের বেশী লোক উত্তীর্ণ হয়ে প্রাসাদের কর্মকর্তা হন। এক সময় অনেক পন্ডিত আর শিল্পী সাহিত্য আর শিল্পর্কমের পদ্ধতিতে এই ছোট নগরের ইতিহাসের শোভা যুগিয়েছেন।পশ্চিম চিন রাজবংশ আমলের সাহিত্যিক জেন ইয়ু , লিও ইয়ু শি , লু গুয়েমেন প্রমুখ চৌওজুয়াং নগরে বসবাস করতেন ।

       চৌওজুয়াং নগরের প্রধান প্রধান দর্শনীয়স্থান হলো: ছিয়েনফু মন্দির, দেনশিই ডাওয়ুন, সেনঠান, ফুআন সেতু, মিলো ইত্যাদি।

       সুচৌ আর সাংহাই শহরের মাঝখানে অবস্থতি বলে চৌওজুয়াং পৌছতে চলাফেরা অত্যন্ত সুবিধাজনক। সাংহাই বা সুচৌ থেকে সুরাসুরি গাড়ীতে চৌওজুয়াং যাতায়াতা করা যায়।সাংহাইয়ের খুব কাছাকাছি বলে পর্যটকরা এক দিনের মধ্যে চৌওজুয়াং এবং সাংহাইয়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করেন।সুতরাং, চৌওজুয়াংএ কাতারসন্পন্ন হোটেল বেশী নেই।অধিকাংশ হোটেল হলো স্থানীয় অধিবাসীদের চালানো হোটেল। যদিও ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নয়, তবুও পরিবেশ মন্দ নয়।


প্রাচীন ফিনিক্স নগর

       ফিনিক্স নগর চীনের হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের থু জাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগে অবস্থিত।নিউজিল্যাণ্ডের লেখক এক সময় প্রাচীন ফিনিক্স নগরকে “চীনের সবচেয়ে সুন্দর ছোট নগরগুলোর অন্যতম” হিসেবে গণ্য করতেন।চীনের ছিং রাজবংশের রাজা খাংশির শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত এই নগর এত ছোট যাতে কেবলমাত্র একটি বড় সড়ক আছে।কিন্তু এই সড়ক হলো একটি সবুজ করিডর ।ফিনিক্স নগর হুনান প্রদেশের পশ্চিমাংশের একটি উজ্জ্বল মণি বলে আখ্যায়িত। 

       প্রাচীন ফিনিক্স নগর নতুন আর পুরানো দুটো অঞ্চলে ভাগ করা হয়।পুরানো নগর পাহাড়ের তলদেশে এবং পানির পাশে অবস্থিত।ডোচিয়াংয়ের স্বচ্ছ পানি নগর ছুঁয়ে বয়ে প্রবাহিত হয়।লাল রংয়ের ইটের তৈরী নগরের দেওয়াল নদীর তীরে বসানো হয় ।নানহুয়া পাহাড়ও পুরাতন নগরের দেওয়ালের টাওয়ার সামনা-সামনি।ছিং রাজবংশ আমলে এই টাওয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়।নগরের উত্তর দ্বারের বাইরে একটি নদীর উপর একটি সরু কাঠের সেতু আছে । এই সেতুর স্তম্ভ হলো পাথর। দুজন লোক মুখোমুখি পার হলে দেহ এক পাশে ঘুরতে হয়।অতীতে এটি ছিল নগর থেকে বহির্গমনের এক মাত্র পথ।

       চীনের আধুনিক যুগের বিখ্যাত লেখক সেন ছন ভেনের জন্মস্থান বলে ফিনিক্স নগরের সুনাম অর্জিত হয়।প্রাচীন নগরের জনইন সড়কের প্রস্তরফলক গলির প্রান্তে অবস্থিত সেন ছন ভেনের সাবেক বাসস্থান।তার এই সাবেক বাসস্থান দেখতে ঠিক পেইচিংয়ের চক মেলানো বাড়ীর মতো।গোটা বাসস্থান ইট আর কাঠের কাঠামো।কালো ছাদ আর সাদা দেওয়াল, কাঠে খোদাই-করা জানালায় ঘনঘন সাংস্কৃতিক পরিবেশ প্রকাশ পায়।ফিনিক্স নগরে গেলে আপনি প্রথমে বিমান যোগে হুনান প্রদেশের চিশিও শহর পৌছাবেন, তারপর আবার গাড়ী পরিবর্তন করতে হবে।