চীনের বিখ্যাত প্রাকৃতিক দৃশ্য 


       চীন প্রাকৃতিক সম্পদে সম্মৃদ্ধ।বিশ্ব প্রাকৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত চিওজেই গিও, জেনচাচিয়ে, হওয়াং লং প্রাকৃতিক দৃশ্য পুরাকীর্তি ইত্যাদি বিখ্যাত পবর্তমালা ছাড়াও(বিশ্ব উত্তরাধিকার প্রসংগে “চীনের প্রাকৃতিক আর বিশ্ব উত্তরাধিকার” অধ্যয়ে বিশেষভাবে বণর্না করা হবে)।

 চীনে আরো অনেক সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য আছে।যেমন, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের গুয়েলিন, উত্তর-পুর্বাংশের জেনবাই পবর্তমালা , গুয়েযৌর চারজন মেয়ে পাহাড়, ইয়ুননান প্রদেশের সিসুয়াংব্যাংনার গ্রীস্মমন্ডলীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য , হাইনান দ্বীপের নারকেল দ্বীপের দৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি।এসব জায়গা সত্যই দেখার মতো জায়গা। 

 গুয়েলিনের পাহাড় আর নদ-নদী 

  গুয়েলিন শহর চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুয়াংসি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত।গুয়েলিনের বায়ু নাতিশীতোষ্ণ আর আর্দ্র।শীতকাল খুব ঠান্ডা নয়, গ্রীষ্মকালও খুব গরম নয়।চারটি ঋতুতেই চারি দিক সবুজে আচ্ছন্ন থাকে । বছরের গড়পড়তা তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

  গুয়েলিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ চমত্কার।ভূবিদ্যার গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, প্রায় ৩০কোটি বছরের বেশী সময় আগে, সেখানে সাগর ছিল।পৃথিবীর খোলা পরিক্রমের দরুণ গচ্ছিত চুনাপাথর উঠে স্থল হয়ে গেছে । পরে ক্ষয়ে যাওয়ায় অবশেষে এই জায়গা হয়ে যায় চেহারায় বৈচিত্র্যময় পাহাড়ের বন , গভীর চুনাপাথরের গুহা এবং রহস্যময় ভুগর্ভস্থ নদী।এ সব বৈশিষ্ট্য ভু-সংস্থান সুচারু লিচিয়াং নদী এবং পার্শ্ববর্তী সুন্দর আর আকর্ষনীয় পল্লী জীবনের দৃশ্যের সংগে মিশে যায়।যার ফলে স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন , বিশ্ববিখ্যাত“ সবুজ পাহাড় , স্বচ্ছ জল, , অদ্ভত গুহা এবং চমত্কার পাথর ”---গুলিয়েলিন দৃশ্যের রুপ ধরেছে। পরে গুয়েলিনকে চীনের শ্রেষ্ঠ দর্শনীয়স্থান আখ্যায়িত করা হয়েছে।

   গুয়েলিন হচ্ছে ২১১০ বছরের ইতিহাসসম্পন্ন প্রাচীন নগর। তার ইতিহাস এবং সংস্কৃতি উজ্জ্বল ও দীর্ঘকালের। বতর্মানে গুয়েলিনে ১০৯টি রাষ্ট্রীয়, শায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর শহর পযার্য়ের পূরাকীর্তি সংরক্ষণ ইউনিট আছে। গুয়েলিনের প্রসংশায় বিভিন্ন রাজবংশের কবি আর কর্মশিল্পীদের কবিতা আর বৌদ্ধ মূর্তিগুলো পাহাড়ের দেয়াল বা গুহাগুলোতে ছাড়িয়ে পড়ে আছে।এ গুলোর মধ্যে গুয়েলিন প্ল্যাট বণ, পশ্চিম পাহাড় মুইয়েন পাথরের ভাস্কর্য ইত্যাদি সবচেয়ে বিখ্যাত।গুয়েলিন শহরের নাম-করা দর্শনীয়স্থান হলো: বিলিয়েন শৃংগ, ছিশিং পার্ক, লংসেন ঝরনা , লুদিন পাহাড় এবং হাতির নাকের পাহাড় ইত্যাদি।

  বতর্মানে গুয়েলিন শহরে মোট ২৮টি পাচ-তারকা শ্রেণীরর হোটেল , ১৮টি আন্তর্জাতিক পর্যটন কম্পানি ও এক হাজারেরও বেশী গাইড আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুয়লিনের পর্যটন অবকাঠামো আরো পূণাংগ হয়েছে।বতর্মানে দেশ-বিদেশের সঙ্গে গুয়েলিনের প্রত্যক্ষ বিমান লাইন ৪০টিরও বেশী।

ছাংবাই পাহাড় 

  ছাংবাই পাহাড় চীনের উত্তর-পুর্বাংশের চিলিন প্রদেশে অবস্থিত।এটা যেমন চীন-উত্তর কোরিয়া দু দেশের সীমান্ত নির্ণয়কারী পাহাড় তেমনি ঠুমেন নদী, হোয়াংহো নদী আর সুহুয়া নদীর উত্স। দুর্লভ পাখি আর প্রাণী এই বিশাল বনে বসবাস করে। যার ফলে ১৯৮০ সালে এই অঞ্চল জাতি সংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণীর সংরক্ষণ অঞ্চলের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।তর্মানে ছাংবাই পাহাড় হলো চীনের ৪এ রাষ্ট্রীয় পযার্য়ের দশর্নীয়স্থান। 

  ছাংবাই পাহাড়কে উত্তর-পুর্ব চীনের প্রথম পাহাড় বলে গণ্য করা হয়। ইতিহাসে ছাংবাই পাহাড় সবর্দাই উত্তর-পুর্বাংশের চীনাদের জীবনযাপনের জায়গা এবং ম্যান জাতির জন্মস্থান।সুতরাং চীনের ছিং রাজবংশ আমলে ছাংবাই পাহাড় পবিত্র স্থানের নামে ভূষিত হয় । পর্যটন স্থান, ম্যান জাতির সম্মস্থান , রাজবংশ আমলের পবিত্র স্থান বলে ছাংবাই পাহাড় বিশ্ববিখ্যাত।

  প্রধান শৃংগে প্রচুর সাদা রংয়ের ঝামাপাথর আর জমে-থাকা তুষারের দরুণ ছাংবাই পাহাড়ের সুনাম অর্জিত হয়।এ পাহাড় হচ্ছে একটি ঘুমন্ত আগ্নেগিরি। ঐতিহাসিক লিপিবদ্ধ তথ্যগুলো অনুযায়ী, ১৬ শতাব্দীর পর থেকে এখানে মোট তিনবার আগ্নেগিরি ঘটে । ছাংবাই পাহাড়ের বৈশিষ্টময় ভু-সংস্থানের দৃশ্য এত সুন্দর যা সম্বন্ধে বর্ণনার কথা পাওয়া যায় না।এই পাহাড়ের বিখ্যাত দৃশ্য হলো, থিয়েজি ( স্বর্গ হ্রদ), ইউহুয়া লিন( ইউহুয়া বন), বড় উপত্যাকা, পাহাড় উদ্যান, প্রধান শৃংগ , ঝরনা, হিফেনখো, ঝামাপাথর বন ইত্যাদি ইত্যাদি।

  জিনসেন , মার্টিনের লোম এবং হরিণের শিং উত্তর চীনের তিনটি মূল্যবান জিনিস বলে মনে করা হয়।এ তিনটি জিনিস প্রধানত ছাবাই পাহাড়ে পাওয়া যায়।ছাবাই পাহাড়ে আরো আছে অনেক দুর্লভ জীবিত সম্পদ।বিভিন্ন গাছপালা পাওয়া যায়, যেমন সুন্দরী পাইন-গাছ, পাহাড়ের আংকুর, বন্য মাসরুম , চিনডালাই. প্রাণী হলো: উত্তর চীনের বাঘ ইত্যাদি।

  ছাবাই পাহাড় ভ্রমণ অত্যন্ত সুবিধাজনক।পেইচিং , সাংহাই আর সেনইয়াং থেকে বিমান চড়ে ইয়েনচি শহরে পৌছানোর পর আবার বাস পরির্বতন করে আপনি ছাবাই পাহাড়ে এসে পড়েন। ছাবাই পাহাড়ের তলদেশে ও উপরে নানা শ্রেণীর হোটেল আছে। অপেক্ষাকৃত উচ্চ মানের হোটেলেএক রাত কাটলে ২২০ রেনমিন পির কাছাকাছি খরচ ; সাধারণ হোটেলে বিছানা প্রতি দাম ১০ থেকে ৪০ ইউয়ানের কাছেকাছি।