চীন-মার্কিন সম্পর্ক


   ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসন চীন সফর করেন, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাস্ট্র দুপক্ষ চীন -মার্কিন যুক্ত ইস্তাহার অর্থাত্সাংহাই ইস্তাহার প্রকাশ করে , এই ইস্তাহার বিশ বছর ধরে দুদেশের মধ্যকার বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতির অবসান ঘটায় ।১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চীন এবং যুক্ত রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের যৌথ ইস্তাহার প্রকাশ করে। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি চীন আর যুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৮২ সালের ১৭ আগস্ট চীন আর যুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে প্রকাশিত ১৭ আগষ্ট বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রি করার বিষয়টি সমাধানের কৌশল নির্ধারিত হয় ।

  ১৯৮৪ সালের জানুযারি মাসে চীনের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন । এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান চীন সফর করেন । ১৯৮৫ সালের জুলাই মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট লি সিয়েননিয়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন । এটি চীনের কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর ।

  ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কয়েন চীন সফর করেন , চীন এবং যুক্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সমুদ্রে সামরিক নিরাপত্তা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা জেরদার করা সংক্রান্ত দুদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ২৫ মে চেয়ারম্যান চিয়াং জেমিন আর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন প্রথমবারের মতো সরাসরি টেরিফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলেছেন । তারা দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি আর চীন-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন । 

  চেয়ারম্যান চিয়াং জেইমিনের আমন্ত্রনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন ১৯৯৮ সালের ২৫ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত চীনে রাস্ট্রীয় সফর করেন । চেয়ারম্যান চিয়াং জেমিন প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, দুপক্ষ রাজি হয়েছে যে , গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যা বিষয়ে দুদেশের সংলাপ আর সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে । অব্যাহতভাবে একসঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে একবিংশশতাব্দীর চীন-মার্কিন গঠনমূলক রণনৈতিক অংশিদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হবে । দুপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ,যার যার নিয়ন্ত্রিত পারমানবিক অস্ত্র কোনও পক্ষকে লক্ষ্য করবে না । দুপক্ষ রাজি হয়েছে যে ,অর্থনীতি আর তহবিল ক্ষেত্রে রনগত সংলাপ আরও জোরদার করা হবে এবং বিশ্বের অর্থনীতি আর আন্তর্জাতিক তহবিলের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সক্রিয় অবদান রাখা হবে ।

  ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি চেয়ারম্যান জিয়াং জেমিন আর প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্টার বিশ বছর -পূতি উপলক্ষে পরস্পরকে অভিনন্দন-বাণী পাঠিয়েছেন । ৬ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চীনের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন । এটি ১৫ বছরে চীনের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর ।

  ১৯৯৯ সালের ৮ মে পেইচিং সময় সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে গঠিত ন্যাটো সংস্থা বিভিন্ন দিক থেকে যুগোশ্লাভিয়াস্থ চীনা দূতাবাসের উপর পাঁচটি ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করে, ফলে তিন জন চীনা সংবাদদাতা মারা গেছেন । চীনা দূতাবাসের বিশাধিক কর্মচারী আহত হয়েছেন , চীনা দূতাবাসের ভবন গুরুতর বিধ্বস্ত হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকান্ডে চীনা জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন । এতে চীন-মার্কিন সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ।

  ১১ সেপ্টম্বর চেয়ারম্যান চিয়াং জেমিন আর প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন নিউজিল্যান্ডেরর অকল্যান্ডে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি সহযোগিতা সংস্থার নেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন চলাকালে পুনরায় বৈঠকে মিলিত হন । বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে ।

  ২০০০ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উচ্চ-পর্যায়ে চীন-মার্কিন আদান প্রদান ও সহযোগিতা বেড়েছে । এই বছরের ১৫ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে বহুমুখি বরাদ্দ আইন গৃহিত হয় এবং মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র তাদের বিমান আক্রমনে যুগোম্লাভিয়াস্থ চীনা দূতাবাসের সম্পদের ক্ষতিপূরনে দুকোটি আশি লক্ষ মার্কিন ডলার বন্দোবস্ত করে ।   

  ২০০১ সালের ১ এপ্রিল সকালে মার্কিন যুক্ত রাস্ট্রের একটি ইপি- ৩ সামরিক পর্যবেক্ষণ বিমান চীনের হাইনান দ্বীপের ১০৪ কিলোমিটার দক্ষিণ- পূর্বে সমুদ্রের আকাশসীমায় চীনের উপর পর্যবেক্ষণ চালানোর সময় তাকে বাধা দিতে যাওয়া চীনের বিধ্বংসী-৮ বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে । এর ফলে বিমান দূর্ঘটনায় চীনের বৈমানিক ওয়াং ওয়ে-এর মৃত্যু হয় । ঘটনার পর মার্কিন বিমানটি অনুমোতি ছাড়া চীনের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং হাইনান দ্বীপের লিনসুই সামরিক বিমানবন্দরে অবতরন করে । ১১ এপ্রিল চীনের পররাস্ট্রমন্ত্রী থাং চিয়াস্যুয়েন মার্কিন সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ,চীনস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে দাখিল করা চিঠি গ্রহন করেন । চিঠিটিতে মার্কিন পর্যবেক্ষন বিমানের ধাক্কায় চীনা সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয় ।

  ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটন সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলার শিকার হওয়ায় গুরুতর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় । ১৯ অক্টোবর সাংহাইতে চেয়ারম্যান চিয়াং জেমিন প্রেসিডেন্ট বুশের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে চীন-মার্কিন সম্পর্ক,সন্ত্রাস দমন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মত বিনিময় করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হন । দুপক্ষ সর্বসম্মতিক্রমে চীন-মার্কিন গঠনমূলক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নয়নে মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে রাজি হয় ।

  ২০০২ সালে চীন-মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়ন সত্ত্বেও দুদেশের সম্পর্ক উন্নতি ও বিকাশের প্রবনতা বজায় ছিলো । ২১ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের আমন্ত্রনে প্রেসিডেন্ট বুশ চীন কর্ম সফর করেন । দু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আবার সাক্ষাতে মিলিত হয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন , তারা সর্বসম্মতিক্রমে রাজি হয়েছেন যে , চীন-মার্কিন সংলাপ আর সহযোগিতা জোরদার করে সুষ্ঠুভাবে বিরোধ সমাধান করে মিলিতভাবে চীন-মার্কিন গঠনমূলক সহযোগিতা-সম্পর্ককে সামনে এগিযে নেওয়া হবে । প্রেসিডেন্ট চিয়াং জেমিন প্রেসিডেন্ট বুশের আমন্ত্রনে অক্টোবরে মেক্সিকোয় এশিয়া আর প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে আংশ নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন । প্রেসিডেন্ট চিয়াং জেমিন প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যপারে সুষ্ঠুভাবে তাইওয়ান সমস্যা সমাধানে জোর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । প্রেসিডেন্ট বুশ আবার ঘোষনা করেন যে , মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র এক চীনের নীতি অনুসরন করবে এবং তিনটি চীন-মার্কিন যুক্ত ইস্তাহার মেনে চলবে । এটা মার্কিন সরকারের দীর্ঘকালের অনুসৃত নীতি, এর কোনও পরিবর্তন হয় না ।