অবকাঠামো নির্মাণ


  সড়ক 

  চীনের ভূভাগ সুবিশাল, সড়কগুলো জালের মতো দেশের সর্বত্র বিস্তৃত। চীনের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে মোট(৭+৫টি) ১২টি উন্নত মানের রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক রয়েছে, এ সবগুলো মিলিয়ে ৩৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। এগুলোর নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাগের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। 

  চীনে বরাবরই সড়ক নির্মাণকে অবকাঠামো নির্মাণ দ্রুততর করার কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধার্য করা হয় , ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা চার বছরের প্রত্যেক বছরই সড়কনির্মাণে পুঁজিনিয়োগের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন(২০০০০ কোটি) ইউয়ান ছাড়িয়েছে । ২০০২ সালে সড়ক নির্মাণে ৩০০ বিলিয়ন ইউয়ান পুঁজি ব্যবহার করা হয়েছে , তাতে ৬৭ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মিত হয়েছে ,এর মধ্যে ৫৭০০ কিলোমিটার ছিল এক্সপ্রেসওয়েই। ২০০৩ সালে ৩৬ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে । ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ চীনে মোট ১৮ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশী দীর্ঘ সড়ক চালু হয়েছে , এর মধ্যে আধুনিক পরিবহণ ও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের মানের প্রতিনিধিত্বকারী এক্সপ্রেসওয়েই ৪০ হাজার কিলোমিটার । এর সংগে সংগে রাষ্ট্র চীনের মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চলে সড়কনির্মাণ দ্রুততর করেছে ,ফলে সেখানকার সড়কযোগাযোগের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে ।

  ২০০৮ সালে, চীনের যাবতীয় রাষ্ট্রীয় মহাসড়ক নির্মাণের কাজ পুরোপুরী সম্পন্ন হয়ে যাবে । তখন পেইচিং আর সাংহাই এবং দেশের যাবতীয় কেন্দ্রশাসিত মহানগর , প্রাদেশিক রাজধানি ইত্যাদি বড় বড় শহর এক্সপ্রেস ওয়েই প্রভৃতি উন্নত মানের সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে, এইভাবে পরস্পর সংযুক্ত থাকা শহরের মোট সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে ।

  রেল পথ  

  ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ চীনে চালু থাকা রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৭৩ হাজার কিলোমিটার । এর মধ্যে ডাবল রেল-লাইন ২০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশী , বিদ্যুত- চালিত রেলপথ প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার । চীনের প্রথম সাগর-পার রেলপথ হলো কুয়াংতোং -- হাইনান রেলপথ যা ২০০৩ সালের ৭ই জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে । সমুদ্রসমতলের তুলনায় বিশ্বের উচ্চতম রেলপথ--ছিংহাই-তিব্বত্ রেলপথ নির্মান ২০০৬ সালে সম্পন্ন হবে, যা মোট ১১৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ । বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশের মধ্যে চীন রেল পরিবহণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী এমন দেশগুলোর অন্যতম ; (রেলপথে) চীনদেশেই পরিবহণের পরিমাণ সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে এবং পরিবহণের সরঞ্জাম (যানবাহন, রেলপথ, ইত্যাদি) সবচেয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । 

  ১৯৯৮ সাল থেকে চীনের রেলপথগুলোতে অনেক বার ব্যাপকভাবে ট্রেনের গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি বারংবার বাড়ানো হয়, সন্ধ্যাবেলায় ট্রেণ ধরতে পারলে ট্রেণে একরাত ঘুমানোর পর খুব ভোরেই হাজার কিলোমিটার দূরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যায় , তাতে যাত্রীদের খুবই সুবিধা হয় ।

  বন্দর 

  চীনের উপকূলীয় বন্দরগুলোর নির্মাণ কাজের প্রধান দিক হলো কয়লা, কণ্টেইনার , (আমদানিকৃত) লৌহ-আকরিক আর খাদ্যশস্য পরিবহণের ব্যবস্থা এবং গভীর পানির বন্দর ইত্যাদি পরিবহণ ব্যবস্থা নির্মাণ। বিশেষ করে কণ্টেইনার পরিবহণ ব্যবস্থা নির্মাণকাজ জোরদার করা হয়েছে । সরকারের উদ্যোগে শক্তি কেন্দ্রীভূত করে তালিয়েন, থিয়েনচিন, ছিংতাও, সাংহাই, নিংপো, সিয়ামেন আর শেনচেন প্রভৃতি বন্দরে ধারাবাহিকভাবে অনেক গভীর পানির কণ্টেইনার জাহাজঘাটা নির্মাণ করা হয়েছে , তাতে চীনের কণ্টেইনার পরিবহণের প্রধান প্রধান বন্দর গড়ে উঠার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে ; কয়লা পরিবহণ ব্যবস্থা নির্মাণকাজ আরও জোরদার করা হয়েছে , অনেকগুলো কয়লা পরিবহণের নতুন জাহাজঘাটা নির্মিত হয়েছে । এর সংগে সংগে অশোধিত তেল আর লোহা-আকরিক আমদানির জন্যে কতকগুলো জাহাজঘাটা পুনর্নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে ।

  ২০০৩ সালে শেষ নাগাদ , চীনের প্রধান উপকূলীয় সমুদ্রবন্দরগুলোতে প্রায় ১৮০০টি জাহাজঘাটা আছে , তাদের মধ্যে দশ হাজার-টনী জাহাজঘাটার সংখ্যা ৫৩০টিরও বেশী ; বছরে মাল বোঝাই ও খালাসের মোট পরিমাণ ১৭০ কোটি টনেরও বেশী । কতকগুলো বড় বন্দরের প্রত্যেকটিতে মাল বোঝাই ও খালাসের বার্ষিক পরিমাণ দশ হাজার টনেরও বেশী, সাংহাই বন্দর , শেনচেন বন্দর , ছিংতাও,বন্দর, থিয়েনচিন বন্দর, কুয়াংচৌ বন্দর, সিয়ামেন বন্দর , নিংপো বন্দর এবং তালিয়েন বন্দর---এই ৮টি বন্দর ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম কণ্টেইনার বন্দরের পর্যায়ভুক্ত হয়েছে ।


  বেসামরিক বিমানচলাচল 

  চীনের বিমাণ রুট বিশ্বের সকল মহাদেশ পর্যন্ত প্রসারিত । ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ, চীনের বেসামরিক বিমান চলাচলের নিয়মিত ফ্লাইটের জন্য চালু বিমানবন্দর ১৪০টিরও বেশী , নিয়মিত ফ্লাইটের রুট এক হাজারটিরও বেশি । এদের মধ্যে ১৬০টিরও বেশী হলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের রুট , ৩০টিরও বেশী দেশের ৬০টিরও বেশী শহরের সংগে চীনের বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানচলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে ।

  টেলিফোন 

  ২০০৩ সালে চীনে স্থির টেলিফোনের গ্রাহকদের সংখ্যা ৪.৯০৮ কোটি বেড়েছে, ঐ বছরের শেষ নাগাদ চীনের স্থির টেলিফোন-গ্রাহকদের মোট সংখ্যা ছিল ২৬ কোটি, এদের মধ্য শহরগুলোতে ১৭ কোটি , গ্রামে ৯.২০১৩ কোটি। চীনে ১৯৮৭ সালে মোবাইল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয় , যার উন্নয়ন ১৯৯০ সালের পর থেকে খুবই দ্রুত হয়েছে , চীনের মোবাইল ফোনের সংখ্যা বছরে গড়পড়তা ১০০ শতাংশেরও বেশী হারে বেড়ে চলেছে । ২০০৩ সালে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চীনের যাবতীয় বৃহত্ ও মাঝারী শহর এবং ২০০টিরও বেশী ছোট শহর বা জেলা শহর জুড়ে বিস্তার লাভ করেছে । ঐ বছরে চীনে মোবাইলফোনের নতুন গ্রাহকদের সংখ্যা ছিল ৬.২৬৯ কোটি, বছরটির শেষ নাগাদ মোবাইলফোনের গ্রাহকদের মোট সংখ্যা ২৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে । ঐ বছরের শেষ দিকে চীনের স্থির ও মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের মোট সংখ্যা ছিল ৫৩ কোটির ওপর , যা এর আগের বছরের শেষ দিকের তুলনায় ১১ কোটিরও বেশী । চীনে গড়পড়তা এক শো লোকের মধ্যে ৪২টি টেলিফোন আছে । 

  ইণ্টার্নেট

  বর্তমানে চীনে ইণ্টার্নেট গ্রাহকদের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি ।

  পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীনে সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা ধরে ইণ্টার্নেট ব্যবহার করেন--এমন নাগরিকের সংখ্যা বিশ্বে যুক্তআষ্ট্র ও জাপানের পর তৃতীয় স্থান অধিকার করে । ২০০১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চীনে ওয়েবসাইটের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে , বর্তমানে ওয়েবসাইটের মোট সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ । সারা দেশ জুড়ে এমন একটি মূল পরিবাহক -নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, যার প্রধান মাধ্যম হলো অপটিক্যাল ফাইবার , যার সহায়ক মাধ্যম হলো উপগ্রহ ও ডিজিটাল মাইক্রো ওয়েইভ । এই নেটওয়ার্কের ক্যাপ্যাসিটি খুবই বড়, গতিবেগ খুবই দ্রুত। ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ চীনের অপটিকাল ক্যাবল লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ২৭ লক্ষ কিলোমিটার হয়েছে । উপকূলীয় অঞ্চলে আর স্থলবেষ্টিত অভন্তরভাগের তুলনামূলক উন্নত এলাকাগুলোতে অপটিকাল ফাইবার ইতিমধ্যেই থানা , ইউনিয়ন, আবাসিক এলাকা এবং বড় বড় ইমারতে সংযুক্ত হয়েছে এবং তা তথ্য প্রেরণের প্রধান প্রযুক্তিগত উপায় হয়েছে । বর্তমানে গ্রুপ ডাটা- বিনিময় নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডাটা নেটওয়ার্ক, কম্পিউটার ইণ্টার্নেট এবং মাল্টি-মিডিয়া টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক যার প্রধান উপায় , সেই পাবলিক ডাটা -কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যেই প্রাথমিকভাবে গড়ে উঠেছে এবং চীনের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি জেলা ও শহর তার আওতাভুক্ত হয়েছে । চীনের এই ডাটা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের কমিউনিকেশন-ক্যাপাসিটি হলো ৬.১ লক্ষ পোর্ট । এটা বিশ্বের বৃহত্তম পাবলিক ডাটা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের অন্যতম হয়েছে ।