ফু ছুন ১৯৩৪ সালের ১০ অক্টোবর সাংহাইয়ের একটি বুদ্ধিজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ফু রেই চীনের বিখ্যাত পন্ডিত , শিল্পকলা তত্ব গবেষক ও অনুবাদক । তিন -চার বছর বয়স থেকেই ফু ছুন সংগীতের প্রবল আকর্ষণীয় শক্তি অনুভব করতে পারেন এবং সংগীতের প্রতি তার অসাধারণ ভালোবাসা প্রকাশ করেন । সাড়ে সাত বছর থেকে ফু ছুন পিয়ানো শিখতে শুরু করেন । তার শিক্ষক ছিলেন ইতালির কন্ড্রাক্তর ও পিয়ানো বাদক মারিও পাসী । মারিও পাসি বিখ্যাত সংগীতবিদ লিস্টের ছাত্র । ফু ছুন মারিও পাসির কাছে তিন বছর পিয়ানো শিখেন । ১৯৫১ সালে তিনি রাশিয়ার পিয়ানেবাদক আডা ব্রোনস্টেনের কাছ থেকে পিয়ানো শিখেন ।
১৯৫৩ সালে চতুর্থ বিশ্ব যুব মহাসম্মিলনীরোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় । বাছাইমূলক নির্বাচণের পর ফু ছুন চীনের একমাত্র শিল্পী হিসেবে মহাসম্মিলনীর পিয়ানো প্রতিযোগিতায়তৃতীয় শ্রেণীর পুরষ্কার পান । তার বাজানো স্ক্রিবিনের প্রেলুদ শুনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন প্রতিযোগী গভীরভাবে মুগ্ধ হয়ে কেঁদে ফেলেন ।
১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে পঞ্চম চোপিন আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতা ওয়ার্সাতে অনুষ্ঠিত হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৭৪জন পিয়ানো বাদক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । ফু ছুন চীনের একমাত্র প্রতিযোগী । প্রতিযোগিতায় তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন , তার পাওয়া নম্বর প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের প্রতিযোগীর নম্বরের মধ্যে দুরত্ব কম ছিল । তা ছাড়া তিনি এই প্রতিযোগিতায় ‘ মাজুর্কা ’ নামে একটি পিয়ানো সুর বাজিয়ে শ্রেষ্ঠ পিয়ানোবাদক পুরষ্কার পেয়েছেন । প্রাচ্যের লোক এই প্রথমবার চোপিনের সংগীত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন , তৃতীয় স্থানের পুরস্কার হলেও ফু ছুন এই প্রতিযোগিতায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।
এই প্রতিযোগিতার পর ফু ছুন পোল্যান্ডে থেকে পিয়ানো শিখতে শুরু করেন । ১৯৫৮ সালে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের আগে পড়াশুনা শেষ করেন । ১৯৫৬ সালের আগষ্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চীনে ছুটি কাটানোর সময় তিনি পেইচিংয়ে একটি একক পিয়ানো সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন , সাংহাইয়ে তিনি সাংহাইয়ের সিম্ফোনি অক্যাস্ট্রার সঙ্গে সহযোগিতা করে মোজার্টের সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ফু ছুন পোল্যান্ড ত্যাগ করে ব্রিটেনের লন্ডনে যান ।
ষাটের ও সত্তরের দশকে ফু ছুন মোট দু হাজার চার শ’টি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন । তিনিমেনুহিন , বারেনবোইম , চেন চিং ও ছুয়ান কিউন ওয়া প্রমুখ বিখ্যাত সংগীতবিদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন , প্রায় ৫০টি ডিস্ক রেকর্ড করেছেন এবং ছোপিন আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতা , বেলজিয়াম ইলিজাবেথ মহারানী আন্তর্জাতিক সংগীত প্রতিযোগিতা আর নরওয়ে , ইতলি , সুইজারল্যান্ড , পতুর্গাল , দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো বা অঞ্চলের সংগীতপ্রতিযোগিতার যাচাই কমিটির সদস্য ছিলেন । তিনি ইউরোপ , আমেরিকা মহাদেশ , মধ্য প্রাচ্য , দক্ষিণ এশিয়া , জাপান ও ওসেসিয়ার বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে পিয়ানো বাজিয়েছেন । তিনি কঠোর পরিশ্রম করে শ্রেষ্ঠ সংগীতবিদের আখ্যা পেয়েছেন । যুক্তরাষ্ট্রের টাইম্স পত্রিকাফু ছুনকে বর্তমান যুগের সবচেয়ে মহান চীনা সংগীতবিদ বলে তার উচ্চ মূল্যায়ন করেছে ।
১৯৭৬ সালেফু ছুন চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটে তার একক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । তখন থেকে তিনি প্রায় প্রতি বছর একবার দেশে ফিরে আসেন । তিনি পেইচিং , সাংহাই , সি আস , ছেন তু ও কুনমিং ইত্যাদি শহরে সংগীত সম্পর্কিত লেকচার করেন , ছোপিন , মোজার্ট ,দেবিউসি প্রমুখ সুরকার ও ছুবার্টের সুর বাজান এবং কেন্দ্রীয় বাদ্যদলের সঙ্গে সহযোগিতা করে বিথৌভেনের সুর বাজিয়েছেন । তিনি চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটের ছাত্র বাদ্যদলের সঙ্গ সহযোগিতা করে মোজার্টের সুর বাজিয়েছেন । সংগীত প্রশিক্ষণে তার সমৃধ অভিজ্ঞতা ও নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর মনোভাব সংগীত ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্র আর সংগীত অনুরাগীদের আন্তরিক প্রশংসা ও শ্রদ্ধা জয় করেছে ।
[
ফু ছুনের বাজানো সুর
]:
《ছোপিন সেরেনাদে 》
|