লিউ তে হাই

    চীনে বিখ্যাত ফিফা বাদক লিউ তে হাইয়েরসুনাম আছে । অনেকে তাকে ফিফা মাস্টার ডাকেন । তার খ্যাতি বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে ।

  লিউ তে হাই ১৯৩৭ সালে সাংহাই শহরে জন্মগ্রহণ করেন , তার পূর্বপুরুষের জন্মস্থান হোপেই প্রদেশের ছান জেলা । মাধ্যমিকস্কুলে পড়ার সময় থেকেই লিউ তে হাই লোকসংগীত পছন্দ করেন এবং সংগীত ক্ষেত্রে তার প্রতিভা দেখিয়ে দেন । ১৩ বছর বয়স থেকে লিউ তে হাই আর হু ও বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র শিখতে শুরু করেন এবং সাংহাইয়ের বেতার কেন্দ্রের অবসর সময়ের লোকসংগীত দলে অংশ নেন । ১৯৫৪ সালে তিনি চীনের বিখ্যাত ফিফা বাদক , ফুতুন সম্প্রদায়ের ফিফা বাদক লিন শি ছেনের কাছ থেকে ফিফা শিখতে শুরু করেন । ১৯৫৭ সালে লিউ তে হাই পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে ফিফা বাজানো শিখেন । 

  লিউ তে হাইয়ের বাজানো ফিফার সুর আন্তরিকতাপূর্ণ ও মধুর । তার বাজানো হালকা ধরনের সুরে সুক্ষ্ম অনুভুতি প্রকাশিত হয় আর শক্তিশালী সুরে তার নিজের আন্তরিকতা মিশিয়ে যায় । তাই তার বাজানো সুর দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে । তিনি সাংহাইয়ের ফুতুং সম্প্রদায়ের ফিফা বাদকদের শৈলীর ভিত্তিতে ছুনমিং সম্প্রদায়ের ছাও আন হো , সাংহাইয়ের সুন ইয়ু তে আর চুন ইং সম্প্রদায়ের ইয়াং তা চুন প্রমুখ ফিফা বাদকদের কাছ থেকে ফিফা বাজানোর কৌশল শিখেন এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ফিফা বাদকদের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে নিজের ফিফা বাজানোর নৈপুন্য উন্নত করেছে । 

  ফিফা বাজানোর সময় লিউ তে হাই ঐতিহ্যিক পদ্ধতির ভিত্তিতে সুরের বিষয় অনুসারে বাজানোর নৈপুন্যের সংস্কারকরেন । যেমন ঐতিহ্যিক বাজানোর পদ্ধতি অনুসারে বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুল সুর বাজানোর সময় ব্যবহার করা হয় না । কিন্তু লিউ তে হাই বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলও সুর বাজানোতে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন । ফলে বাঁ হাতের তার উপরউঠা-নামার সংখ্যা কমেছে , সুরের গতি বেড়েছে এবং সুর শুনতে আরো স্বচ্ছন্দ হয় । তা ছাড়া তিনি ফিফা বাজানোর সময় তার ডান হাতের তর্জনী , মধ্য আঙ্গুল , তৃতীয় আঙ্গুল ও ছোট আঙ্গুল এককভাবে বাজাতে পারে ।  

  লিউ তে হাই অনেক বিখ্যাত সুর বাজিয়েছেন । এগুলোর মধ্যে আছে প্রাচীন সুর‘ সি মিয়েন মাই ফু ’ ‘ ইয়াং ছুন পাই সুয়ে ’ , আধুনিক সুর ‘ লান ইয়া পাহাড়ের পাঁচ বীর ’ , ‘ ই জাতির নৃত্য সুর ’ ও ‘ কমিউনিস্ট পার্টির জন্য একটি গান গাই ’ ইত্যাদি । যখন দর্শকরা তার বাজানো ‘ লান ইয়া পাহাড়ের পাঁচ বীর ’ , ‘ তৃণভূমির দুই বোন ’ আর ‘ সি মিয়েন মাই ফু ’ ইত্যাদি সুর উপভোগ করেন , তারা মনে করেন লিউ তে হাই যেন ফিফা দিয়ে ইতিহাসের গল্প শোনাচ্ছেন । দর্শকরা তার বাজানোর সুর শুনতে শুনতে যেন তার কাহিনীর পরিবেশে প্রবেশ করেন । 

  দর্শক ও শ্রোতারা যাতে সহজেই সুরের অর্থ বুঝতে পারেন , লিউ তে হাই ‘ লিউ ইয়াং হো ’ , ‘ দূর থেকে আসা মেহমান আপনি যাবেন না ’ , ‘ গেরিলা দলের গান ’ , ‘ মা লান ফুল ফুলেছে ’ ইত্যাদি গানের সুর ফিফা সুরে পরিণত করেন । তিনি ‘ পা ওয়াং সিয়ে চিয়া ’ , ‘ ছেন সুই ’ ও ‘ সুন ইয়াংয়ের জোত্ষ্নারাত ’ ইত্যাদি প্রাচীন সুর সংশোধন করেছেন । 

  তা ছাড়া লিউ তে হাই বিশেষ বিষয়ের অনেক সুর সৃষ্টি করেছেন । যেমন‘ রাজহাঁস ’ ও ‘ প্রবীণ শিশু ’ ইত্যাদি জীবন সম্পর্কিত সুর , ‘ জন্মভূমি যাত্রা ’ ও ‘ মুহূর্ত ’ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রশংসার সুর আর ‘ তি সুয়েই কুয়ান ইং ’ ও ‘ আনন্দমুখর আরহাট ’ ইত্যাদি ধার্মিক সুর সৃষ্টি করেছেন । তিনি ফিফা বাজানোর নতুন পদ্ধতি সৃষ্টি ও নতুন বিষয়ের সুর রচনার ক্ষেত্রে নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন । 

  ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সময় লিউ তে হাই যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন সিম্ফোনি অক্যাস্ট্রা , পশ্চিম বার্লিনের সিম্ফোনি অক্যাস্ট্রা আর বিশ্ববিখ্যাত সংগীত কন্ড্রাক্টর সেইজি ওজাওয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করে পেইচিং , যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানীতে ফিফা কানসারটো ‘ তৃণভূমির দুই বোন ’ পরিবেশন করেন , এই সুর চীনের ও বিদেশের দর্শকদের সমাদর পেয়েছে এবং চীনের লোকসংগীত ও পাশ্চাত্য সংগীতের সাফল্যজনক সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকরেছে ।  

  কড়া প্রশিক্ষণ , দীর্ঘকালীনমঞ্চে বাজনা পরিবেশন ও শিক্ষকতার বাস্তব অনুশীলনে লিউ তে হাই প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন । তাই তিনিসুরের বিষয়বস্তু সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেন । তিনি এখন চীনের সংগীত ইন্সটিটিউটের প্রফেসার , চীনের সংগীতবিদ সমিতির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য , চীনের পভিনয় শিল্প কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আর চীনের সাহিত্য শিল্প ফেডারেশনের সদস্য । তিনি পৃথিবীর ত্রিশাধিক দেশ ও অঞ্চলে সফর করেছেন এবং সেখানে সংগীত পরিবেশন ও সংগীত বিষয়ক লেক্চার দিয়েছেন । তিনি ফিফা ও সিম্ফোনি অক্যাস্ট্রার সমন্বয় ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে ফিফার অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন । 

  [ লিউ তে হাইয়ের বাজানো সুর ]《শি মিয়েন মাই ফু 》