লু রি রোন ১৯৩৩ সালের ১ জুন চীনের হুপেই প্রদেশের চুন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৪৫ সালে তিনি শিল্পী দলে কাজ করতে শুরু করেন । ১৯৫০ সালে লু রি রোন হান চুন শিল্পী দলের বাদক দলের বেহারা ও আর হুর বাদক হন । পরে তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তর –পশ্চিম চীন শিল্পকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন , এই ইন্সটিটিউটে তিনি আর হু , গানে সুর দেয়া ও কানডাক্টর শিখেন। ১৯৫৪ সালে স্নাতক হওয়ার পর সেই ইন্সটিটিউটে আর হুর শিক্ষক ও লোকসংগীত দলের কানডাক্তর হিসেবে যোগ দেন । তিনি এই ইন্সটিটিউটের শিক্ষক অফিসের প্রধান , ডিন ও সহকারী প্রধান ছিলেন । তিনি এখন সিআন সংগীত ইন্সটিটিউটের স্নাতকোত্তর ছাত্রদের শিক্ষক , চীনের সংগীতবিদ সমিতির লোকসংগীত কমিটির উপপ্রধান , চীনের লোক-অক্যাস্টাল সমিতির উপপ্রধান , সানসি প্রাদেশিক লোক অক্যাস্টাল সমিতির প্রধান আর সানসি নৃত্যনাট্য দলের লোক-সিম্ফোনি দলের উপদেষ্টা ।
প্রায় ৫০ বছরের শিক্ষক জীবনে লু রি রোন শিক্ষকতা ছাড়া বাজনা পরিবেশন , সুর দেয়া ও বাদ্যদলে কানডাক্টরের কাজ করেন । তিনি দেড় শ’টি আর হু সুর , বিশ-বাইশটি একক বাজনার সুর আর বিশটি লোকসংগীতের সুর রচনা করেছেন । তিনি দশটি সংগীত সম্পর্কিত থিসেস রচনা করে চীনের লোক সংগীতের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ।
লু রি রোনের শিক্ষকতার বৈশিষ্ট্যঃ তিনি তার ছাত্রকে ক্লাসে অধ্যয়ন , বাদযন্ত্র পরিবেশন , সুর রচনা ও তাত্ত্বিক গবেষনাচার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা করার দাবী জানান । তাই তিনি প্রত্যেক ছাত্রের বাস্তব অবস্থা অনুসারেশিক্ষা বিষয় স্থির করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন । গত কয়েক দশক বছরে তিনি লোকসংগীত শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পাঠ্যবই ও শিক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন । তিনি লোকসংগীতের তাত্ত্বিক গবেষণা , আরহু প্রশিক্ষণ ও পরিবেশন , সুর রচনা আর কনডাক্টর ক্ষেত্রে অনেক দক্ষ সংগীতবিদ প্রশিক্ষণ করেছেন ।
লু রি রোনের বাদযন্ত্র পরিবেশনঃ তার বাজানো আর হুর সুর শুনতে মিষ্টি , তার বাজানো সুর যেমন উদার মনের অনুভুতি তেমনি সুক্ষ্ম অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে । তার বাজানো সুরেসান সি প্রদেশের ঐতিহ্যিক লোক সংগীতের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট । দীর্ঘ দিনের অনুশীলন ও গবেষনার মধ্য দিয়ে লু রি রোন নিজের বৈশিষ্ট্যময় আর হু বাজানোর পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন । ১৯৬০ সালে সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় বাদযন্ত্র আর হু ও ফিফার পাঠ্য বই আদান-প্রদান অধিবেশনে লু রি লোন নিজের রচিত উত্তর-পশ্চিম চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আর হু সুর ‘ মি হু তিয়াও ’ ও ‘ সিন থিয়েন ইও ’ পরিবেশন করেন । তার বাজান সুর শুনে প্রবীণ আর হু বাদকরা ও সহকর্মীরা বলেছেন লু রি রোনের বাজানো সুর আর হু বাজানোর একটি নতুন শৈলী সৃষ্টি করেছেন ।
লু রি রোনের সুর রচনাঃ তার রচিত লোকসংগীতের সুরের বাজনা শুনেশ্রোতারা যেন উত্তর-পশ্চিম চীনের মালভূমির মাটির ঘ্রাণ পান ।সানসি প্রদেশের স্থানীয় অপেরাগুলোযেমন উদাত্ত কন্ঠের ‘ ছিন ছিয়ান ’ , ধীর গতির ‘ ওয়ান ওয়ান ছিয়ান ’ ,দৃঢকন্ঠের ‘ মি হু ’ , দ্রুতগতির সুর ‘ শিয়ে হুও ’ আর গম্ভীর ‘ সিং থিয়েন ইউও ’ সবই লু রি রোনের সুর সৃষ্টির অফুরন্ত উত্স । তার সৃষ্ট সুরগুলোতে সান সি প্রদেশের অধিবাসীদের জীবনের রীতিনীতি ও অনুভুতি মেশানো হয়েছে । তার সৃষ্ট নামকরা লোকসংগীতের সুরের মধ্য আছে ‘ আর হুর সুর ‘ মি হু তিয়াও, ‘ ছিন ছিয়ান সুর ’ , ‘ আনন্দমুখর ছিন ছুয়ান ’ , ‘ ফুল তোলা ’ , ‘ দোলনার সুর ’ আর ‘ ছু চিয়ান ইন ’ ।
লু রি রোনের কন্ডাক্টরের শৈলীআন্তরিকতাপূর্ণ , তিনি সুরেরপ্রধান বিষয় ও অনুভুতি নিভুর্লভাবে আয়ত্ত করতে পারেন । তিনি দীর্ঘদিন সি আন সংগীত ইন্সটিটিউটের লোকসংগীত দলের কন্ডাক্টার ছিলেন । এই দলের বাজানোর সুর ‘ নতুন বসন্ত ’ , ‘ ছিন ছিয়ানের সুর ’ , ‘ সংগীত কবিতা লিসান ’ আর ‘ ছিয়ান আনের সিয়ে হুও ’ ইত্যাদি লোকসংগীতের সুর দেশবিদেশের সংগীতবিদ ও শ্রোতাদের সমাদৃত হয়েছে । লু রি রোন ‘ হলুদ মাটি ’ প্রভৃতি দশ-বারোটি চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের জন্য সুর দিয়েছেন । ১৯৯১ সালে তার নেতৃত্বাধীন ছিয়ান আন প্রাচীন সুর প্রতিনিধি দল ইউরোপ সফর করেছে । সফরকালে তার তৈরী প্রাচীন চীনের সুরের একটি সি ডি প্যারিসের রিজাকস স্বর্ণ পুরস্কার পেয়েছে ।
লু রি রোনের প্রকাশিত সংগীত সম্পর্কিত রচনাগুলোর মধ্যে আছে‘ সান সি শৈলীর আর হু সুরের বৈশিষ্ট্য ও বাজানোর পদ্ধতি ’ , ‘ ছান আন প্রাচীন সুরের প্রথম বিদেশ যাত্রা ’ , লোকসংগীত প্রসারে লিউ থিয়েন হুয়ার ঐতিহাসিক অবদান ও তার বাস্তব তাত্পর্য ’ , ‘ চীনের আধুনিক আর হু শিক্ষায় হুয়া ইয়েন চুনের অবদান ’ , ‘ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগীত শিক্ষার অবস্থান ’ , ‘ লু রি রোনের আর হু শিল্প ’ আর ‘ লোকসংগীতের সুর রচনা ও পরিবেশনাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা ’ ।
আশির দশক থেকে লু রি লোন আমন্ত্রনক্রমে জাপান , জার্মানী , ফ্রান্স , বেলজিয়াম , নেডারল্যান্ড্স, সুজারল্যান্ড ,স্পেন , মালয়সিয়া , সিংগাপুর , হংকং , ম্যাকাও ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশ ও অঞ্চলে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান করেছেন । তিনি এই সব দেশে চীনের লোকসংগীত , সানসি প্রদেশের বাদযন্ত্র আর হুর সুর আর চীনের প্রাচীন সুর প্রচার করেন এবং বিভিন্ন দেশের সংগীতবিদদের সমাদর পেয়েছেন । ১৯৯২ সালে লু রি রোন চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের দেয়া ‘ বিশেষ অবদান রাখা বিশেষজ্ঞের ’ আখ্যা পান ।
[
লু রি রোনের বাজানো সুর
]:
《মেই হু সুর 》
|