সংগীতবিদ চাও সুন থিন ১৯২৪ সালে চীনের চেচিয়ান প্রদেশের তুং ইয়াং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকেই তিনি সংগীত পছন্দ করেন । নয় বছর বয়স থেকে বাঁশি বাজানো শিখতে শুরু করেন , কয়েক বছর পর তিনি আর হু , ফিফা , তিনতারা আর সোনা প্রভৃতি লোকসংগীত বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেন । ১৬ বছর বয়সে মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে চান সুন থিন খুনছু অপেরা দলে ভর্তি হন , পরে তিনি শিক্ষক প্রশিক্ষন ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। স্নাতক হওয়ার পর চাও সুন থিন মাধ্যমিক স্কুল ও শিক্ষক প্রশিক্ষন বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । ২২ বছর বয়সে বাবার চাপে বাধ্য হয়ে প্রিয় সংগীত চর্চা বজর্ন করে সাংহাই আইন ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেন ।
১৯৪৯ সালে চাও সুন থিন আইন ইন্সটিটিউটের পড়াশুনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে শিল্পী দলে ভর্তি হন । শিল্পী দলে তিনি বেশ কয়েকটি বাদযন্ত্রশিখেন এবং গানের কথা লেখা ও সুর দেয়া শিখেন । ১৯৫৪ সালে উত্তর-পূর্ব চীনের একটি স্বাস্থ্যনিবাসে থাকাকালে প্রতিদিন স্বাস্থ্যনিবাসের চার পাশের মনোরম দৃশ্য দেখেন এবং নাগরিকদের পরিশ্রম ও সুখী জীবন দেখেন । এই সব দেখে চাও সুন থিন মাতৃভূমির অগ্রগতির জন্য মনের আনন্দ প্রকাশ করে ‘ প্রভাত ’ নামে একটি বাঁশিসুর লিখেন । ১৯৫৬ সালে চাও সুন থিন চেনচিয়ান প্রাদেশিক লোকনৃত্য সংগীত দলে ভর্তি হন । চীনের প্রথম জাতীয় সংগীত সপ্তাহে চাও সুং থিননিজের লেখা বাঁশির সুর ‘ প্রভাত ’ পরিবেশন করেন ।
১৯৬৪ সালে পঞ্চম ‘ সাংহাইয়ের বসন্ত ’ সংগীতানুষ্ঠানে চাও সুন থিন তার রচিত দুটি সুর ‘ উ চিয়ানের দৃশ্য ’ ও ‘ চা পাতা তোলা ’ পরিবেশন করেন এবং দশর্ক ও বিশেষজ্ঞদের পৃশংসা পান ।
পরে চাও সুন থিন বাঁশি তৈরীর গবেষনায় আত্মনিয়োগকরেন । তার ছোট ভাই ,বিখ্যাত পদার্থবিদ চাও সুন লিনের সাহায্যে তিনি দীর্ঘদিন বার্শি তৈরীর গবেষনার কাজ করেন এবং বাঁশি তৈরীর বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ।
বাঁশি বাজানো প্রশিক্ষনেও চাও সুন থিন নিরলস প্রচেষ্টা করেন । তার ছাত্রদের মধ্যে অনেকে দেশেবিদেশে সুনাম পেয়েছে । তা ছাড়া চাও সুন থিন বাঁশি সম্পর্কিত দুটি গবেষনার কাজ করেন । একটি গবেষণা হলো বাঁকা বাঁশি তৈরী । এই ধরনের বাঁশি সাধারণ বাঁশির চেয়ে লম্বা , কিন্তু বাজানোর সময় শিল্পী অসুবিধা মনে করেন না । আরেকটি গবেষণা হলো একটি বাঁশিতে দুই জায়গায় ফুঁ দিয়ে বাজানোর কৌশল আবিষ্কার।‘ ইয়েন তি ’ নামে এই ধরনের বাঁশি বাজানোর সময় বাদকের দুই হাত আকাশের পাখি উড়ার মতো সুন্দর । এই ধরনের বাঁশির কথা চীনের প্রাচীন পুথিপত্রে আর দেওয়ালচিত্র আছে , কিন্তু আজ পর্যন্ত এই ধরনের বাঁশি তৈরী করা হয় নি ।
বাঁশি চীনেরলোকসংগীতের সুর বাজানোর এক প্রধান বাদ্যযন্ত্র । বাঁশির আওয়াজ শুনতে সুরেলা । দক্ষিণ চীনের বাঁশিবাদকদের বাজানো সুর শুনতে মধুর ও হালকা , উত্তর চীনের বাঁশিবাদকদের বাজানো সুর উদাত্ত ও শক্তিশালী । লোকসংগীত অনুরাগীরা দক্ষিণ ও উত্তর চীনের বাঁশি বাদকদের বাজানো সুর তফাত করতে পারেন । চাও সুন থিন উত্তর ও দক্ষিণ দুই ধরনের সুরের সীমা ভঙ্গ করে দুই সুরের সমন্বয় করে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করেন । তিনি বাদ্যযন্ত্র সোনার শ্বাস নেয়ার পদ্ধতি বাঁশি বাজানোতে ব্যবহার করেবাঁশি বাজানোর কৌশল আরো সমৃদ্ধ করেন ।চাও সুন থিন বাঁশি পরিবেশন , সুর দেয়া , ছাত্র প্রশিক্ষণ , বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর বাঁশি তৈরী ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন , তিনি এই ক্ষেত্রের একজন বিশেষজ্ঞ বলা যায় ।
চান থিন সুন মনে করেন , সংগীত পরিবেশনের নৈপুন্যকে সুরের মূল বিষয়ের সেবা করতে হবে । বাঁশি বাজানোর নতুন নৈপুন্য সৃষ্টি করতে হবে । এ ক্ষেত্রে দেশের বা বিদেশের , উত্তর বা দক্ষিণের যে কৌশল ভালো এবং সুরের মূল বিষয় প্রকাশ করতে পারে , সেটাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে ।
যদিও চাও সুন থিন কোনো দিন সংগীত ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেন নি , কিন্তু তার সাহিত্য ও বিজ্ঞান ক্ষেত্রের জ্ঞান সমৃদ্ধ । তিনি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ছাত্রদের প্রশিক্ষন দেন , তার রচিত পাঠ্যবই সহজসরল , তার ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই নামকরা বাঁশিবাদক হয়েছেন ।
চাও সুন থিন চীনের লোকসংগীত ব্রতের উন্নতির জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । তিনি চীনের লোকসংগীত মঞ্চের একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব । ২০০১ সালে চাও সুন থিন হান চৌতে মৃত্যুবরণ করেন ।
[
চাও সুন থিনের বাজানোর বাঁশির সুর
]:
《বসন্তকালের অর্কিও ফুল 》
|