সেন চুং কোও


        সেন চুং কোও চীনের একজন নামকরা বেহারা বাদক । পৃথিবীর সংগীত মহলের বিশেষজ্ঞরা সেন চুং কোওকে শ্রেষ্ঠ সংগীতবিদ , সবচেয়ে মনোরম বেহারাবাদক ও চীনের মেনুহিন বলে মূল্যায়ন করেন ।  

  চীনের সিম্ফোনি অকাষ্ট্রার জাতীয় পর্যায়ের বেহারা বাদক হিসেবে সেন চুন কোও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে সবচেয়ে আগে চীনের জন্য মর্যাদা বিজয়ী বেহারাবাদকদের অন্যতম । 

  সেন চুন কোও চীনের একটি সংগীতবিদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা সেন সুয়ে চীনের নামকরা বেহারা প্রশিক্ষণ প্রফেসার , তার মা চু পিং একজন গায়িকা । তাদের ১১টি সন্তানের মধ্যে ১০জনই সংগীতবিদ , দশজনের মধ্যে নয়জনই বেহারাবাদক । সেন চুং কোও এই পরিবারের প্রথম ছেলে , তিনি ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন । সব চীনাদের মতো তার বাবা- মাও আশা করেন চীন শক্তিশালী হবে এবং বিদেশীদের অবহেলার শিকার হবে না । তাই তার বাবা মা তার জন্য নাম রাখেন সেন চুন কোও । 

  পাঁচ বছর বয়স থেকে সেন চুং কোও বাবার কাছ থেকে বেহারা শিখেন । দু বছর পর তিনি প্রথমবার মঞ্চে বেহারা পরিবেশন করেন । তার ৯ বছরের জন্মদিনে উ হান শহরের বেতার কেন্দ্র সেন চুং কোওর বেহারা বাজানোর সুর রেকর্ড করে বেতার অনুষ্ঠানে প্রচার করে । শ্রোতারা তার বাজানো বেহারার সুর শুনে তাকে প্রতিভাবান বেহারাবাদক বলে প্রশংসা করেন । ১৯৫৪ সালে সেন চুং কোও পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে নামকরা সংগীতবিদ মোজার্টের দু শ’তমো জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একটি সংগীতানুষ্ঠানে পরিচালক লি তে লুন ও কেন্দ্রীয় সংগীত দলের কনচ্যাটোর তালে তালে সেন চুন কোও সাফল্যের সঙ্গে মোজার্টের ‘ এ-সুরের বেহারা কনচ্যাটো পরিবেশন করেন । একই বছর তিনি চীনের সংগীত সপ্তাহে চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত ইন্সটিটিউটের অক্যাস্ট্রা বাদ্য দলের সঙ্গে সহযোগিতা করে সংগীতবিদ মা সি ছুনের ‘এফ- সুরের বেহারা কনচ্যাটো পরিবেশন করেন । তার পরিবেশন সংগীত মহলের বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়েছে । 

  ১৯৬০ সালে সেন চুং কোও মস্কোর চাইকোভস্কী সংগীত বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যান ,তার শিক্ষক ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বেহারাবাদক লেওনিদ কোগান । এই বিদ্যালয় অধ্যয়নকালে সেন চুন কোও সংগীত মহলের অলিম্পিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা—চাইকোভস্কী আন্তর্জাতিক বেহারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরষ্কার পান , এই পুরষ্কার আন্তর্জাতিক সংগীত প্রতিযোগিতায় চীনের সংগীতবিদের পাওয়া প্রথম পুরষ্কার । ১৯৬৩ সালে সেন চুন কোও সাংহাইয়ের সিম্ফোনি দলের সঙ্গে সহযোগিতা করে চীনের প্রথম কনচ্যাটো সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । 

  ১৯৬৪ সালে সেন চুং কোও দেশে ফিরে আসেন । যদিও চীনে দশ বছর স্থায়ী তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবী চলাকালে সেন চুং কোও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন না , তবু সংগীত ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভের প্রচেষ্টা তিনি কখনও বন্ধ করেন নি । ১৯৭৬ সালে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব শেষ হওয়ার পর সেন চুন কোও হারানো মূল্যবান দশ বছর সময় ফিরিয়ে আনার জন্য দ্বিগুন প্রচেষ্টা চালান । তিনি প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় শতাধিক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন । তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বেহারা বাদকে পরিণত হয়েছেন । 

  আশির দশক থেকে সেন চুং কোও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন । ১৯৮০ সালে তিনি অষ্ট্রেলিয়ার ছয়টি শহরে বারোটি সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন , এই বারোটি সংগীতানুষ্ঠান গোটা অষ্ট্রেলিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো । এই ঘটনা চীন ও অষ্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ইতিহাসের একটি মাইনফলক হয়ে দাড়িয়েছে । 

  ১৯৮৭ সাল থেকে সেন চুং কোও প্রতি বছর জাপানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন । তিনি অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া অর্থের এক অংশ বিভিন্ন দেশের বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের চিকিত্সা তহবিল হিবেসে অনুদান করেন । জাপানী সরকার সেন চুং কোওকে সাংস্কৃতিক দূতের আখ্যা দিয়েছে । চীন ও জাপানের সাংস্কৃতিক আদান –প্রদানে তার বিরাট অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে সেন চুং কোও জাপান সরকারের বিতরণ করা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পুরষ্কার পান । 

  সেন চুং কোও পৃথিবীর অনেক দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্ব সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে বিরাট অবদান রেখেছে । তা ছাড়া তিনি প্রায়ই চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের সংগীত ব্রতের প্রসার সম্পর্কিত ভাষন দেন ।

  বতর্মানে সেন চুং কোও চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতিয় কমিটির সদস্য , গণতান্ত্রিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য , চীনের সংগীবিদ সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য , চীনের সিম্ফোনি উন্নয়ন তহবিল সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আর চীনের অভিনয় শিল্প কমিটির সদস্য । 

  [ সেন চুং কোওর বাজানো বেহারার সুর ]《 যাযাবরদের গান 》