চৌ সিয়াও ইয়েন ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি একজন কালারাটুরা স্যাপ্রানো কন্ঠশিল্পী । তিনি চীনের বিখ্যাত সংগীত শিক্ষক ও সাংহাই সংগীত ইন্সটিটিউটের আজীবন প্রফেসার ।
১৯১৮ সালৈ চৌ সিয়াও ইয়েনচীনের হু পেই প্রদেশের রাজধানী উ হান শহরের একটি শিল্পপতির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা চৌ কো ছান একজন অগ্রণী চিন্তাধারাসম্পন্ন শিল্পপতি । তিনি সংগীত পছন্দ করেন । বাবার প্রভাবে ছোট বেলা থেকেইচৌ সিয়াও ইয়েন সংগীত পছন্দ করেন ।
১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসেচৌ সিয়াও ইয়েন পরীক্ষার মাধ্যমে সাংহাইয়ের কোলি সংগীত বিদ্যালয়ে ভর্তি হন । ১৯৩৭ সালে জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধ বাঁধে , চৌ সিয়াও ইয়েন বাধ্য হয়ে সংগীত বিদ্যালয়ের পড়াশুনা বন্ধ করে নিজের জন্মস্থানে ফিরে যান ।
১৯৩৮ সালের শেষ দিকে চৌ সিয়াও ইয়েন প্যারিসে যান । তিনি প্যারিসে বিখ্যাত সুরকার ছিরপিনের সঙ্গে পরিচিত হন । ছিরপিনের সাহায্যে চৌ সিয়াও ইয়েন প্যারিসের রাশিয়া সংগীত ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে গানশিখেন । সাত বছরের কঠোর অধ্যয়ন করে ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে চৌ সিয়াও ইয়েন প্যারিসের জাতীয় থিয়েটারের মঞ্চে আরোহন করেন । তার গান ফ্রান্সের খুঁতখুঁতে দশর্কদের মন জয় করেছে । তিনি আমন্ত্রনে চেকস্লোভাকিয়ায় গিয়ে প্রাগ সংগীত উত্সবে অংশ নেন , এই সংগীত উত্সবে চৌ সিয়াওইয়েনের গান বিপুল সমাদৃত হয় , দশর্করা চৌ সিয়াও ইয়েনকে চীনের বুলবুল আখ্যা দেন ।
১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে চৌ সিয়াও ইয়েন নিজের মাতৃভূতির জন্য পরিসেবার মন পোষণ করেচীনে ফিরে আসেন । তখন চীন কোমিনটাং সরকারের শাসনাধীনে ছিল , জনগণ দুঃখদুদর্শায় জর্জরিত । দেশের এই অবস্থা দেখে চৌ সিয়াও ইয়েন দুঃখ মনে করেন । তিনি অগ্রনী ছাত্রদের কর্মসূচীতে অংশ নেন এবংগান পরিবেশন করেন ।
১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চৌ সিয়াও ইয়েনের নতুন জীবন শুরু হয় । তিনি সংগীত শিক্ষক হিসেবে সাংহাই সংগীত ইন্সটিটিউটে যোগ দেন।
চীনের দশ বছর স্থায়ী তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব হলো চৌ সিয়াও ইয়েনের জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সময়পর্ব । এই দশ বছরে তিনি গান গাইতে পারেন না , ইন্সটিটিউটের স্বাভাবিক শিক্ষা বন্ধ ছিল । কিন্তু সংগীতের প্রতি ভালোবাসার দরুণ এই দশ বছরেও তিনি প্রশিক্ষণের কাজ পুরোপুরি বন্ধ করেন নি । বিখ্যাত টেন্যার ওয়েই সোন তার এই সময়পর্বের ছাত্র । বতর্মানে দেশবিদেশের সংগীত বিশেজ্ঞদের চোখেওয়েই সুন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গায়ক ।
তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব শেষ হওয়ার পর চৌ সিয়াও ইয়েন ছাত্র প্রশিক্ষণের কাজ আবার শুরু করেন । ১৯৮৪ সালে ভিয়েনার আন্তর্জাতিক সংগীত প্রতিযোগিতায় চৌ সিয়াও ইয়েনের চারজন ছাত্র তিনটা স্বর্ণ পুরষ্কার ও একটি রৌপ্য পুরষ্কার পেয়েছে , এই সাফল্য আন্তর্জাতিক সংগীত মহলের এক বিস্ময়কর ব্যাপার বলা যায় ।
চীনের অপেরা ব্রতের প্রসার আর আন্তর্জাতিক সংগীত মহলের সঙ্গে চীনের আদান-প্রদান ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য ১৯৮৮ সালের মে মাসে চৌ সিয়াও ইয়েন সাংহাই সংগীত ইন্সটিটিউটে চৌ সিয়াও ইয়েন অপেরা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৮৯ সালে এই কেন্দ্র সাফল্যের সঙ্গে অপেরা ‘ রিগোলেটো ’ পরিবেশন করে ।
গত অধর্শতাব্দীতে প্রফেসার চৌ সিয়াও ইয়েনের ছাত্রছাত্রীরা বহুবার চীনের ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের মেট্রপোলিটান অপেরা ও সানফ্রানসিস্কো অপেরার মঞ্চে উঠে অপেরা পরিবেশন করেছেন । চৌ সিয়াও ইয়েনের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকে এখন চীনের বিভিন্ন সংগীত ইন্সটিটিউটের শিক্ষক হয়েছেন , তার কিছু ছাত্র আন্তর্জাতিক অপেরা মঞ্চে তত্পর রয়েছেন । তার ছাত্র লিয়াও ছান ইয়োন , চান চিয়েন ই ও কাও মান হুয়া প্রমুখ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একাধিকবার পুরষ্কার জয় করেছেন ।
[
চৌ সিয়াও ইয়ের গাওয়া গান
]:《মহাপ্রাচীরের গান 》
|