লিউ থিয়েনহুয়া ( ১৮৯৫-১৯৩২ ) : চীনের বিখ্যাত সুরকার , সঙ্গীতবিদ শিক্ষাবিদ , তিনি চীনের জাতিসত্তা সঙ্গীতের মহা ওস্তাদ ।
১৮৯৫ সালে লিউ থিয়েনহুয়া চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চিয়াংইন জেলার এক সাধারণ বুদ্ধিজীবী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । লিউ থিয়েনহুয়া তিন ভাই চীনের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বিখ্যাত “ সেরা লিউ পরিবারের তিন ভাই ” নামে পরিচিত । বড় ভাবি লিউ বাননোং আগে নয়া সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন , পরে তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক, কবি , চীনা ভাষাবিদ হয়েছেন । এ ধরণের পরিবারের প্রভাবে মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার সময় লিউ থিয়েনহুয়া অবসর সময় পশ্চিমা পিতলের বাদ্যযন্ত্র শিখতে শুরু করেন । ১৯১২ সালে তিনি সাংহাইতে পেশাদার সঙ্গীত দলে ভর্তি হয়ে ধারাবাহিকভাবে সঙ্গীত-তত্ত্ব ,পিয়ানো ,বেহালা ও পিতলের বাদ্যযন্ত্র শিখতে শুরু করেন । ১৯১৪ সালে তিনি জন্মস্থানে ফিরে মাধ্যমিক স্কুলে সঙ্গীত শেখান ।
১৯১৫ সালে লিউ থিয়েনহুয়ার বাবা মৃত্যুবরণ করেন ।অত্যন্ত দুঃখ-দুদর্শায় নিমজ্জিত লিউ থিয়েনহুয়া তার প্রথম রচনা আরহুর একক সুর“রোগে গাওয়ার গান”তৈরীর কাজ সম্পন্ন করেন । তিনি প্রথমবারের মতো সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাজের উপর তার সমালোচনা ও অসন্তোষের মনোভাব ব্যক্ত করেন । এ থেকে তিনি সঙ্গীত রচনার পথে পা বাড়িয়েছেন ।
চীনের ঐতিহ্যিক সঙ্গীত শিখার জন্যেলিউ থিয়েনহুয়া ব্যাপকভাবে লোকশিল্পীদের সঙ্গে দেখা করেন,তখনকার বিখ্যাত লোকশিল্পীদেরকাছে আরহু ,পিপা আর কুছিন বাজানো শেখেন । তিনিজাতীয় সঙ্গীত সংস্কার করার দৃঢসংকল্প নিয়ে জনসসাধারণের পছন্দনীয় আরহুকে সংস্কার ও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন । আরহুর উপকরণ ,তৈরী আর বাজানোর পদ্ধতি তিনি সংস্কার আর উদ্ভাবন করেন । তিনি আরহুর মান ও ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে বহু সুর তৈরী করেন । যার ফলে আরহু মঞ্চে এককভাবে বাজাতে সম্ভব হয় এবং উচ্চ সঙ্গীত ইনস্টিটিউটের কোর্স হিসেবে গ্রহণ করা হয় ।
১৯২২ -১৯৩২ সাল, এই দশ বছরে লিউ থিয়েনহুয়া পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরহু , পিপা আর বেহালার প্রফেসর ছিলেন ।তার বেশির ভাগ সঙ্গীত এ সময়কালে রচিত হয় । মনের দুঃখ ছাড়া সঙ্গীতগুলোতে তিনি প্রকৃতির প্রতি নিজের ভালবাসা ,জন্মস্থানের রীতিনীতি ও পরিচিত লোকের কথা মনে পড়ার বিষয়ও ব্যক্ত করা হয় । সুর রচনায় জাতীয় ঐতিহ্যিক পদ্ধতি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পশ্চিমা পদ্ধতিও ব্যবহার করেন । এভাবে তার রচনায় কিছু নতুনগুণ দেখানো হয় । তিনি বাস্তব তত্পরতা দিয়ে চীনা জাতীয় সঙ্গীত বিকাশের জন্যে নতুন পথ খুঁজে বের করেন । তাই তার সঙ্গীতও নিজের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ।
লিউ থিয়েনহুয়া১৭ বছর বয়স থেকে সঙ্গীত শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেন । পরপর তিনি প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষাদান করেছেন । দীর্ঘকালের শিক্ষাদানে তিনি প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন । তিনি তার পূবসূরীদের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার সারসংকলণ করে এবংপশ্চিমা বাদ্যযন্ত্রের শিক্ষাদানের পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে শিক্ষাদান করেন । তিনি জাতীয় সঙ্গীত শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে ভিত্তি স্থাপন করেন ।
যখন লিউ থিয়েনহুয়ার কারুশিল্পের রচনা ও গবেষণা এক শীর্ষপযায়ে উন্নীত হয় তখন অর্থাত ১৯৩২ সালের মে মাসে লিউ থিয়েনহুয়া রোগে আক্রান্ত হন এবং ৮ জুন মারা যান । মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৮ বছর ।
লিউ থিয়েনহুয়ার প্রধান প্রধান রচনার মধ্যে আছে :“রোগে গাওয়ার গান”,“দুঃখ-দুর্দশার গান”,“হতাশার গান”,“আলোকে অগ্রযাত্রা”,“শুভ রাত”,“শূন্য পাহাড়ে পাখি ডাকে ”প্রভৃতি ১০টি আরহু সুর এবং “ নৃত্য-সঙ্গীতের পটভূমি ” প্রভৃতি তিনটি পিপা সুর ।
[
সঙ্গীত উপভোগ
]:
《শুভ রাত 》
|