নিয়ে আর

  নিয়ে আর (১৯১২-১৯৩৫ ),চীনের বিখ্যাত সুরকার ।

  ১৯১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীচীনের ইউয়ুন্নান প্রদেশের খুনমিং শহরে নিয়ে আরের জন্ম। ১৯১৮ সালে তিনি খুনমিং শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হন । ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তার লেখাপড়া অত্যন্ত ভাল । তিনি সঙ্গীত পছন্দ করেন । ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লোকশিল্পীর কাছে বাঁশী, হুছিন , তিন তারা , ইয়োছিন প্রভৃতি জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেন । ১৯২৫ সালে তিনি পরীক্ষা পাশ করেইউয়ুন্নান প্রদেশের প্রথম লিয়েনহো মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন । এসময় নিয়ে আর প্রগতিশীল পত্রপত্রিকা ও “আন্তর্জাতিক গান ” প্রভৃতি বৈপ্লবিক গানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন । ১৯২৭ সালে তিনি পরীক্ষা পাশ করে ইউয়ুন্নান প্রথম শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং বন্ধুদের সঙ্গে “চিউ চিউ সঙ্গীত সমিতি” গঠন করেন, তিনি ইনস্টিটিউটের বা বাইরের সঙ্গীত ও অপেরা পরিবেশন তত্পরতায় অংশ নেন এবং বেহালা ও পিয়ানো শিখতে শুরু করেন । 

  ১৯৩০ সালের নভেম্বর মাসে নিয়ে আর সাংহাইতে “ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিত্র জোট ”—এ শরিক হন ।১৯৩১ সালের মার্চ মাসে , তিনি মিং ইয়ো নৃত্য-নাটক দলে বেহালা বাজান । এসময় তিনি নিজেই পিয়ানো , সুরলালিত্য,সুর রচনাপ্রভৃতি শিখেছেন । ১৯৩২ সালের এপ্রিল মাসে বামপন্থী নাট্যকার ও কবি থিয়েনহানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় । তিনি বামপন্থী শিল্পী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন । থিয়েন হানের সঙ্গে মৈত্রী ও সহযোগিতা নিয়ে আরের শিল্পকলারসাফল্যের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে । ১৯৩২ সালের আগষ্ট মাসে তিনি পেইপিং গিয়ে সক্রিয়ভাবে পেইপিং বামপন্থী নাট্যকার ইউনিয়ন ও বামপন্থী সঙ্গীতশিল্পী ইউনিয়নের গঠনকাজ ও পরিবেশনা তত্পরতায় অংশ নেন এবং বিদেশী শিক্ষক তোনোভের কাছে বেহালা শিখতে থাকেন । নভেম্বর মাসে তিনি আবার সাংহাই ফিরে যান । 

  সাংহাই প্রত্যাবর্তনের কিছু দিন পর নিয়ে আর লিয়েন হুয়া চলচ্চিত্র কোম্পানিতে প্রবেশ করেন । তিনি উষ্ণ আন্তরিকতা ও প্রাণবন্ত মনোবল নিয়ে বামপন্থী-সঙ্গীত,অপেরা ,চলচ্চিত্র প্রভৃতি বহু ক্ষেত্রের কাজে যোগদান করেন,তিনি সক্রিয়ভাবে রচনা ও সমালোচনার তত্পরতায় অংশ নেন । একই সময় তিনি “সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র সংঘ”-এর সঙ্গীত দলে অংশ নেন,“চীনের নবজাত সঙ্গীত গবেষণা সমিতি ” প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন,তার পর তিনি চীনের বামপন্থী নাট্যকার ইউনিয়ন সঙ্গীত দলে যোগ দেন । 

   ১৯৩৩ সালে রচনার ব্যাপারে নিয়ে আর তার প্রতিভা দেখাতে শুরু করেন । তিনি“খনিজপদার্থ উন্নয়নের গান”,“পত্রিকা বিক্রয়ের গান ”রচনা করেন ।১৯৩৪ সালের এপ্রিল মাসে নিয়ে আর পাইতেই ফোনোগ্রাফ রেকর্ড কোম্পানিতে ভর্তি হয়ে রেনকুয়াংয়ের সঙ্গে মিলে সঙ্গীত বিভাগ চালান এবংকিছু প্রগতিশীল গানের ফোনোগ্রাফ রেকর্ড তৈরীর কাজ করেন । সে বছর তার “সঙ্গীত বছর ”,“পথের গান”,“পথের অগ্রনী ”,“স্নাতকের গান”,“নতুন নারী ”,“নৌবন্দর শ্রমিকের গান ”,“অগ্রসর হওয়ার গান ”,“ছাংচিয়াংয়ের দিকে আক্রমণ ”ইত্যাদি গান এবং “সোনালী সাপের নাচ ”,“সবুজ হ্রদে বসন্ত আগমন ”প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহীবাদ্যযন্ত্রের সুরসবই এ বছরে সম্পন্ন করেন তিনি ।১৯৩৫ সালে তিনি “মেই নিয়াং নামে মেয়ের গান ”,“সান্ত্বনা ও শুভেচ্ছার গান”,“উত্তরমহাপ্রাচীরের গ্রামীন মেয়ে ”,“আত্মরক্ষার গান”,“পদদলিত গানগাওয়ার মেয়ে ”এবং নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতীয় সঙ্গীত হিসেবেগৃহীত“বীরত্বপূর্ণ বাহিনীর অগ্রযাত্রার গান ”রচনা করেছেন । 

  ১৯৩৫ সালের ১৮ এপ্রিল নিয়ে আর টোকিও পৌঁছেন । জাপানে নিয়ে আর জাপানের সঙ্গীত , অপেরা , চলচ্চিত্র প্রভৃতি ক্ষেত্র পরিদর্শন করেন , জাপানের সাহিত্যিক ও চারুশিল্পী মহলের কাছে চীনের সঙ্গীতের নতুন বিকাশ অবহিত করেন এবং বিদেশী ভাষা ও সঙ্গীত শেখা জোরদার করেন । নিয়ে আর ১৭ জুলাই জাপানে সাঁতার কাটার সময় অসাবধানে জলে ডুবে মারা যান । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২৩ বছর । 

  নিয়ে আর মাত্র দুবছরে গান রচনা করেছেন । কিন্তু তিনি ৮টি চলচ্চিত্র, তিনটি নাটক,একটি অপেরার জন্যে ২০টি থিম-গান বা ইন্টারলূড লিখেছেন । অন্যান্য ১৫টি গান এবং লোকসঙ্গীত অনুযায়ী সংশোধিত চারটি জাতীয় বাদ্যযন্ত্রের সুর আর ২টি হার্মনিকার সুর সহ তিনি মোট ৪১টি সঙ্গীত বা গান লিখেছেন । 

  [ সঙ্গীত উপভোগ ]《জাতীয় সঙ্গীত》