থিয়েন হান চীনের নাট্ক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, অপেরা সংস্কারের অগ্রদুত,সবাই তাকে আধুনিককালের কুয়াংহানছিং বলে ডাকেন । নাটক লেখা ছাড়া তিনি অপেরা,চলচ্চিত্র,কবিতা ও চলচ্চিত্রের গানও লিখতেন । সবার মনে তিনি বিখ্যাত নাট্যকার ও কবি ।
থিয়েন হান হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরের লোক । ১৮৯৮ সালের ১২ই মার্চ এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম হয় ।“৪ঠা মে”আন্দোলন থেকে তিনিসাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন ।২০-এর দশকে তার উদ্যোগে সংগঠিত “নানকো শ্য” দল চীনের আধুনিক শিল্পকলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ।সেসময় থিয়েন হানের লেখা《কফি দোকানের এক রাত》,《বাঘ শিকারের রাত 》,《বিখ্যাত শিল্পীর মৃত্যু》প্রভৃতি ১০-১২টি নাটক এক একটা ফুলের মতো চীনের নাট্য মঞ্চে ফুটে ওঠে । ১৯৩২ সালে থিয়েন হান চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য হওয়ার পর তার রচনার দ্বিতীয় উত্তাল-জোয়ার সৃষ্টি করেছেন এবং বামপন্থী অপেরা ও চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধানশক্তিতে পরিণত হয়েছেন । অনেক নাটক লেখার পর তিনি <তিনজন আধুনিক নারী > , <মাতৃবত আলো> , < সংগ্রামের অগ্রগামী সন্তানরা > প্রভৃতি চলচ্চিত্রও লিখেছেন । সাংহাই ঘাট শ্রমিকদের সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে অপেরা < ইয়াংসি নদীর ঝটিকা> চীনের সবচেয়ে আগেকার অন্যতম বিপ্লবী অপেরা । থিয়েন হান অনেক নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্যে গান লিখেছেন ।গানগুলোর কথা আবেগপূর্ণ ও ব্যাপক সমাজ-প্রভাবশালী । যেমন “বীরত্বপূর্ণ বাহিনীর অগ্রযাত্রার গান”ও “স্নাতক গান”প্রভৃতি । এর মধ্যে নিয়ে আর-এর সুরারোপিত “বীরত্বপূর্ণবাহিনীর অগ্রযাত্রার গান ” কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করেছে ।‘জাগো ,যারা দাস হতে চাও না লোকেরা !’ গানের আওয়াজ ইয়াংসি নদীর দক্ষিন ও উত্তরে ছড়িয়ে পড়ে । জাপ বিরোধী যুদ্ধকাল থেকে মুক্তি যুদ্ধকাল পযন্ত গানটি চীনা সন্তানদেরমাতৃভূমির জন্যে সংগ্রাম চালাতে অনুপ্রানিত করেছে । নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গানটিকে চীনের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ধায করা হয় ।
নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নেতৃস্থানীয় ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে থিয়েন হান তার রচনা বন্ধ করেননি । তিনি〈কুয়াং হানছিং 〉নামক নাটক রচনা করেছেন । তৌ-এ নামে এক সাধারণ নারী যে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত হয়েছেন তাতে কুয়াং হানছিং সাহসের সঙ্গে যে বিরক্তি প্রকাশ করতে পেরেছেন ,থিয়েনহান তাঁর এই নাটকের মাধ্যমে তার প্রশংসা করেছেন ।তিনি 《সিয়ে ইয়াও হুয়ান 》নামকনাটক লিখেছেন ,নায়িকা সিয়ে ইয়াও হুয়ান যে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আটক হয়েছেন ,নাটকটিতে এই কাহিনী বর্ননা করা হয়েছে । তিনি কখনো ভাবতে পারেননি যে,নাটকটি লেখার কারণেই তিনি“চার কুচক্রি”র অত্যাচারে প্রাণ হারাবেন ।১৯৬৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
থিয়েন হান তার গোটা জীবণে বিপুলরচনা করেছেন ।পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনি ষাট্টেরও বেশী নাটক,বিশাধিক অপেরা নাটক,দশাধিক চলচ্চিত্র-নাটক,৯০০কবিতা,অসংখ্য শ্রেষ্ঠ গান,গদ্য,উপন্যাস লিখেছেন এবং অনেক বই অনুবাদ করেছেন ।মৃত্যুর পর তার ১৬ খন্ড বিশিষ্ট“থিয়েন হান সংস্করণ”প্রকাশিত হয় । চীনের অপেরা ও নাটক আর কবিতায় থিয়েন হানের অবদান ও ভূমিকাকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না । তার নাম চিরকালই চীনের আধুনিক অপেরা , নাটক ও কবিতার ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে ।
[
সঙ্গীত উপভোগ
]:
《বীরত্বপূর্ণ বাহিনীর অগ্রযাত্রার গান》
|