ইয়াং ছিনের অন্য নাম হচ্ছে “ বিদেশী ছিন “ । তা হচ্ছে চীনের এক রকম তারা মারা বাদ্যযন্ত্র । তার সুর পরিষ্কার আর উদাত্তএবং প্রকাশ-শক্তি অত্যন্ত সমৃদ্ধ । তা দিয়ে এককভাবে এবং সমবেতভাবে বাজানো যায় এবং ছিন সু , কথাশিল্প আর অপেরার জন্যে সহযোগী বাজানোর ভূমিকা পালন করতে পারে । লোক বাদ্যযন্ত্রগুলোর সমবেত সংগীতে আর জাতীয় বাদ্যযন্ত্র দলে তার গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে ।
ঐতিহাসিক পুস্তকে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে , মধ্য শতাব্দির আগে মধ্যপ্রাচ্যের ইয়াসু আর পারস্য প্রভৃতি প্রচী আরব দেশগুলোতে এক রকম তারা মারা বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ছিল । এর নাম ছিল সাথেলি ছিন । চীনের মিং রাজবংশ ( ১৩৬৮-১৬৪৪) আমলে পশ্চিম এশিয়া আর পূর্ব এশিয়ার সংগে চীনের অধিক থেকে অধিকতর ঘনিষ্ঠ শুভেচ্ছামুলক আদান-প্রদানের সংগে সংগে সাথেলি ছিন পারস্য থেকে নৌপথে চীনে প্রবেশ করে । গোড়ার দিকে কেবল কুয়াং তুং প্রদেশে এর প্রচলন ছিল । পরে ধাপে ধাপে চীনের বিভিন্ন স্থানে এর প্রচলন হয় । পরবর্তীকালে চীনের লোক শিল্পীদের সংস্কারের মাধ্যমে সাথেলি ছিন ক্রমে চীনের জাতীয় বাদ্যযন্ত্র- ইয়াং ছিনে রূপান্তরিত হয় ।
ইয়াং ছিন প্রধানত কাঠ দিয়ে তৈরি হয় । তার অনুনাদী বাক্স প্রজাপতির আকার হয় । তাই কেউ কেউ তাকে “প্রজাপতি ছিন “ বলে ডাকেন । বাজানোর সময়ে শিল্পীরা বাম ও ডান হাত দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে বাঁশ দিয়ে তৈরি ছোট হাতল ধরে তারাগুলো মেরে সুর বাজান ।
ইয়াং ছিন বাজানোর কলাকৌশল নানা ধরণের । এর সুর অত্যন্ত বিচিত্রময়। নিম্নকন্ঠের এলাকার সুর নীচু আর গভীর। মধ্যমকন্ঠের এলাকার সুর পরিষ্কার আর স্বচ্ছ । উচ্চকন্ঠের এলাকার সুর পরিষ্কার আর উদাত্ত । ইয়াং ছিন দ্রুত সংগীত বাজানোর উপযোগী । তা দিয়ে হালকা, প্রাণবন্ত , আনন্দদায়ক আর ভাবানুভূতি প্রকাশ করা যায় ।
ইয়াং ছিন ৪ শো বছর ধরে চীনে প্রচলিত হয়ে আসছে । এই সময়ের মধ্যে চীনের বাদ্যযন্ত্রের নির্মাতারা বহু ধরণের নতুন ইয়াং ছিন তৈরি করেছেন । যেমন সুর পরিবর্তনশীল ইয়াং ছিন, চেং ইয়াং ছিন , বৈত্যুতিন ইয়াং ছিন ইত্যাদি । এগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিন ইয়াং ছিনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ধরণের ইয়াং ছিন গা , পিক আপ , অ্যামপ্লিফিয়ার এবং অনুনাদী বাক্স নিয়ে গঠিত । ইয়াং ছিনের তারাগুলোর স্পন্দনের সময়ে আওয়াজ পিক আপের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের সংকেতে পরিণত হয় , তারপর অ্যামপ্লিফিয়ারের মাধ্যমে মার্জিত করার পর লাউডস্পিকার থেকে বের হয় । বৈদ্যুতিন ইয়াং ছিন দিয়ে একক বাজানো আর সহযোগী বাজানোর ভূমিকা নিতে পারে । অতএব তার আবির্ভাব ঘটার পর তা বরাবরই ইয়াং ছিন শিল্পীদের মধ্যে সমাদর পায় ।
চীনে বহু বছর ধরে প্রচলন আর বিকাশের মাধ্যমে ইয়াং ছিন বাদ্যযন্ত্র নির্মাণ , বাজানো আর সুর রচনার হ্মেত্রে চীনের এঐতিহ্যিক বৈশিষ্ট্য আর জাতীয় রীতিনীতি গড়ে তুলেছে এবং জনগণের মধ্যে একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হয়েছে ।
[
সুরের উপভোগ
]: 《ছিং চিয়াংয়ে বসন্তের আগমন
》
|