সিয়াও

       সিয়াওয়ের অন্য নাম তুং সিয়াও । তা হচ্ছে চীনের প্রাচীন ফুঁস দিয়ে বাজানো বাদ্যযন্ত্র । সেই কয়েক হাজার বছর আগে চীনের জনসাধারণের মধ্যে সিয়াওয়ের প্রচলন হয় । তার উত্স বলতে গেলে সারিবদ্ধ সিয়াওয়ের উল্লেখ করতে হবে । কয়েক হাজার বছর আগে সারিবদ্ধ সিয়াংয়ের উদ্ভবের সময়েও তার নাম ছিল সিয়াও । পরে সারিবদ্ধ সিয়াও বাজানোর সময়ে লোকেরা আবিষ্কার করলেন , একটি নলে কম বেশি ব্যবধানের গর্ত কাটলে উচ্চ নীচু নানা সুর বাজানো যায় । তাই বহুনলযুক্ত সারিবদ্ধ সিয়াও ধাপে ধাপে একক নলযুক্ত তুং সিয়াওয়ে পরিণত হয় ।  

  আজকের সিয়াও চীনের হান রাজবংশের আমলে আজকের সিয়াওয়ের প্রচলন হয় । তখন লোকেরা তাকে “ছিয়াং তি” তলে ডাকতেন । ছিয়াং তি ছিল চীনের সি ছুয়ান আর কান সু প্রদেশে বসবাসকারী ছিয়াং জাতির জনগণের একটি বাদ্যযন্ত্র । খৃষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দিতে চীনের হোয়াং হো নদীর অববাহিকায় এর প্রচলন হয় এবং বিকাশের মাধ্যমে ক্রমে ৬টি গর্ত হয় , ঠিক আজকের সিয়াওয়ের মতই ।  

  সিয়াওয়ের গঠন খুবই সহজ । তার আকার একেবারে তিচির মত । সাধারণত তা বেগুনী বাঁশ , হলুদ বাঁশ বা সাদা বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় । তার নল তিচির চেয়ে একটু লম্বা হয় । মাথা বাঁশের সন্ধি দিয়ে মুখবন্ধ করা হয় । মুখের প্রান্তে একটি গর্ত কাটা হয় । নলের সামনের পিঠে কাটা হয় ৫টি গর্ত পেছনের পিঠে আরেকটি গর্ত কাটা হয় । তাছাড়া নলের নিম্ন অংশে আর রয়েছে ৩ থেকে ৪টি সুর বেরুনোর গর্ত আর সুর সহায়তাকারী গর্ত । এগুলো দিয়ে সুরের নির্ভূলতা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সুরকে আর সুন্দর করা যায় আর সুরের মাত্রা বাড়নো যায় ।  

  সিয়াওয়ের সুর নমনীয় আর নম্র । এর নিম্নকন্ঠের সুর অত্যন্ত গভীর এবং হালকাভাবে বাজানোর সময়ে এর বৈশিষ্ট্য লহ্ম্য করার মত । তার মধ্যমকন্ঠের এলাকার সুর মসৃণ আর মনোরম । সিয়াও বাজানোর কলাকৌশল মোটামুটি তিচির মত । তবে তার নমনীয়তা তিচির চেয়ে কম। তা দিয়ে দ্রুত আর জাকজমক বিষয়বসন্তু প্রকাশ করার উপযোগী নয় । কেবল লম্বাআর সূহ্ম এবং ধীরস্থির আর আবেগপূর্ণ সুর বাজানোর উপযোগী । অধিকাংশ হ্মেত্রে সিয়াও দিয়ে প্রকৃতির নিসর্গ আর মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করা হয় । সিয়াওয়ের প্রকাশ-শক্তি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তা দিয়ে একক বাজানো , দৈত্য বাজানো আর সমবেত বাজানো যেতে পারে । তাছাড়া ইয়াং সি নদীর দহ্মিণাংঞলের সিচু , ফু চিয়ানের নান ইন আর কুয়াং তুং সংগীত প্রভৃতি লোক সংগীতেও সিয়াওয়ের ব্যবহার করা হয় । কিছু সংখ্যক স্থানীয় অপেরায়োসিয়াও সহযোগী বাজানোর ভূমিকা পালন করে থাকে ।  

  সিয়াওয়ের প্রকার সংখ্যা খুব বেশি । চিচু তুং সিয়াও , ইয়ু ফিং সিয়াও আর চিও চিয়ে সিয়াও সবচেয়ে প্রচলিত আছে ।  

  চিচু তুং সিয়াও দিয়ে বাজানো “ ফিংসা লোওইয়ান” নামক সুর সাবলীল আর মনোরম । এতে বন্য হংসীর দল মাটিতে নামার আগে আকাশে ঘুরপাক খাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করা হয় ।

    [ সুরের উপভোগ ]《ফিংসা লোও ইয়ান 》